Advertisement
E-Paper

‘কট্টরপন্থী’ অধীরকে সরিয়ে প্রদেশ নেতৃত্বে শুভঙ্করকে এনে সনিয়া বার্তা দিলেন কালীঘাট ও আলিমুদ্দিনকে

অধীররঞ্জন চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে দলের হাইকম্যান্ড। ওই পদের দায়িত্ব পেয়েছেন তৃণমূল তথা মমতার প্রশ্নে তুলনায় ‘নরমপন্থী’ বলে পরিচিত শুভঙ্কর সরকার।

শোভন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২৬
(বাঁ দিক থেকে) সনিয়া গান্ধী, অধীর চৌধুরী, শুভঙ্কর সরকার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিম।

(বাঁ দিক থেকে) সনিয়া গান্ধী, অধীর চৌধুরী, শুভঙ্কর সরকার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচক অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। অধীরের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে তৃণমূল তথা মমতার প্রশ্নে তুলনায় ‘নরমপন্থী’ বলে পরিচিত শুভঙ্কর সরকারকে। এই বদলের পর অনেকে মনে করছেন, অধীরের জায়গায় শুভঙ্করকে এনে সনিয়া গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা জোড়া বার্তা দিতে চাইলেন। প্রথম বার্তা কালীঘাটকে। দ্বিতীয়টি, প্রত্যাশিত ভাবেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট অর্থাৎ বঙ্গ সিপিএমকে।

অধীরের বদলে শুভঙ্করকে প্রদেশ সভাপতি করার পরে তৃণমূলের বিরোধিতায় প্রদেশ কংগ্রেসের যে নেতারা সরব, তাঁরা আর ততটা ‘আক্রমণাত্মক’ থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার যে সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী গাঁটছড়া অটুট রাখতে চায়, তারাও খানিক ‘বিমর্ষ’। শনিবার বেশি রাতে সিপিএমের এক প্রথম সারির নেতা বলেন, “আরজি কর-কাণ্ডের আবহে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের ধারাবাহিক নীরবতা অনেক কিছু ইঙ্গিত করছিল। সেটাই সত্যি হল।” সিপিএম সূত্রের খবর, দলের প্রথম সারির এক নেতার সঙ্গে দিন চারেক আগে অধীরের ফোনে কথা হয়েছিল। তখন অধীর তাঁকে জানিয়েছিলেন, দিল্লির কয়েক জন কংগ্রেস নেতা অধীরকে জানিয়েছিলেন, তাঁকেই প্রদেশ সভাপতি পদে পুনর্বহাল করা হবে। কিন্তু কংগ্রেসকে ভিতর থেকে চেনা অধীর বাংলায় বন্ধুভাবাপন্ন সেই সিপিএম নেতাকে এ-ও বলেছিলেন, “যাঁরা আমার গুণগান গাইছেন, তাঁরা আমার বন্ধু নন।” শনিবার রাতে সর্বভারতীয় কংগ্রেস অধীরের জায়গায় শুভঙ্করকে নিয়োগ করার পরেই মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসে অধীর-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “দাদাকে শেষ করে দেওয়া হল।” যদিও সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটিতে অধীর থাকছেন। কংগ্রেসের কর্মসমিতি বা সিডব্লিউসিতেও গত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাকে রাখা হতে পারে।

অধীরের জায়গায় শুভঙ্করকে দায়িত্ব দেওয়াকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেকেই। গত লোকসভা ভোটেই তৃণমূল চেয়েছিল বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে লড়তে। গত বছর অগস্ট মাসে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের বোঝাপড়া হয়নি। এ ব্যাপারে বাংলার শাসকদল এক এবং একমাত্র ‘দায়ী’ করেছিল অধীরকে। ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট করেই লড়েছিল কংগ্রেস। গত তিন দিন ধরে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের একান্ত আলোচনায় রয়েছে দলের অন্যতম প্রধান এক নেতার কয়েক ঘণ্টার দিল্লি সফর। সেই সফর নিয়ে আলোচনার চোরাস্রোত চলছিল বাংলার শাসকদলে। তার মধ্যেই অধীরের জায়গায় শুভঙ্করকে নিয়োগ নিছকই কাকতালীয় না কি সেই দিল্লি সফরের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়ে শাসকদলের নেতারাও জল্পনা শুরু করেছেন।

সন্দেহ নেই, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক মসৃণ হলে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বিত হবে সিপিএম তথা বামেরা। তবে আলিমুদ্দিন এখনই এ নিয়ে সরাসরি কোনও কটাক্ষ বা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্যের দিকে না গিয়ে কিছু দিন অপেক্ষা করতে চাইছে। সিপিএম নেতৃত্বও মনে করছেন, ১০ জনপথের বার্তা স্পষ্ট। এমন একটি সময়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বদল করা হল, যখন আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলনে উত্তাল বাংলা। দলগত ভাবে কংগ্রেসও সেই আন্দোলনে জুড়ে থেকেছে। বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে যাতে কংগ্রেসের সখ্য থাকে, দিল্লিতে এই বিষয়টি দেখাশোনা করতেন সদ্যপ্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি। যাঁকে রাহুল গান্ধী বন্ধু বলতেন, পরামর্শ নিতেন। ফলে সিপিএমেরও আর তেমন সুযোগ নেই দিল্লির কোনও নেতাকে দিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে কথা বলানোর। সেই প্রেক্ষাপটে অধীরের অপসারণ এবং শুভঙ্করকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা বাংলার রাজনীতিতে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’।

Congress Pradesh Congress TMC CPIM West Bengal Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy