দীর্ঘ দিন পরে মতুয়া এলাকায় রাজনৈচিক পদক্ষেপ শুরু করল কংগ্রেস। মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার দাবিতে রবিবার ঠাকুরনগরে ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি করল তারা। সেই মঞ্চ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার জানিয়ে দিলেন, মতুয়া-অধ্যুষিত এলাকায় তাঁদের আনাগোনা অব্যাহত থাকবে। উত্তর ২৪ পরগনায় মতুয়া কর্মসূচির পাশাপাশি একই দিনে কংগ্রেসের ‘ভোটার অধিকার সম্মেলন’ও শুরু হল দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১) সাংগঠনিক জেলা থেকে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা (গ্রামীণ) কংগ্রেসের আয়োজিত ‘সত্যাগ্রহে’ বিজেপিকে বিঁধে শুভঙ্কর বলেছেন, ‘‘আইন করেছেন, অথচ প্রয়োগ করলেন না। এখনও মতুয়া সমাজের বহু মানুষ নাগরিকত্ব পাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তো এত সাংসদ! তাঁরা কখনও সংসদে মতুয়াদের জন্য ধর্না দিয়েছেন?’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে ইন্দ্রাণী দত্ত চট্টোপাধ্যায় কয়েক দিন আগে ঠাকুরবাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে বিজেপির বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে রবিবার শুভঙ্করের মন্তব্য, ‘‘এই অপমান বাংলার সব মহিলার অপমান। দুর্গা পুজোর পরে এর প্রতিবাদে আমরা সবাই হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পুজো দিতে আসব। দেখি আমাদের কে আটকায়!’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি বলছে, নরেন্দ্র মোদীর সরকার মতুয়া সমাজের সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। তা হলে ঠাকুরবাড়িতে হিন্দুত্ব কার্ড বিলি করতে হচ্ছে কেন? বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর এবং গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুরের মধ্যে এই কার্ড বিলি নিয়ে বিবাদ কেন?’’
কংগ্রেসের সঙ্গে মতুয়াদের পুরনো সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে ইন্দ্রাণী বলেছেন, ‘‘প্রমথরঞ্জন ঠাকুর (মতুয়াদের ‘বড়মা’ বীণাপাণি ঠাকুরের স্বামী) কংগ্রেসের সাংসদ-মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব বা বাসস্থান পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ তাঁর ঘোষণা, ‘ভোটের অধিকার, নাগরিকত্বের অধিকার’— স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর স্বরূপনগরে জেলা কংগ্রেসের সম্মেলন হবে।
বিজেপি বিধায়ক সুব্রত অবশ্য কটাক্ষ করেছেন, ‘‘এ রাজ্যে কংগ্রেস ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ঠাকুরনগরে এসে নাটক করে লাভ নেই।’’ কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুও। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মমতা ঠাকুরের দাবি, ভোটের আগে কংগ্রেস রাজনীতি করতে এসেছে।
‘ভোটার অধিকার সম্মেলনে’ এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ও অন্য নেতারা। যাদবপুরে। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুরে এ দিনই বাংলায় ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’-এর দাবিতে এবং বিজেপি ও তৃণমূলের ‘ভোট চুরি’র প্রতিবাদে ‘ভোটার অধিকার সম্মেলন’ করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১) জেলা কংগ্রেস। ছিলেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলার পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর, সহ-পর্যবেক্ষক অম্বা প্রসাদ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর, জেলা সম্পাদক মহম্মদ মোক্তার প্রমুখ। বড়বাজার জেলা যুব কংগ্রেস কমিটির ডাকে ‘ভোট চোর, গদি ছোড়’ স্লোগান নিয়ে বাইক মিছিলও হয়েছে এ দিন। ছিলেন সন্তোষ পাঠক, ভোলা যাদব, রোহিত পাঠক, কাশিফ রাজা, অজিত সিংহেরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)