Advertisement
E-Paper

নেই রাজ্য সভাপতি, ফাঁকা তিন জেলার শীর্ষ পদও, বিভ্রান্তি বাড়ছে টিএমসিপি-তে

নদিয়া জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সবচেয়ে বিপাকে বলে খবর। কিছু দিন আগেই নদিয়া জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ১৯:৩৯
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা। ফাইল চিত্র।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা। ফাইল চিত্র।

হাতে সপ্তাহ তিনেক সময়।জোর কদমে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের জন্য। ১১ অগস্ট মেয়ো রোডে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভা। ২৮ অগস্ট সেখানেই টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবস পালন। ভিড়ে টক্কর দিতে হবে বিজেপি’কে— আবার বার্তা দেওয়া হয়েছে দলের তরফ থেকে। কিন্তু সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে ডামাডোল বেজায়। সে সব সামলে প্রতিষ্ঠা দিবসে রেকর্ড জমায়েতের প্রস্তুতি নিতে নাজেহাল দশা শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের। সবচয়ে দিশাহীন অবস্থা নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে।

কলেজে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের কাছ তোলা আদায়ের অভিযোগ ওঠায় বিতর্কে জড়িয়েছিল রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন। তার প্রেক্ষিতে টিএমসিপি সভানেত্রী পদ থেকে জয়া দত্তকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে দিন জয়া অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী, তার ১০ দিনের মধ্যে নতুন সভাপতির নাম ঘোষিত হবে বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি। মাঝে এক বার শোনা গিয়েছিল, জয়া দত্তকেই পুনর্বহাল করা হতে পারে। কিন্তু তা-ও হয়নি। ফলে এখনও পর্যন্ত টিএমসিপি-র সভাপতি পদে কেউ নেই। তার মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ২৮ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের প্রস্তুতি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীর তত্ত্বাবধানে সভার প্রস্তুতি চলবে বলে শনিবার তৃণমূল ভবনে আয়োজিত একটি বৈঠকে স্থির হয়েছে। কিন্তু জেলায় জেলায় ছাত্রনেতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়ে গিয়েছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।

নদিয়া জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সবচেয়ে বিপাকে বলে খবর। কিছু দিন আগেই নদিয়া জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই তিনি জেলা টিএমসিপির সভাপতি পদ থেকে অয়ন দত্তকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু কাকে সভাপতি করা হবে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সে বৈঠকে বলেননি। সেই থেকে নদিয়া জেলা টিএমসিপির কোনও সভাপতি নেই।

জেলার এক ছাত্রনেতা জানালেন, প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। জেলার কোন অঞ্চল থেকে কতজনকে প্রতিষ্ঠা দিবসে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে, কোন এলাকার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে কি না, সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই। নদিয়া জেলায় কে গোটা প্রস্তুতি পর্বের সমন্বয়ে থাকবেন, তা কারও জানা নেই।

কোনও ছাত্রনেতাই মুখ খুলতে চাইছেন না বিষয়টি নিয়ে। শনিবার তৃণমূল ভবনে যে বৈঠক হয়েছে, তাতে নদিয়া থেকে কারও ডাক পাওয়ার কথা ছিল না। কারণ এ বারের প্রস্তুতি বৈঠকে শুধু রাজ্য কমিটির সদস্যরা এবং জেলা সভাপতিরা ডাক পেয়েছিলেন। নদিয়া জেলা টিএমসিপি-র কোনও সভাপতি আপাতত না থাকায়, সে জেলা থেকে কেউ ডাক পাবেন কি না, সংশয় তৈরি হয়েছিল। পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রনেতাকে ফোন করে বৈঠকে ডেকে নেন এবং তিনিই নদিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রস্তুতি পর্বের দেখভাল যে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রনেতাই করবেন, তেমন কোনও নির্দেশ আবার মেলেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক টিএমসিপি নেতার কথায়, ‘‘যে যার নিজের নিজের এলাকায় দায়িত্ব নিতেই পারি। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কলকাতায় যেতেই পারি। ইচ্ছা করলে গোটা জেলার সমন্বয়ও করতেই পারি। কিন্তু দল তো ঘোষিত ভাবে দায়িত্ব দেয়নি। আমি এত খেটেখুটে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাব আর পরে কৃতিত্বটা নিয়ে নেবেন অন্য কেউ।’’ শুধু কি কৃতিত্ব পাওয়াই লক্ষ্য? সংগঠনের প্রতি দায়বদ্ধতা নেই? টিএমসিপি নেতা বললেন, ‘‘আছে, অবশ্যই দায়বদ্ধতা আছে। আমাকে কৃতিত্ব দিতে হবে না, কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আমার পরিশ্রমের কৃতিত্ব অন্য কেউ নেবেন, এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা টিএমসিপির সভানেত্রী ছিলেন দেবলীনা নন্দী। তিনি মাঝপথেই সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন যে, তিনি আর জেলার দায়িত্ব সামলাতে পারবেন না। কারণ রাজনীতি ছেড়ে তিনি পড়াশোনার দিকে বেশি সময় দিতে চান। সেই থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা টিএমসিপির কোনও সভাপতি বা সভানেত্রী নেই। জেলা ভেঙে নতুন জেলা হয়েছে ঝাড়গ্রাম। সেখানেও কোনও স্থায়ী সভাপতি নেই। রাজ্য কমিটির এক সদস্য বললেন, ‘‘দুই জেলাতেই কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দু’জন কাজ চালাচ্ছেন। তবে তাঁরা কেউই পূর্ণ সময়ের সভাপতি নন। ফলে সমস্যা কিছুটা তো হচ্ছেই।’’

আরও পড়ুন: ঢাকায় আজও পড়ুয়াদের সঙ্গে সংঘর্ষ, বিএনপি-জামাতের ঘাড়ে দোষ চাপাল আওয়ামি লিগ

রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের চেহারাটা তা হলে কেমন দাঁড়াল? রাজ্য সভাপতি পদে কেউ নেই। যাঁকে সভানেত্রী পদ থেকে সরানো হয়েছিল, প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশের প্রস্ততি পর্বের সমন্বয়টা তিনিই সামলাচ্ছেন। কিন্তু তিনটি জেলা কমিটিতেও কোনও সভাপতি নেই। তার মধ্যেই নেতৃত্বের বার্তা, ২৮ অগস্ট রেকর্ড ভিড় জমাতে হবে মেয়ো রোডে, টেক্কা দিতে হবে অমিত শাহের সমাবেশকে।

টিএমসিপি রাজ্য কমিটির এক সাধারণ সম্পাদক বললেন, ‘‘শনিবার একটা প্রস্তুতি বৈঠক হল ঠিকই। কিন্তু বৈঠক থেকে খুব একটা দিশা পেলাম না। কোন জেলা কত জনকে আনবে, কোথায় জমায়েত হবে, কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে বাস পাঠানো হবে কি না, সে সব নিয়ে আলোচনা হল না।’’ রাজ্য কমিটিতে অনেক দিন ধরে রয়েছেন,এমন আর এক ছাত্রনেতাও ওই সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সহমত। তিনি বললেন, ‘‘প্রস্তুতি বৈঠকে বিশদে সব জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত ছিল। কে কত জনকে আনতে পারছে, ক’টা বাস নেওয়া হচ্ছে, আরও বেশি পড়ুয়াকে কেন আনা যাবে না— এই সব কিছু নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়নি।’’

আরও পড়ুন: অঙ্কে বিশ্বজয় বঙ্গসন্তানের, নিখুঁত স্কোরে আনলেন সোনা

বিভ্রান্তি বা সংশয় থাকলেও, প্রতিষ্ঠা দিবসের প্রস্তুতি থেমে নেই। শনিবারের বৈঠক থেকে ফিরেই জেলায় জেলায় সক্রিয় হয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা। আগামী দু’সপ্তাহে প্রচার তুঙ্গে তোলা হবে। কিন্তু ছাত্র সংগঠনকে যে ভাবে চালানো হচ্ছে এবং যে ভাবে সরাসরি তৃণমূল নেতৃত্ব টিএমসিপি-কে নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাতে ছাত্রনেতাদের মধ্যে অসন্তোষ চাপা থাকছে না।

TMCP District Organization Partha Chatterjee Mamata Banerjee Foundation Day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy