ধর্মতলার মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ও বাংলায় দলের পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীর জানিয়ে দিলেন, এ রাজ্যে কংগ্রেস ২৯৪টি আসনেই লড়বে। তার জন্য কংগ্রেস কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার আগেই বলেছেন, রাজ্যে তাঁরা ২৯৪ আসনে লড়তে চান। সেই কথাই এ বার এআইসিসি-র নেতা মীরের মুখে শোনা যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, দু’মাস আগে কালীগঞ্জে বিধানসভা উপনির্বাচনে সিপিএমের সঙ্গে জোট গড়ার জন্য কি তবে ‘ভুল’ স্বীকার করবেন তাঁরা? কালীগঞ্জে বাম সমর্থনে গত কয়েকটি উপনির্বাচনের তুলনায় ভোট বাড়িয়েছিল কংগ্রেস।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী যে ‘ভোট চুরি’র অভিযোগ তুলেছেন, তাকে সামনে রেখে ‘দেশ বাঁচাও, ভোট বাঁচাও’ ডাক দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের আগের সন্ধ্যায় দেশের সর্বত্র মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছিল এআইসিসি। কলকাতায় বৃহস্পতিবার বিধান ভবন থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ওই মশাল মিছিলে ছিলেন মীর, এআইসিসি-র সহ-পর্যবেক্ষক অম্বা প্রসাদ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর এবং দলের অন্য নেতারা। মিছিল শেষে মীর বলেছেন, ‘‘কোনও অন্যায়-অবিচারের সঙ্গে কংগ্রেস আপস করবে না। কারও ভোটাধিকার কেড়ে নিতে আমরা দেব না। বাংলাতেও কংগ্রেস ২৯৪টি বিধানসভা আসনেই লড়াই করবে। কংগ্রেস কর্মীদের তার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে পরিবর্তনের পরে গত নভেম্বরে ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে একা লড়ে শোচনীয় ফল করেছিল কংগ্রেস। তার পরে জুন মাসে কালীগঞ্জে বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধে আগেকার উপনির্বাচনের তুলনায় তাদের ভোট বেড়েছিল। এখন আবার সব আসনে একা লড়ার কথা বলতে শুরু করায় প্রশ্ন উঠেছে, একই সভাপতির আমলে এত অল্প সময়ে কত বার মত বদল করবে কংগ্রেস! দলের একাংশের অবশ্য মত, সব আসনে লড়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি কংগ্রেসের নেই। এ সবই আসলে দর কষাকষির কৌশল।
এআইসিসি নেতা মীরের এ দিনের ঘোষণার পরে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করাই আমাদের ঘোষিত লক্ষ্য। সেই পথে বারবার অবস্থান বদল করলে মানুষ বিভ্রান্ত হন, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কংগ্রেসের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চয়ই সেটা মাথায় রাখবেন।’’
ঘটনাচক্রে, দিল্লিতে এ দিনই তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাংলায় শূন্য কংগ্রেসকে বিধানসভায় তাঁরা কোনও প্রস্তাব দিতে ইচ্ছুক নন। তার প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করের বক্তব্য, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা কে কী বলছেন, জানি না। আমরা তো ওঁদের কাছে আসন চাইতে যাইনি। কংগ্রেস বাংলায় ২৯৪টি আসনেই লড়তে চায়। কংগ্রেসের পতাকাকে সর্বত্র দৃশ্যমান করতে চাই আমরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিকেরা বাংলায় আগেও আলাদা লড়াই করেছে। কারওরই দাদাগিরির মনোভাবের বিরুদ্ধে আমরা।’’
বিহারের ‘দৃষ্টান্ত’ দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) বাতিলের দাবিতে এ দিনই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন। আর ঝাড়গ্রামে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘আমরাও দাবি করি, প্রত্যেক প্রকৃত ভোটারের নাম থাকা উচিত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল চায় না মৃত ভোটার, অস্তিত্বহীন ভোটারের নাম বাদ যাক। এক বার আলিপুরদুয়ারে ভোট দেবে, এক বার মালদহে, এক বার ঝাড়গ্রামে ভোট দেবে! ভবানীপুরে মমতাকে ভোট দেবে!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)