Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

কম সংক্রমণের জেলায় এ বার টিকার উদ্যোগ

যেখানে আক্রান্ত কম, সেখানকার বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দিয়ে রাখলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় করোনা বেশি ছড়াতে পারবে না বা ছড়ালেও মারণ রূপ নিতে পারবে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২১ ০৬:২৩
Share: Save:

অনেকটা দাবানল ঠেকানোর কৌশলে এ বার করোনা প্রতিরোধে নামতে চায় কেন্দ্র। এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা করছে এবং পরামর্শ দিচ্ছে গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)।

‘‘জঙ্গলে দাবানল শুরু হলে যে-দিকে একটিও গাছ পোড়েনি অথচ দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই দিকটায় আগুন আটকানোর চেষ্টা চালানো হয়। মাঝখানের অংশের গাছ কেটে, পুড়িয়ে, না-পোড়া অংশের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় পুড়তে থাকা অংশের। কোভিড সংক্রমণ রুখতে এ বার আমরাও সেই পথে হাঁটব। তার মডেল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে,’’ বলেন আইসিএমআরের ‘এপিডিমিয়োলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’-এর প্রধান সমীরণ পণ্ডা। ঠিক হয়েছে, করোনা আটকাতে দেশের এমন জেলা ও ব্লকগুলিকে বেছে নেওয়া হবে, যেখানে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশেরও কম। টিকাকরণের ক্ষেত্রে সেই ‘কম সংক্রমণ’-এর জেলা ও ব্লকগুলি অগ্রাধিকার পাবে।

সমীরণবাবু জানান, যেখানে আক্রান্ত কম, সেখানকার বেশির ভাগ মানুষকে টিকা দিয়ে রাখলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় করোনা বেশি ছড়াতে পারবে না বা ছড়ালেও মারণ রূপ নিতে পারবে না। যেখানে আক্রান্ত বেশি, সেই এলাকাগুলিতে জোর দিতে হবে চিকিৎসার উপরে। তবেই রোগ নিয়ন্ত্রণ হবে। প্রয়োজনের তুলনায় এখনও দেশে টিকা অনেক কম। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির সব দরজা খুলে দিয়ে এবং বরাত দিয়েও টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ঠিক হয়েছে, জেলা ও ব্লকগুলিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভাগ করে টিকাকরণ কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হবে। তার জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে আইসিএমআর।

এ ছাড়াও এলাকা বা ওয়ার্ডভিত্তিক ‘রিং ফেন্সিং’ পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে আইসিএমআরে চিন্তা-ভাবনা চলছে। সমীরণবাবু বলেন, ‘‘স্মল পক্সের টিকাকরণে এই পদ্ধতি খুব সফল হয়েছিল। কোনও এলাকায় কোনও বাড়িতে কারও স্মল পক্স হলে তিনি এবং তাঁর পরিবার বাদ দিয়ে আশপাশের সব বাসিন্দাকে ভ্যাকসিন বা টিকা দিয়ে দেওয়া হত। এই ভাবে সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল। করোনার ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি চালু হতে পারে।’’

টিকার পাশাপাশি ভাইরাস রুখতে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে মাস্ক পরা এবং জমায়েত এড়িয়ে চলার উপরে গুরুত্ব দিচ্ছে আইসিএমআর। জানিয়েছে, কুম্ভমেলা ও হজযাত্রীদের প্রান্তিক স্টেশনগুলিতে টিকা নিয়ে তবেই প্রবেশের ছাড়পত্র দিতে বলেছিল তারা। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।

সমীরণবাবু বলেন, ‘‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চে আইসিএমআরের একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে আমরা জানিয়েছিলাম, কুম্ভমেলা এবং হজের প্রান্তিক স্টেশনে মাস্ক পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাস্কের নিয়ম ওই সব জায়গায় বলবৎ করতে সমস্যা হতে পারে। তাই পুণ্যার্থীদের টিকাকরণের উপরে জোর দিলে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।’’

এই নিয়ম চালুর জন্য আইসিএমআর কেন্দ্রের উপরে চাপ সৃষ্টি করেনি কেন? ‘‘কোনও ব্যাপারে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া বা জোর করার এক্তিয়ার আইসিএমআরের নেই। তবে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জানুয়ারিতেই বিষয়টি সকলের সামনে আনা হয়। তার পরে শোনা বা না-শোনা সরকারের ব্যাপার। আমেরিকাতেও গবেষণা সংস্থার সব কথা শোনে না সরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Corona Vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE