Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কুণালের চিঠি নিয়ে তদন্তে নির্দেশ কোর্টের

জেলে বসে এক পাতার একটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন আদালতে। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন বহু নথি। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে পাঠিয়েছিলেন তিনটি সিডি-ও। গত বছর অগস্ট মাসে প্রেসিডেন্সি জেলে বসে লেখা ওই অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, কারা কারা কী ভাবে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

জেলে বসে এক পাতার একটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন আদালতে। সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন বহু নথি। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে পাঠিয়েছিলেন তিনটি সিডি-ও। গত বছর অগস্ট মাসে প্রেসিডেন্সি জেলে বসে লেখা ওই অভিযোগপত্রে জানিয়েছিলেন, কারা কারা কী ভাবে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। জানিয়েছিলেন, কারা কারা সারদা থেকে কী কী সুবিধা নিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছিলেন, তিনি যদি অভিযুক্ত হন, তাঁকে যদি গ্রেফতার করা হয়, তা হলে এঁদেরও কেন গ্রেফতার করা হবে না?

তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষের করা সেই অভিযোগপত্র ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অরবিন্দ মিশ্র শুধু গ্রহণই করেনি, ওই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে, তদন্ত করে তার রিপোর্ট মামলার কেস ডায়েরির সঙ্গে জমা দেওয়ার জন্য সিবিআইকে নির্দেশও দিয়েছেন। সূত্রের খবর, ওই অভিযোগপত্রে একাধিক ‘প্রভাবশালী’-র নাম উল্লেখ করেছেন কুণাল।

সূত্রের খবর, বিভিন্ন সময়ে সারদা কর্তার সঙ্গে কারা কারা বৈঠক করেছেন, কারা তাঁর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন, কারা তাঁর অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রশংসা করেছেন, সব ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করেছিলেন কুণাল। আদালতে অভিযোগ জমা দেওয়ার সময় ওই ভিডিও ফুটেজ জমা দেওয়ারও অনুমতি চান। সেই অনুমতি আসার পরে তিনি তিনটি সিডি-তে ভরে যাবতীয় ফুটেজ বিচারকের কাছে পাঠান।

কুণালের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি জেলে বসে একটি অভিযোগপত্র আদালতে লিখে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু, বিষয়টি বিচারাধীন। তাই বিশদে কিছু বলতে পারব না।’’

‘এ’ থেকে ‘জেড’— হাতে লেখা অভিযোগপত্রে মোট ২৬টি আলাদা আলাদা পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন কুণাল। সেখানে সমাজের যে প্রভাবশালীদের নাম উল্লেখ করা আছে, তার মধ্যে রাজনৈতিক নেতা, পুলিশ অফিসার, অভিনেতা-অভিনেত্রী ছাড়াও বেশ কিছু সাংবাদিকের নাম রয়েছে। যাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে সারদার কাছ থেকে টাকা ও সুবিধা নিয়েছেন। উল্লেখ রয়েছে বেশ কিছু সংবাদপত্র, সংবাদমাধ্যম, ফুটবল ক্লাবেরও। সুদীপ্ত সেন কী ভাবে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে লাইসেন্স, সুবিধা পেয়েছেন তারও হিসেব দিয়েছেন কুণাল।

অভিযোগপত্রে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, সারদার এজেন্টদের নিয়ে সুদীপ্ত যে সব সম্মেলন করতেন, সেখানে কোন কোন প্রভাবশালী যেতেন এবং তাঁরা সেখানে কী ভাবে বক্তৃতা দিয়ে এজেন্টদের উদ্বুদ্ধ করতেন। কুণালের প্রশ্ন, এঁদের কেন গ্রেফতার করা হবে না? রাজ্যকে সারদা সংস্থা সম্পর্কে সতর্ক করে কেন্দ্র চিঠি পাঠানোর পরেও প্রশাসনের যে কর্তারা নিজেদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সারদাকে সাহায্য করেছেন, তাঁরাও কেন ছাড় পাবেন, সে প্রশ্নও অভিযোগপত্রে তুলেছেন তিনি।

কুণালের প্রশ্ন, মিডিয়ায় চাকরি করার অপরাধে তাঁকে যদি আড়াই বছর জেলে কাটাতে হয়, তা হলে এঁদের কেন ধরবে না সিবিআই?

জেল সূত্রের খবর, কোনও বন্দি জেলে বসে বাইরে কাউকে চিঠি দিতে চাইলে, দিতেই পারেন। বহু বন্দি এ ভাবে বাইরে চিঠি পাঠান। কিন্তু যে বন্দিদের উপরে বেশি নজর থাকে, যাঁদের বাইরে পাঠানো চিঠি থেকে বিতর্ক হতে পারে, সেই বন্দিদের লেখা চিঠির বিষয়বস্তু পড়ে দেখা হয়। প্রয়োজনে তাতে কাটছাঁট করে তবেই প্রাপকের কাছে পাঠান জেল কর্তৃপক্ষ। এটাই দস্তুর। কুণালকে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। বার বার আদালত চত্বরে এসে তিনি মুখ খুলেছেন। বিব্রত হয়েছে রাজ্যের শাসক তৃণমূল। কুণাল যাতে আদালত চত্বরে মুখ খুলতে না পারেন, তার জন্য এক সময়ে ভ্যানের গায়ে বিকট চাপড় মেরে শব্দও করতে শুরু করেছিল পুলিশ। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্কও হয়েছে। এ হেন কুণালের চিঠি যে কাটছাঁট করেই পাঠানো হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু সূত্রের খবর, কুণালের এই চিঠি বা অভিযোগপত্রে কলম ছোঁয়াতে পারেননি জেল কর্তারা। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী, যে আদালতের নির্দেশে ওই ব্যক্তি জেলে বন্দি, তিনি সেই আদালতে চিঠি পাঠাতে চাইলে তাতে কাঁচি চালানোর ক্ষমতা কারও নেই। জেল কর্তৃপক্ষেরও নেই। ফলে, কুণালের অভিযোগপত্র হুবহু পৌঁছে যায় বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের কাছে। সিল করা খামের সেই চিঠি আদালতেই খোলেন বিচারক। সিবিআইয়ের জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kunal Ghosh saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE