Advertisement
২০ মে ২০২৪
প্রতিষেধক বাজারে এসেছে ঠিকই। কিন্তু তার জন্য মাস্ক না পরার ‘ঔদ্ধত্য’ দেখাচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা নিজেদের তো বটেই, অন্যদেরও সুস্থ ভাবে বাঁচার মৌলিক অধিকার খর্ব করছেন।
Corona

‘আরও কত মানুষের মৃত্যু হলে তবে মাস্ক পরব আমরা!’

দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে—‘যাঁরা জনসমক্ষে মাস্ক পরছেন না, তাঁরা অন্য নাগরিকের মৌলিক অধিকার (জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার) খর্ব করছেন।’

অনাবৃত: গড়িয়াহাটে চৈত্র সেলের কেনাকাটায় অনেকের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। (উপরে ডান দিকে) মুখের বদলে মাস্কে থুতনি ঢেকেছে এক বাস কন্ডাক্টরের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অনাবৃত: গড়িয়াহাটে চৈত্র সেলের কেনাকাটায় অনেকের মুখেই মাস্কের বালাই নেই। (উপরে ডান দিকে) মুখের বদলে মাস্কে থুতনি ঢেকেছে এক বাস কন্ডাক্টরের। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী (নীচে বাঁ দিকে) শিয়ালদহ চত্বরে এক যাত্রীর মাস্ক নেমেছে থুতনিতে। (নীচে ডান দিকে) মাস্ক নামিয়েই হাতিবাগানে সেলের ভিড়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫৮
Share: Save:

প্রতিষেধক বাজারে এসে গিয়েছে। অতএব, এ বার করোনা সংক্রমণকে কাবু করা যাবে।— যাঁরা এই ভ্রান্ত ধারণায় ভুগছেন, তাঁরা শুধু নিজেদের জন্যই নয়, অন্যের জন্যও বিপদ ডেকে আনছেন। দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা প্রতিদিন যেখানে পুরনো রেকর্ড ভাঙছে, সেই পরিস্থিতিতে এই সতর্কবার্তাই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা বার বার একটা কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, মাস্ক পরতেই হবে। না হলে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলানো যাবে না বলেই আশঙ্কা তাঁদের।

এক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বলা হচ্ছে সংক্রমণ শুরুর প্রথম দিন থেকে। কিন্তু তার পরেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সে দিকে কোনও নজর নেই। জানা নেই যে, আরও কত মানুষের মৃত্যু হলে তবে মাস্ক পরব আমরা! পুরো পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এবং দুর্ভাগ্যজনকও বটে।’’ সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণ হিসেবেই মাস্ক পরা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁদের মত, এ ক্ষেত্রে মাস্ক না পরাটা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় হতে পারে না। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যে স্বাধীনতা অন্যের জীবনের সুরক্ষাকে বিপন্ন করে, অন্যের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব করে, সেই স্বাধীনতা সত্যিই প্রশ্নযোগ্য।’’

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞেরা সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গকেই ফের মনে করিয়ে দিচ্ছেন। যেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছে—‘যাঁরা জনসমক্ষে মাস্ক পরছেন না, তাঁরা অন্য নাগরিকের মৌলিক অধিকার (জীবন ও স্বাস্থ্যের অধিকার) খর্ব করছেন।’

কেন প্রতিষেধক বাজারে এলেও মাস্ক পরা উচিত, তার কারণ ব্যাখ্যা করে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষেধক শরীরে ৭০ শতাংশ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারছে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা কমাতে মাস্ক পরা উচিত। নির্মলবাবুর কথায়, ‘‘যাঁরা এখনও প্রতিষেধক নেননি, তাঁদের তো মাস্ক পরতেই হবে। এমনকি যাঁরা প্রতিষেধক নিয়েছেন, তাঁদেরও মাস্ক পরতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মনে করছে, প্রতিষেধকের মাধ্যমে শরীরে কতটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে, সে ব্যাপারে আরও তথ্য প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তারাও মাস্ক পরা ও অন্যান্য কোভিড-বিধি পালনের উপরে জোর দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, সোমবার পর্যন্ত দেশের প্রায় সাড়ে ১০ কোটি নাগরিককে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সর্বশেষ তথ্য (২০১৯ সাল) অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫ কোটি। এক ভাইরোলজিস্টের কথায়, ‘‘অর্থাৎ, এখনও পর্যন্ত দেশের মাত্র আট শতাংশ নাগরিককে প্রতিষেধকের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশেরই এখনও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

আর এই সংক্রমণ রোখার অন্যতম পথই হল মাস্ক পরা। যাতে সংক্রমিতের হাঁচি-কাশি বা উচ্চস্বরে কথা বলার জন্য নিঃসৃত ড্রপলেট মুখ-নাকের মাধ্যমে অন্যের শরীরে প্রবেশ না করতে পারে। ‘ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ফর ভাইরোলজি’-র প্রেসিডেন্ট এবং ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমি’-র এমেরিটাস বিজ্ঞানী অনুপম বর্মা জানাচ্ছেন, কেউ মাস্ক পরে থাকলে এমনিতেই ৭৫-৮০ শতাংশ সুরক্ষিত। তাঁর কথায়, ‘‘ওই ব্যক্তি যাঁর সংস্পর্শে আসছেন, তিনিও যদি মাস্ক পরে থাকেন, তা হলে এই সুরক্ষার হার বেড়ে হয় প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ। সঙ্গে দূরত্ব-বিধি ও হাত পরিষ্কার রাখতে পারলে এই সুরক্ষার হার প্রায় ৯৫-৯৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। ফলে মাস্ক বাদ দেওয়া যাবে না।’’

কিন্তু তার পরেও জনগোষ্ঠীর বড় অংশের মধ্যে মাস্ক না পরার ‘ঔদ্ধত্য’ দেখা যাচ্ছে বলে আক্ষেপ বিশেষজ্ঞদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus in West Bengal COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE