Advertisement
১৭ মে ২০২৪

উপভোক্তার বাড়ি যাচ্ছে মমতার চিঠি

সম্প্রতি নবান্নে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্যসচিব এই কর্মসূচির কথা জানিয়েছিলেন। 

খসড়া চিঠি। নিজস্ব চিত্র

খসড়া চিঠি। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:১১
Share: Save:

রাজ্য সরকার কোন উপভোক্তাকে কোন প্রকল্পে কী সুবিধা দিচ্ছে তা মনে করিয়ে দেবে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেই চিঠি পৌঁছে যাবে বাড়ি-বাড়ি।

সম্প্রতি নবান্নে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্যসচিব এই কর্মসূচির কথা জানিয়েছিলেন। সেই মতো জেলায় ফিরে বিভিন্ন দফতরের কর্তা ও বিডিওদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জেলাশাসকেরা। দ্রুত এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার থেকেই বিভিন্ন দফতরে সেই চিঠির বয়ান মেল করে পাঠানো শুরু করেছে নবান্ন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠি বাড়ি-বাড়ি পোঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে যাবে। এ কাজে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশাকর্মী ও পঞ্চায়েত কর্মীদের ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলছেন, “কারও উপরে যাতে বেশি চাপ না পড়ে, তার জন্য আমরা কাজটা ভাগ করে দেব।”

প্রত্যাশিত ভাবেই, এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিশেষ করে রাজ্য সরকার আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর ছবি দেওয়া চিঠি বিলি নিয়ে আপত্তি তোলার পরে এই চিঠি বিলি যথেষ্ট আপত্তিকর বলে মনে করছে বিজেপি। তাদের দাবি, প্রশাসনিক পরিকাঠামো ও সরকারি অর্থ কাজে লাগিয়ে আসলে লোকসভা ভোটের প্রচার করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামেরাও এই নিয়ে সরব হয়েছে। শাসক দল অবশ্য তা মানতে নারাজ।

কী আছে এই চিঠিতে?

চিঠির বয়ানে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ‘বিপুল জনসমর্থন’ নিয়ে আসার পরে ‘আর্থিক ভাবে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া সমস্ত মানুষের জন্য বর্তমান রাজ্য সরকার তার নিজস্ব বাজেট বরাদ্দ থেকে গ্রহণ করছে একগুচ্ছ সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প।’ এবং তার পরেই নির্দিষ্ট দফতরের নির্দিষ্ট প্রকল্প উল্লেখ করে লেখা হচ্ছে ‘আপনাকে এক জন উপভোক্তা হিসাবে অর্ন্তভুক্ত করতে পেরে ও প্রকল্পের অধীন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’ চিঠির মাথায় ‘বিশ্ববাংলা’র লোগোও দেওয়া রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্য থেকে পাঠানো চিঠির খসড়া পাঠিয়ে দেওয়া হবে ব্লক স্তরে। সেখানেই ছাপা হবে চিঠি। তারপর তা গ্রাম পঞ্চায়েত মারফত বাড়ি-বাড়ি বিলি করা হবে। কিছু দফতর আবার নিজেরাই চিঠি ছাপিয়ে জেলায় পাঠিয়ে দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে এই চিঠি যাতে জনপ্রতিনিধিদের হাত দিয়ে বিলি না হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন জেলাশাসক। যদিও সেই ঝুঁকি থাকছেই। কেননা পঞ্চায়েত স্তরে বিষয়টি চলে যাওয়ার পরে শাসক দলের নেতারা নিজেরাই চিঠি বিলি করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন কি না তা নিয়ে সন্দিহান প্রশাসনের অনেকে।

আয়ুষ্মান ভারতের চিঠিতে নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেওয়ার বিরোধিতা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে এই চিঠি পাঠানো ‘দ্বিচারিতা’ বলেই দাবি করছে বিজেপি। দলের নদিয়া উত্তর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি মহাদেব সরকার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আসলে নকলগড়ের রানি। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রকল্পগুলিকে নিজের বলে চালিয়ে দিচ্ছেন!” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র মতেও, “এটা সরকারি পয়সায় ভোটের প্রচার। মুখ্যমন্ত্রী আর নিজের দলের প্রচারকদের উপরে ভরসা করতে পারছেন না বলেই এই ধরনের কর্মসূচি নিচ্ছেন।”

তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের পাল্টা বলেন, “৩৪ বছরে সিপিএম কোনও কাজ করেনি। তাই তাদের কিছু বলাও মানায় না। আর বিজেপির প্রধানমন্ত্রী তো আসলে প্রচারমন্ত্রী। প্রচার ছাড়া ওদের সবটাই ফাঁকা। ওদের কথায় উত্তর দেওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই।”

তবে এ সব চাপানউতোরের মধ্যে ঢুকতে চাইছেন না জেলা প্রশাসনের কর্তারা। এখন তাঁদের এক মাত্র লক্ষ্য, যত দূর সম্ভব রাজনৈতিক ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি উপভোক্তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE