Advertisement
০২ মে ২০২৪
Train accident

সংসার টানতে পড়া ছেড়ে কাজে যাওয়ার পথে মৃত্যু যুবকের

সৌরভের বাবা কিঙ্করনাথ বড়বাজারে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ তিনি। কয়েক বছর আগে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়।

সৌরভ রায়। নিজস্ব চিত্র।

সৌরভ রায়। নিজস্ব চিত্র।

সমীরণ দাস
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ০৯:২৬
Share: Save:

সংসারের অনটন, বাবার অসুস্থতা অস্থির করে তুলেছিল বছর একুশের যুবককে। তাই সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা ছেড়ে ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কাজে যাওয়ার পথেই শুক্রবার রাতে বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বারুইপুরের ধপধপি-২ পঞ্চায়েতের পশ্চিম মল্লিকপুর রায়পাড়ার বাসিন্দা সৌরভ রায়ের। সঙ্গে ছিলেন তাঁর জামাইবাবু বিশ্বনাথ চক্রবর্তীও। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি বলেই প্রশাসন সূত্রের খবর।

সৌরভের বাবা কিঙ্করনাথ বড়বাজারে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ তিনি। কয়েক বছর আগে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়। তা-ও অসুস্থ শরীর নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবার সূত্রের খবর, বাবাকে আর কাজ করতে দিতে চাইতেন না সৌরভ। বারুইপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়া নানা কাজকর্ম করে উপার্জনের চেষ্টা করতেন। কিন্তু স্থায়ী কিছু মিলছিল না। এই পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ুতে একটি কেটারিং সংস্থায় কাজের সুযোগ আসে। পড়াশোনা ছেড়ে সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সৌরভের একমাত্র দিদির বাড়ি বিষ্ণুপুর থানা এলাকায়। জামাইবাবু বিশ্বনাথ চক্রবর্তী পুরোহিতের কাজ করেন। তাঁকেও ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়ার ব্যাপারে রাজি করান সৌরভ। শুক্রবার সকালে তাঁরা বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিলেন।

বাবা-মা ছাড়াও সৌরভদের যৌথ পরিবারে কাকা, কাকিমা, জেঠামশাই, জেঠিমারা রয়েছেন। কিন্তু কাজের ব্যাপারে কাউকে সে ভাবে কিছু জানিয়ে যাননি সৌরভ। জানতেন না বন্ধুবান্ধবেরাও। মাকে শুধু বলে গিয়েছিলেন, ভিন্ রাজ্যে পৌঁছে ছবি তুলে পাঠিয়ে সকলকে ‘সারপ্রাইজ়’ দেবেন। জানিয়েছিলেন, আর কোনও দুঃখ-কষ্ট থাকবে না তাঁদের। নিজের উপার্জনে বাড়ির সংস্কার করাবেন।শনিবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। সৌরভের মা পূর্ণিমা রায় বলেন, “বলে গিয়েছিল, ‘সারপ্রাইজ়’ দেবে। এই ‘সারপ্রাইজ়’ আমি চাই না।” বাবা কিঙ্করনাথ বলেন, “আমাকে কিছুতেই কাজ করতে দিতে চাইত না। বলেছিল, এ বার থেকে ও-ই সংসার চালাবে, আর আমায় কাজে যেতে হবে না।”

সোনারপুরের বৈকুণ্ঠপুর এলাকা থেকে বছর আঠারোর দুই যুবকও কাজের সন্ধানে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অক্ষয় মিস্ত্রি ও দীপঙ্কর মণ্ডল নামে ওই দুই যুবকের খোঁজ মেলেনি। দুই পরিবার সূত্রের খবর, বাড়ির অমতে জোর করেই কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওই দুই যুবক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Train accident Baruipur South 24 Parganas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE