সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে মিলছে না প্রতিষেধক, তার নোটিস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
এ বার ‘আশা’তেও ঘাটতি!
করোনাকে রুখতে কোভিড-বিধি মেনে চলার পাশাপাশি প্রতিষেধক নেওয়ার উপরে জোর দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, যত বেশি সংখ্যক মানুষ করোনার প্রতিষেধক নেবেন, তত ‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া প্রতিষেধক নেওয়ার পরেও কেউ সংক্রমিত হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা ততটা সঙ্কটজনক না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু শেষ কয়েক দিন ধরে রাজ্যের সেই প্রতিষেধকের ভাঁড়ারেই টান পড়েছে!
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারাও। প্রতিষেধকের ভাঁড়ার ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের কাছে বার বার আবেদন করেছে রাজ্য। এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, বঙ্গের জন্য ২০ লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধক বরাদ্দ করা হলেও তা আসতে পারছে না। কারণ প্রতিষেধক তৈরি করতেও খানিকটা সময় লাগছে। কিন্তু রাজ্যে আচমকা প্রতিষেধকের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে ৪ লক্ষ ডোজ় দেওয়া হচ্ছে। সোমবার সেই কোভিশিল্ড প্রতিষেধক রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। অন্য দিকে, সঙ্কট কাটাতে রবিবার বিভিন্ন জেলায় থাকা ১১ হাজার ৬৫০ ডোজ় প্রতিষেধকও আনানো হয়েছে কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল স্টোরে। সেখান থেকেই তা পুনরায় বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রয়োজনমতো পাঠানো হবে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘কবে পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হবে, সেটাও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটে মাসে ৬ কোটি ডোজ় কোভিশিল্ড প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে। সেটি এপ্রিলের মধ্যে বাড়িয়ে ৯ কোটি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ওই সংস্থায় আগুন লাগার পরে সেই পরিকল্পনা ব্যাহত হয়েছে। মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথমের মধ্যে তারা ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছবে বলে জানা গিয়েছে।’’
প্রতিষেধকের এই সঙ্কট ক্রমশ প্রকট হচ্ছে শহরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতিষেধক কেন্দ্রে গিয়ে লাইন দিলেও এক সময়ে জানানো হচ্ছে যে প্রত্যেককে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সূত্রের খবর, কোভিশিল্ডের একটি ভায়াল থেকে ১০টি ডোজ় হয়। কোভ্যাক্সিনে সেটি ২০টি ডোজ় হয়। একটি ভায়াল খোলার পরে প্রায় চার ঘণ্টা পর্যন্ত সেটি ব্যবহারযোগ্য থাকে। এক সরকারি হাসপাতালের কর্তার কথায়, ‘‘প্রতিষেধকই যেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যায় মিলছে না, সেখানে ডোজ় নষ্টের বিষয়ই আসে না।’’
একই হাল বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও। পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফে সুদীপ্ত মিত্র জানাচ্ছেন, শুক্রবার কোভ্যাক্সিনের ৪০টি ভায়াল মিলেছিল। তা থেকে রবিবার পর্যন্ত ৪০০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে প্রতিষেধকের অভাবে দীর্ঘক্ষণ তা দেওয়া বন্ধ রাখতে হয়। শেষে ৩০টি ভায়াল মেলায় পুনরায় প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হয়। একই অবস্থা আইএলএস হাসপাতালেরও। ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর বলছেন, ‘‘প্রতিদিন দেড় হাজার লোককে প্রতিষেধক দেওয়া হলেও তা এখন এক হাজারে নেমে এসেছে। যাঁরা আমাদের তিনটি হাসপাতাল থেকে কোভিশিন্ড পেয়েছিলেন, তাঁদের ১৬ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া শুরু হবে। কিন্তু ওই প্রতিষেধক অমিল। এখন প্রথম ডোজ় কোভ্যাক্সিন দেওয়া হচ্ছে।’’
সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় সল্টলেক ও মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতালে আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য প্রতিষেধক দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। ওই হাসপাতাল গোষ্ঠীর কর্তা তথা বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি রূপক বড়ুয়ার কথায়, ‘‘করোনাকে রুখতে সমস্ত হাসপাতালই প্রতিষেধক দেওয়ার কাজে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু আচমকাই প্রতিষেধকের জোগানে ঘাটতির বিষয়টি অত্যন্ত চিন্তার। কিছু প্রতিষেধক রাজ্যে আসছে, তবে সেটা দিয়ে এক-দু’দিন চলবে।’’
চিন্তায় পড়েছেন প্রথম ডোজ় নেওয়া প্রাপকেরাও। অনেকেই নির্ধারিত দিনের আগে জানতে পারছেন যে, তাঁর দ্বিতীয় ডোজ় এখনই হচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যে প্রতিষধকের প্রথম ডোজ় নিয়েছিলেন সেটির সরবরাহ নেই।
তবে যে কেন্দ্র থেকে প্রাপক প্রথম ডোজ় নিয়েছেন, সেখান থেকেই যে দ্বিতীয় ডোজ়ও নিতে হবে, এমনটা নয় বলেই জানাচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই। তিনি বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ডোজ়ের সময়ে ওই কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষেধকটি যদি না থাকে, তবে অন্য যে কোনও সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই প্রতিষেধক নেওয়া যাবে। তবে প্রাপককে প্রথম ডোজ়ের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy