Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রয়োজনে ‘অস্পৃশ্য’ নয় তৃণমূল, তন্ময়ের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সিপিএমে হুঁশিয়ারি

কৌশলী বিবৃতি জারি করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বুধবার দলের সকলকেই সতর্ক করে দিয়েছেন, বিজেপির মোকাবিলায় তৃণমূল বা তৃণমূলকে রুখতে বিজেপির হাত ধরা— দুই ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ থেকেই দূরে থাকতে হবে।

তন্ময় ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।

তন্ময় ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০৩:১৩
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের পরে তখন কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে। কলকাতায় অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের মিছিলে যোগ দিয়ে সিপিএমকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন তন্ময় ভট্টাচার্য। এ বার তৃণমূলকে ইঙ্গিত করে কেউ ‘রাজনৈতিক অস্পৃশ্য’ নয় বলে মন্তব্য করে ফের দলের বিড়ম্বনা ডেকে আনলেন উত্তর দমদমের বিধায়ক। আগ বাড়িয়ে তন্ময়বাবুর এমন মন্তব্যে বেজায় ক্ষুব্ধ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

কৌশলী বিবৃতি জারি করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বুধবার দলের সকলকেই সতর্ক করে দিয়েছেন, বিজেপির মোকাবিলায় তৃণমূল বা তৃণমূলকে রুখতে বিজেপির হাত ধরা— দুই ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ থেকেই দূরে থাকতে হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম নেতৃত্ব বিধায়ককে সতর্ক করে দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।

কয়েক দিন আগে একটি টিভি চ্যানেলে তন্ময়বাবু মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্যে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি বা আরএসএসের শাখা বৃদ্ধির জন্য তৃণমূলের সরকারই দায়ী। কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে কাউকে যদি মারা হয়, তা হলে তৃণমূলের জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সঙ্গে থাকলেও তিনি সেই ব্যক্তিকে বাঁচাতে যাবেন। বিজেপির হাত থেকে কাউকে বাঁচানোর প্রশ্নে সিপিএম বিধায়কের মুখে হঠাৎ এ ভাবে তৃণমূলের কথা এল কেন, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। তখন সামাজিক মাধ্যমে ফের বিবৃতি দিয়ে তন্ময়বাবু ব্যাখ্যা দেন— পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আছে বলে তিনি দেশের পক্ষে দাঁড়াবেন না, এটা যেমন হয় না, তেমনই জ্যোতিপ্রিয়বাবু আক্রান্ত কাউকে বাঁচাচ্ছেন বলে তিনি বাঁচাবেন না, এটাও হয় না। এতে বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়। তন্ময়বাবুর পোস্টের উপরে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, ‘রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা’ না থাকলে তৃণমূল-বিজেপির ‘আঁতাঁত’ নিয়ে সিপিএমের কি কথা বলা সাজে?

এই বিতর্কের প্রেক্ষিতেই এ দিন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্রশ্ন উঠেছে, দলের স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কলকাতায় স্পষ্ট করে বলে গিয়েছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বামেরা তৃণমূলের হাত ধরা মানে বিজেপিকে রাজনৈতিক সুবিধা করে দেওয়া। তার পরেও দলের এক বিধায়ক এমন মন্তব্য করেছেন কি ‘চাঞ্চল্য’ তৈরির জন্য? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু বলা হলে আলাদা কথা। কোনও কারণ ছাড়াই হঠাৎ একটা কাল্পনিক পরিস্থিতির কথা বলে এমন মন্তব্য করা হলে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বিভ্রান্তিই তৈরি হয়।’’ বৈঠকের পরে রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবু বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, রাজ্যের নানা প্রান্তে বিজেপি ও তৃণমূল হিংসাত্মক ও উস্কানিমূলক কার্যকলাপ বাড়িয়ে তুলেছে। তাঁর বক্তব্য, ‘সমস্ত শান্তিপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার লড়াইকে দুর্বল করার জন্য বিজেপিকে নিয়ে তৃণমূলের এবং তৃণমূলকে নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক বিপজ্জনক প্রবণতা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তির ক্ষেত্রে এর গুরুতর প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে তা গুরুতর বিপদ’।

তার আগে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীও সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘তৃণমূল ডুবন্ত নৌকা। অমরা সকলে মমতার পাশে দাঁড়াব, এমন দিবাস্বপ্ন দেখবেন না! আসন আপাতত কমলেও বামফ্রন্টের কোনও বিকল্প নেই।’ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ দিন ছিলেন গৌতম দেবও। ঠিক হয়েছে, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে এই ‘বিভ্রান্তির প্রবণতা’ কাটানোর চেষ্টা হবে। বিতর্ক বাধার পরে আত্মপক্ষ সমর্থন করলেও এ দিন আর তন্ময়বাবু মখ খোলেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tanmoy Bhattacharya CPM BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE