Advertisement
E-Paper

এখনও কেন বকেয়া ডিএ মিলল না? সময় পেরিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর আদালত অবমাননার মামলা দায়ের সুপ্রিম কোর্টে

সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে ছয় সপ্তাহের মধ্যে। হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ জুন সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ২২:৩৭
বকেয়া ডিএ না পেয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ।

বকেয়া ডিএ না পেয়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হল সুপ্রিম কোর্টে। মামলা দায়ের করলেন রাজ্যের সরকারি কর্মীদের একাংশ। ডিএ নিয়ে গত ১৬ মে শীর্ষ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, ছয় সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে ২৭ জুন, শুক্রবার। তার পাঁচ দিন পর আদালতের দ্বারস্থ হলেন সরকারি কর্মচারীরা। তবে শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্টে নতুন করে আবেদন জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। বলা হয়েছিল, সরকার আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। তাই বকেয়া ডিএ দিতে আরও ছ’মাস সময় লাগবে। ডিএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানিয়েছে রাজ্য।

সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে ‘কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ় ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামক একটি সংস্থা। তাদের হয়ে মামলা লড়বেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম, গোপা বিশ্বাসেরা। মামলাকারীদের বক্তব্য, আদালেতর অন্তর্বর্তী নির্দেশ মানেনি রাজ্য সরকার। কাউকে এখনও বকেয়া ডিএ দেওয়া হয়নি। এতে আদালতের অবমাননা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলাকেও টেনে এনেছেন মামলাকারীরা। ওই মামলায় অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে বেতন ফেরত নিতে বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে। কেন তা ফেরত নেওয়া হচ্ছে না? প্রশ্ন তুলেছেন বকেয়া ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারীরা। এক দিকে অযোগ্যদের বেতন ফেরত নেওয়া হচ্ছে না, অন্য দিকে সরকার আর্থিক সঙ্কটের কথা জানাচ্ছে— দু’রকম অবস্থান কেন? প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে এ রাজ্যের কর্মীদের মহার্ঘভাতার ফারাক ৩৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া রয়েছে, তার ২৫ শতাংশ রাজ্য সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে পরের ছয় সপ্তাহের মধ্যে। হিসাব অনুযায়ী, ২৭ জুন সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। অগস্ট মাসে আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে শীর্ষ আদালতে।

ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ–র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। কিন্তু তার পরেও বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ২৭ জুনের মধ্যে মেটানোর কথা ছিল রাজ্যের। আদালতের কাছে সময় চেয়ে রাজ্য জানিয়েছে, বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ সরাসরি আদালতের তহবিলে জমা দিতে তারা প্রস্তুত। রাজ্যের বক্তব্য, লক্ষ লক্ষ কর্মচারীকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে এমন কোনও বরাদ্দ নেই। রাজ্যকে যদি এই অর্থ দিতে হয়, তা হলে ঋণ নিতে হবে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি দরকার। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। এ ছাড়াও রাজ্যের যুক্তি, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক। এটি কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয় রাজ্য। তারা একটি নিজস্ব নিয়মাবলি চালু করেছে— রোপা ২০০৯। এই নিয়ম অনুযায়ী, কত হারে ডিএ বৃদ্ধি পাবে, তা রাজ্য নির্ধারণ করে থাকে। কেন্দ্র যে হারে ডিএ দেয়, তা রাজ্যের উপর প্রযোজ্য নয়, কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভিন্ন।

Supreme Court DA Case Dearness Allowances West Bengal government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy