E-Paper

আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের রং ইচ্ছে করেই পাল্টেছিল রাজ্য

কেন্দ্রীয় সরকার আচমকা ‘আয়ুষ্মান ভারত হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ (যেগুলির সদ্য নামকরণ হয়েছে আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির)-এর রং বদলাতে বলেছে!

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২৯
An image of Ayushman Arogya Mandir

(বাঁ দিকে) আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রস্তাবিত রং এবং ওই নির্দেশের পরেও চলতি বছর রাজ্য সরকারের পাঠানো চিঠিতে বর্ণিত নীল-সাদা রং (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।

এমন নয় যে, কেন্দ্রীয় সরকার আচমকা ‘আয়ুষ্মান ভারত হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ (যেগুলির সদ্য নামকরণ হয়েছে আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির)-এর রং বদলাতে বলেছে! সরকারি নথি অনুযায়ী, সেই ২০১৮ সালে ওই ভবনগুলির রং হলুদ (ইয়েলো মেটাল) ও খয়েরি (এথনিক ব্রাউন) করার ব্যাপারে নির্দেশ জারি করেছিল কেন্দ্র। সে বছরের ৩০ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে একটি সহায়ক পুস্তিকা বা ম্যানুয়াল প্রকাশ করে প্রত্যেক রাজ্যকে দেওয়া হয়। সেখানে কেন্দ্রগুলির নকশা, রং, দেওয়ালের ছবি ও লোগো কী হবে, তা বিস্তারিত জানানো হয়। রং-সহ সব শর্ত মেনেই কেন্দ্রের সঙ্গে ‘মউ’ সই করে রাজ্য।

অথচ, স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য বলছে, এর অনেক পরে হলুদ-খয়েরি বনাম সাদা-নীল রং নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য যাবতীয় বিতর্ক, বৈঠক ও চিঠি চালাচালির মধ্যেই নতুন করে ২০২৩, অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জেলায়-জেলায় চিঠি দিয়ে ওই কেন্দ্রগুলির রং সাদা-নীল করারই নির্দেশ জারি করেছিলেন! অর্থাৎ, রাজ্য জেনেশুনেই নিয়ম ভেঙেছে এবং এখন তাদের যুক্তি, এক বার যখন নীল-সাদা রং হয়ে গিয়েছে, তখন তা পরিবর্তন করতে গেলে প্রচুর সময় এবং টাকা ব্যয় হবে। অতএব, রঙের দিকে না তাকিয়ে রাজ্যকে টাকা দিয়ে দেওয়া হোক। এ দিকে, দেশের অন্যান্য অধিকাংশ রাজ্য কেন্দ্রের নিয়ম মেনে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের টাকা পেয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই একাধিক আধিকারিক এ ব্যাপারে বিরক্ত। তাঁরা এখন মানছেন যে, জেদের বশে কার্যত ইচ্ছাকৃত ভাবেই রাজ্য রঙের ব্যাপারে এ ভাবে নিয়ম না ভাঙলে প্রকল্পের পাহাড়প্রমাণ কাজ আটকে যেত না।

চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি রাজ্যের এমডি (জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন) শুভাঞ্জন দাসের লেখা চিঠি পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের প্রত্যেক জেলাশাসক ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। তাতে বলা হয়, রাজ্যের সব হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের চেহারা যাতে এক রকম হয়, তা মাথায় রাখতে হবে। চিঠিতে আরও লেখা ছিল— ‘কিছু জেলা রাজ্যের নির্দেশ (বিশেষ করে রং সংক্রান্ত নির্দেশ) মানছে না। এটা সহ্য করা হবে না। অবিলম্বে তাদের এটা মানতে হবে এবং চিঠির সঙ্গে কেন্দ্রগুলির যে রকম রং, নকশা ও থ্রিডি ছবি জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই মতো সেগুলি তৈরি করতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, সেই চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ছবিতে গ্রামীণ ও শহুরে, দু’ধরনের হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের রং সাদা-নীল দেখানো ছিল এবং তাতে কেন্দ্রের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছ’টি নকশা আর আয়ুষ্মান ভারতের লোগোও ছিল না।

প্রশ্ন উঠেছে, শুধুমাত্র রঙের জন্য কেন্দ্রের টাকা আটকে রাখা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এত সরব, তখন তাঁর নিজের সরকার কেন নীল-সাদা রঙের ব্যাপারে এতটা একবগ্গা? তিনি যদি সত্যিই রঙের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে না চান, তা হলে হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারগুলির রং হলুদ-খয়েরি করলেন না কেন? এখানে তো ‘গেরুয়া’ তত্ত্বও খাটছে না। কারণ, কেন্দ্রের নির্দেশে ২০১৮ সাল থেকে ইয়েলো মেটাল আর এথনিক ব্রাউন, এই দু’টি রঙের কথাই বলা আছে। কোথাও গেরুয়ার কথা বলা নেই।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভবনের রং নীল-সাদা। তাই প্রতিটি জায়গার মধ্যে যাতে সামঞ্জস্য থাকে, তার জন্যই হেল্‌থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারগুলির রং সাদা-নীল করা হয়েছিল। কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা তো আগেও এসেছেন, ঘুরে দেখেছেন। তখন তাঁরা টাকা দিতে সমস্যা করেননি। আচমকা রঙের কথা তুলে চলতি বছরে কেন্দ্র টাকা আটকে দিয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal government Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy