Advertisement
০৫ মে ২০২৪
টিকা পেতে মরিয়া চেষ্টা
Nabanna

তৃতীয় ঢেউ নিয়ে চিন্তা নবান্নের

টিকা পর্বের শুরু থেকে গোটা প্রক্রিয়া কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের বিধি অনুযায়ী অগ্রাধিকারের তালিকা মেনে তাদের কাজ করতে হয়েছে

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ০৫:০৮
Share: Save:

রাজ্য সরকার প্রতিষেধক দানের হার বাড়াতে চাইলেও জোগানে ভাটার মতো নানা কারণে টিকাকরণ চলছে কার্যত শম্বুকগতিতে। এই অবস্থায় করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ নিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা খুবই শঙ্কিত। তাঁদের চিন্তা, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতেই কার্যত নাজেহাল হতে হচ্ছে। এর পরে বঙ্গে তৃতীয় ঢেউ এলে কী হবে!

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই জানাচ্ছেন, তুলনায় অল্পবয়সিদের উপরে আছড়ে পড়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ। অবিলম্বে ১৮ বছরের বেশি বয়সের প্রত্যেককে টিকার আওতায় আনতে না-পারলে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কা সত্য হতে বেশি সময় লাগবে না। তাই কেন্দ্রের টিকা-নীতিকে দোষারোপ করার পাশাপাশি প্রতিষেধক সংগ্রহের মরিয়া চেষ্টা চালাতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকেই।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ মাথাচাড়া দেওয়ার আগে থেকেই সার্বিক টিকা কর্মসূচিতে জোর দিচ্ছিল রাজ্য। কিন্তু টিকা পর্বের শুরু থেকে গোটা প্রক্রিয়া কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের বিধি অনুযায়ী অগ্রাধিকারের তালিকা মেনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, ওই পর্যন্ত ঠিক ছিল। সমস্যা দেখা দেয় সার্বিক টিকাকরণের প্রশ্নে। প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, ষাটোর্ধ্বদের পরে ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা পর্ব শুরু হতেই প্রতিষেধকের ঘাটতি দেখা দেয়। চলতি মাসের গোড়ায় ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও এখনও তার অগ্রগতি সামান্যই।

তুলনায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ৬০ বছরের নীচের মানুষজন। এই পরিস্থিতিতে কত দিনে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে টিকার আওতায় আনা যাবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না কেউই। সরকারি তথ্যই বলছে, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়ঃসীমার ৪ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২০০ জনকে টিকা দেওয়া গিয়েছে। ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে এখনও প্রায় ৫০% মানুষের টিকাকরণ বাকি। সব মিলিয়ে রাজ্যের ৭ কোটি ১৭ লক্ষ বাসিন্দাকে প্রতিষেধকের আওতায় আনার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ-পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন মাত্র ১ কোটি ২৪ লক্ষ মানুষ।

দেশীয় উৎপাদকদের পাশাপাশি বিশ্ব দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশি উৎপাদকদের কাছ থেকেও টিকা কেনার প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্য। দেশীয় ও বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে কত টিকা পাওয়া যাবে, তা বুঝে নিয়ে ক্রয়-প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু তাতেও কোভিডের তৃতীয় ঢেউ ঠেকানো যাবে কি না, প্রশাসনিক কর্তা থেকে অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। কারণ, ক্রয়-প্রক্রিয়া শুরুর পরে রাজ্যে টিকা এসে পৌঁছতে চার-পাঁচ মাস লেগে যেতে পারে বলে অনুমান করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তত দিনে কোভিডের সংক্রমণ কোন খাতে বইবে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রবল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চরিত্র বদলে করোনা নতুন রূপে বেশি মানুষকে আক্রমণ করায় নতুন ঢেউ তৈরি হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়। কারণ, নতুন সংক্রমিতেরা কারও না-কারও সংস্পর্শে আসেন। এ ভাবেই সংক্রমণের পরিধি বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউয়ে বয়স্কেরা বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছিলেন। টিকা পর্ব শুরুর পর থেকে এ-পর্যন্ত বয়স্কদের অনেকেই টিকা পেয়েছেন। তাই এখন সংক্রমণ বাড়ছে অল্পবয়সিদের মধ্যে। এই ধারা চলতে থাকলে ১৮ বছরের

নীচের বাসিন্দাদের মধ্যেও সংক্রমণ শুরু হতে পারে। তাই যে-ভাবেই হোক, বাড়াতে হবে টিকার বৃত্ত। ক্রমে শিশুদেরও প্রতিষেধকের আওতায় আনার কথা ভাবতে হবে সরকারকে।

শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, “তৃতীয় ঢেউ আসবেই। সাধারণত প্রতিটি ঢেউয়ের পরে সাময়িক একটা ইমিউনিটি তৈরি হয়। কমবেশি সাড়ে তিন মাস এই সুবিধা থাকে। তার মধ্যে অন্তত ৮০ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়া গেলে তৃতীয় ঢেউয়ের বৃত্ত ছোট হতে পারে। আবার ১১০ কোটি মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় আনা গেলে সংক্রমণের ছোট্ট প্রভাব পড়তে পারে। এখন সংক্রমণ হ্রাসের সাময়িক ইঙ্গিতে উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই। প্রতিষেধকের বৃত্ত বাড়াতে না-পারলে বিপদ অনেক বেশি।” সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্তের বক্তব্য, যে-ভুলভ্রান্তি হয়েছে, তা সামলাতেই কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। ফলে যত দ্রুত সম্ভব ৬০-৭০ শতাংশ মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় আনা জরুরি। ‘‘ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট চলে আসায় সমস্যা হচ্ছে। কমবয়সি আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। তাই নতুন ঢেউয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না,’’ বলেন দেবকিশোরবাবু। এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষের কথায়, “তৃতীয় ঢেউ এড়ানো যাবে না। বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রতিষেধকের আওতায় আনা গেলে সেই ঢেউয়ের তেজ কিছুটা কমবে। ফলে যত দ্রুত সম্ভব, সার্বিক টিকাকরণ জরুরি। সরকারের তরফে এ ব্যাপারে যে-কোনও উদ্যোগকে স্বাগত।” করোনার থাবা এড়াতে সাধারণ মানুষকে যথাযথ ভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।

এত দিন টিকা নিয়ে কেন্দ্রের কাছে বার বার আবেদন-নিবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ঘাটতি মেটাতে প্রতিষেধকের জোগান বাড়ানো, প্রয়োজনে বিদেশি টিকা আনা, রাজ্যকে প্রতিষেধক কিনতে অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরপর চিঠি লিখেছেন তিনি। টিকা তৈরির জন্য রাজ্যে জমি দেওয়ার কথাও জানিয়েছে সরকার। কেন্দ্র সময়মতো এই সব দাবি মানলে রাজ্যের পক্ষে ভাল হত বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এক কর্তা বলেন, “দেশের টিকা-নীতি ঠিক খাতে প্রবাহিত হলে হয়তো এখনই এমন আশঙ্কা তৈরি হত না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE