গ্রামের ‘ডাগর’ বাচ্চাগুলোর দুধ খেতে বড় অনীহা, কিংবা দিন কয়েকের ছুটিতে শ্বশুরবাড়ি এসে কেমন ‘শুকিয়ে’ যাচ্ছেন গ্রামের এক জামাই। তেমন প্রত্যন্ত কোনও বসত নয়, শান্তিনিকেতনের প্রায় লাগোয়া আদিবাসী প্রধান ধুলটিকুড়ি গ্রামে এমন সব ‘ঘটনা’র জন্য সংস্কারকেই প্রশ্রয় দিয়েছিলেন গ্রামবাসীদের অনেকে। গ্রামের মাঝি-হাড়াম বা মোড়লেরও নিদান ছিল— এ সবের জন্য ‘দায়ী’ ধুলটিকুড়িরই মাঝবয়সী এক মহিলা।
তবে অভিযোগের আঙুল তুলেই ক্ষান্ত হয়নি গ্রামবাসীরা। শনিবার, গ্রামে সালিশি বসিয়ে ‘ডাইনি’ চিহ্নিত করে ফতোয়া জারি হয়েছিল, ওই মহিলা ও তাঁর স্বামীকে ‘এক কাপড়ে’ গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। সালিশির রায় শুনে আপত্তি জানিয়েছিলেন ওই আদিবাসী দম্পতির এক পড়শি। ওই দম্পতির মতো গ্রামের মাতব্বরদের চড়-কিল-ঘুঁষির সামনে পড়তে হয় তাঁকেও। আহত তিন জনকেই ভর্তি করা হয়েছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। ওই ঘটনায় গ্রামের আট বাসিন্দার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে দায় না এড়িয়ে তৎপর হয়েছে পুলিশ। রাতেই শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ কঙ্কালিতলা পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে হানা দিয়ে এক মহিলা-সহ ৪ জনকে আটক করেছে।
ধুলটিকুড়ির ঘটনা অবশ্য এলাকায় নতুন নয়। বোলপুরের কাছেই বিনোদপুর গ্রামেও সম্প্রতি একটি পরিবারের উপরে একই অভিযোগে নেমে এসেছিল গ্রামবাসীদের একাংশের ‘শাস্তি’। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, বিনোদপুরের ঘটনার পরেই এলাকায় সচেতনতা শিবির করা হয়েছে। তবে তাতেও যে সুরাহা হয়নি এ দিন ধুলটিকুড়ির ঘটনা তারই প্রমাণ।
এ দিন বিকেলে হাসপাতালের শয্যা থেকে প্রহৃত ওই মহিলা বলছেন, ‘‘গ্রামে কারও অসুখ-বিসুখ হলেই আমার দিকে ওদের নজর পড়ত। ডাইনি বলত। সভার সিদ্ধান্তে আপত্তি জানাতেই এ দিন ওরা আমাদের মারধর শুরু করল।’’ তবে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, ‘ডাইনি’ অপবাদ দেওয়াটা নিছক ‘অজুহাত’। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রামে ওই আদিবাসী পরিবারটি বেশ স্বচ্ছল। পড়শিদের অনেকেরই তাই চোখ টাটাচ্ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy