Advertisement
E-Paper

করোনামুক্ত রেলবস্তি, শুরু কারণ খোঁজা

রেলশহর খড়্গপুরের বস্তি এলাকার ছবিটা অন্য জায়গার থেকে আলাদা নয়।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০৩:৪৪
মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন অম্বেডকর কলোনির বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন অম্বেডকর কলোনির বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র

এক চিলতে ঘরে গাদাগাদির সংসার। ঘিঞ্জি পথঘাটে চলতে গেলে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। একটি শৌচাগার ব্যবহার করেন অনেকে।

রেলশহর খড়্গপুরের বস্তি এলাকার ছবিটা অন্য জায়গার থেকে আলাদা নয়। ফলে, সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ়ার দিয়ে বারবার হাত পরিষ্কার করার মতো করোনা-বিধি পালনের পরিবেশটাই এখানে অনেকাংশে নেই। তাও করোনা সংক্রমণে বিপরীত ছবি খড়্গপুরের রেলবস্তিতে। শহর জুড়ে সংক্রমিতের সংখ্যা যেখানে উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে, এমনকি আইআইটিতেও থাবা বসিয়েছে করোনা, সেখানে একাধিক রেলবস্তিকে এখনও ছুঁতেই পারেনি মারণ-ভাইরাস।

করোনা হানার পরেও মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি সংক্রমণের ছড়িয়ে পড়া রুখে গোটা বিশ্বে নজির গড়েছে। খড়্গপুরেও ১৭টি বড় ও ২০টি ছোট রেলবস্তির কোথাওই করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলা ভার। চায়নাটাউন, শান্তিনগর, অম্বেডকর কলোনি, পোর্টারখোলির মতো অধিকাংশ রেলবস্তি এখনও করোনা-মুক্ত। খোদ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় মানছেন, “আমি নিজেও দেখতে পাচ্ছি, শহরের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ বেশি সংখ্যায় করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ যাঁরা অনেক কম নিয়মকানুন মেনে চলেন, শহরের সেই বস্তি এলাকার বাসিন্দারা আক্রান্ত হচ্ছেন না। এটা সত্যিই ভাবার মতো বিষয়।”

আরও পড়ুন: লোকাল ট্রেন, মেট্রো চালু হলে মানা যাবে কি দূরত্ব-বিধি

এর কারণ খুঁজতে তৎপর হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাই এ ক্ষেত্রে বস্তিবাসীদের সম্পদ। অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল বলছেন, “অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে লড়তে হয় বস্তি এলাকার বাসিন্দাদের। তাই তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশি। করোনা রুখতে সম্ভবত সেটাই সহায়ক হচ্ছে।’’

চায়নাটাউন রেলবস্তির বাসিন্দা পোলা রাও বলেন, “আমাদের বস্তিতে কেউ পজ়িটিভ হননি। আসলে আমাদের এলাকার মানুষ রোদ-জল-বৃষ্টিতে অভ্যস্ত হওয়ায় অসুস্থ কম হন।” শান্তিনগর বস্তির কে গণেশের আবার ব্যাখ্যা, “বস্তির মানুষ এখন কাজের অভাবে ঘরেই বসে রয়েছে। বাইরে যাতায়াত কম। ফলে, সংক্রমণ হচ্ছে না।”

বিরোধীরা অবশ্য কম পরীক্ষার কথা বলছেন। খড়্গপুর বস্তি উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক তথা সিপিএম নেতা অনিল দাস বলেন, “আসলে নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় অনেকেই উপসর্গহীন হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” একই সুরে বিজেপির শহর বিধানসভা পর্যবেক্ষক অভিষেক অগ্রবালের বক্তব্য, “পুরসভা বা স্বাস্থ্য দফতরকে দেখছি না কোনও বস্তিতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত র‌্যাপিড পরীক্ষা করছে।”

শহরের তৃণমূল বিধায়ক তথা পুর-প্রশাসক প্রদীপ সরকার যদিও বলছেন, “বস্তির মানুষ তুলনায় বেশি সচেতনও। আমরা যেমন র‌্যাপিড টেস্ট কিট পাচ্ছি, সেই মতো গণ্ডিবদ্ধ এলাকা ধরে পরীক্ষা করাচ্ছি।” পজিটিভের সংখ্যা কম হওয়ায় রেলবস্তিতে গণ্ডিবদ্ধ এলাকাও প্রায় নেই। একসময় পাঁচবেড়িয়ায় করোনার বাড়বাড়ন্ত হলেও সংলগ্ন অম্বেডকর কলোনির রেলবস্তি এখনও করোনা-মুক্ত। স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ প্রসাদ বলেন, “আমাদের বস্তির মানুষ অনেক সচেতন। পাঁচবেড়িয়ায় সংক্রমণ ছড়ানোর সময় তো বস্তিতে ঢোকা-বেরনোর পথ বন্ধ করে আমরাই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছি।”

Coronavirus in West Bengal Kharagpur Slums
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy