Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলশিক্ষক ও কর্মীদের মন পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক

কলকাতার সব সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলে ওই বোর্ডের কাছ থেকে সম্প্রতি যে-নির্দেশিকা এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্মীর সাইকোমেট্রিক টেস্ট অর্থাৎ মনের গলিঘুঁজিতে কী আছে, তা আগেভাগে পরীক্ষা করানো আবশ্যিক।

সুনন্দ ঘোষ ও সুপ্রিয় তরফদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

দেশের ভবিষ্যৎ ছাত্রছাত্রীরা। আর ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের ‘মানসিক স্বাস্থ্য’-এর উপরে। সেই জন্য প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, তার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা চালু করছে সিবিএসই (সেন্ট্রাল বোর্ড অব সেকেন্ডারি এডুকেশন) বোর্ড।

কলকাতার সব সিবিএসই অনুমোদিত স্কুলে ওই বোর্ডের কাছ থেকে সম্প্রতি যে-নির্দেশিকা এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্মীর সাইকোমেট্রিক টেস্ট অর্থাৎ মনের গলিঘুঁজিতে কী আছে, তা আগেভাগে পরীক্ষা করানো আবশ্যিক।

সম্প্রতি গুরুগ্রামের রায়ান স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র প্রদ্যুম্নের খুনের ঘটনার পরে ওই স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সিবিএসই-র তৈরি কমিটি। সন্দেহ, দেশের বহু স্কুলই যথাযথ ভাবে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এ বিষয়ে স্কুলগুলিকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্যই এই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থেকে শুরু করে, পুলিশকে দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করানোর কথা আছে। একই ভাবে আছে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা করানোর কথা। আর এই সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের কথায়, ‘‘এক অবাস্তব ও গাঁজাখুরি প্রস্তাব। ভবিষ্যতে কে কাকে খুন করবে, কে কার উপরে যৌন অত্যাচার চালাবে, এই সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা থেকে তা কোনও ভাবেই বোঝা সম্ভব নয়।’’ কারও মধ্যে যদি সুপ্ত যৌনবাসনা থাকে বা অত্যাচার করার মানসিকতা থাকে, এই ধরনের পরীক্ষা থেকে সেটা কি জানা যাবে না? জয়রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘কারও মধ্যে এই ধরনের মানসিকতা থাকলেও তা কিছুতেই আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়।’’

নির্দেশিকা পেয়ে আতান্তরে পড়েছে স্কুলগুলিও। অভিনব ভারতী হাইস্কুলের অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্ত বলেন, ‘‘শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সাইকোমেট্রিক টেস্ট করাতে বলা হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে বা কাদের দিয়ে তা করানো হবে, সেটা পরিষ্কার না-হওয়ায় প্রক্রিয়া নিয়ে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’

সমস্যা যে আছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষা অঞ্জনা সাহাও। তিনি বলেন, ‘‘নির্দেশিকা পেয়েছি। সেটা কী ভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে পুজোর পরে আলোচনা হবে। বেশ কিছু ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে।’’

মনোবিদ শান্তনু গোস্বামীর কথায়, ‘‘সাধারণ ভাবে যাঁর কোনও মানসিক সমস্যা থাকে, তাঁর সমস্যাটা কী ধরনের, তা বোঝার জন্যই অনেক সময়ে এই পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা বলতে আসলে কিছু প্রশ্ন। তার উত্তর এক জন মানুষ কী দিচ্ছেন, তার ভিত্তিতে তাঁর মানসিক গঠনের আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু যিনি বাহ্যত স্বাভাবিক, এই ধরনের পরীক্ষায় তাঁর দেওয়া উত্তর থেকে কিছুই বোঝা সম্ভব নয়।’’

বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন ওই মনোবিদ। কেননা শান্তনুবাবু মনে করেন, এই ধরনের পরীক্ষা করলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কারও মধ্যে সুপ্ত রাগ বা মানসিক সমস্যা থাকলে এবং এই পরীক্ষার মাধ্যমে সেটা প্রকাশিত হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে তাঁর চাকরি নিয়েও। অর্থাৎ এই ধরনের পরীক্ষার জেরে টানাটানি পড়ে যেতে পারে পরীক্ষিত ব্যক্তির রুটিরুজি নিয়েও।

এই ভাবে সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটিও। সাউথ পয়েন্টের ট্রাস্টি কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘বোর্ড যখন বলেছে, তখন তো করতেই হবে। কিন্তু এর কার্যকারিতা কতখানি, সেটা মনোবিদেরাই ভাল বলতে পারবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE