Advertisement
E-Paper

রাজ্যের স্বার্থে দিল্লি যেতে রাজি বাম-কংগ্রেস

কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লিতে সর্বদলীয় দরবার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে শনিবার বিধানসভায় কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া এবং সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্য জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের স্বার্থে সকলে মিলে দিল্লি যেতে তাঁরা প্রস্তুত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৮:৪৮
ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লিতে সর্বদলীয় দরবার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে শনিবার বিধানসভায় কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া এবং সিপিএমের তন্ময় ভট্টাচার্য জানিয়ে দিলেন, রাজ্যের স্বার্থে সকলে মিলে দিল্লি যেতে তাঁরা প্রস্তুত। কংগ্রেস এবং বাম শিবিরের ব্যাখ্যা, মমতার প্রস্তাবে তাঁদের সায় আসলে রণকৌশল। কেন্দ্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। সব দলের প্রতিনিধি দিল্লি গিয়ে যদি তা বাড়াতে পারেন, তা হলে কৃতিত্বের ভাগ বিরোধীরাও নিতে পারবে। আর কেন্দ্র ওই দাবি না মানলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য মমতাকে প্রকাশ্যে অনুরোধ করা হবে। তিনি সেই অনুরোধ না রাখলে বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর সমঝোতা রয়েছে বলে জোরদার প্রচার করা হবে।

বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে মানসবাবু বিধানসভায় অভিযোগ করেন, ইউপিএ জমানায় ৬৬টা কেন্দ্রীয় প্রকল্প ছিল। মোদী সরকার তা ২৬-এ নামিয়েছে। আইসিডিএস, মিড ডে মিল-সহ ১৭টি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়েছে তারা। এর প্রতিবাদ প্রয়োজন। খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর প্রতিবাদে ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সুতরাং, এখন প্রতিরক্ষা, ওষুধ, স্যাটেলাইটে এফ়ডিআইয়ের জন্য মোদী সরকারের বিরুদ্ধেও তাঁর প্রতিবাদ করা উচিত। মানসবাবুর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী স্পিকারের কাছে আবেদন জানান, যাতে তিনি সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের দিল্লি যাওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। হবে তো? নাকি শুধুই বিবৃতি?’’ সভার বাইরে মানসবাবু বলেন, ‘‘শুধু চিঠি দিলে হবে না। মোদী সরকারের দেশবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ চাই।’’ মানসবাবুর সংযোজন, ‘‘উনি (মুখ্যমন্ত্রী) কী করবেন জানি না। আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত। তবে আগ বাড়িয়ে বলব না, খিদে পেয়েছে, খেতে দিন। উনি নিমন্ত্রণ করছেন কি না, দেখব।’’

সিপিএম বিধায়ক তন্ময়বাবুও এ দিন বলেন, ‘‘সাড়া দিচ্ছি মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে। চলুন একসঙ্গে রাজ্যের স্বার্থে দিল্লিতে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হলে আমরা যাব। টেবিলের তলা দিয়ে নয়, বাংলার গলার জোর দিয়েই আদায় করব আমাদের স্বার্থ।’’ মানসবাবু কৃষি বিপণন, শিশু কল্যাণ, খাদ্য ও সরবরাহ, সংখ্যালঘু-সহ ১৬টি দফতরের ২০১৫-’১৬ আর্থিক বর্ষের হিসেব পেশ করে দেখান, প্রতি ক্ষেত্রেই বাজেট বরাদ্দের চেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ কম। মানসবাবুর বক্তব্য, এর অর্থ হয় অর্থমন্ত্রী বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দ শেষ পর্যন্ত ওই দফতরগুলিকে দেননি, বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা টাকা পেয়েও খরচ করতে পারেননি। একই অভিযোগ করেন কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোও। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বিধানসভায় বলেন, ‘‘বাজেট বরাদ্দের চেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ যে সব ক্ষেত্রে কম হয়েছে, সেখানে কেন্দ্র তার দেয় অর্থের চেয়ে কম অর্থ দিয়েছে।’’ অর্থমন্ত্রী উদাহরণ দেন, সংখ্যালঘু দফতরকে কেন্দ্রের ৯৭৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা দিয়েছে ২২৩ কোটি টাকা।

অমিতবাবুর এই জবাবে কংগ্রেস সন্তুষ্ট নয়। তাদের বক্তব্য, বাম আমলে অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও তথ্যের নানা কারসাজি করে রঙিন বাজেট পেশ করতেন। কিন্তু বাস্তবে রাজ্যবাসীর জীবনে তার প্রতিফলন ঘটত না। মানসবাবু পরে সভার বাইরে বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী, প্রতি বছর ক্যাগ রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করা বাধ্যতামূলক। অথচ, ২০১৩ থেকে ’১৬ পর্যন্ত তিনটি আর্থিক বছরের ক্যাগ রিপোর্ট সরকার বিধানসভায় পেশ করেনি। তাই অর্থমন্ত্রীর দেওয়া ওই তথ্য আমরা জানতে পারিনি।’’ সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার প্রসঙ্গেও সরকারকে বিঁধেছেন মানসবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারি কর্মীদের বেতন এবং পেনশন খাতে বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। তা হলে কী বলবেন? ক্ষমা করুন? সরকার মহার্ঘ ভাতা দিতে পারছে না? বেতন কমিশন মানছেন কি না, সেটাও জানাবেন।’’ বাম জমানা নিয়েও ঈষৎ খোঁচা দিতে ছাড়েননি মানসবাবু। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর সামনেই তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার আর্থিক শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছামতো ঋণ নিয়েছে। সুজনবাবুদের যুক্তি, তাঁরা একটা মাত্রা অবধি ঋণ নিতেন। ৩৪ বছরে তাঁদের নেওয়া ঋণকে ছাপিয়ে গিয়েছে তৃণমূল জমানার পাঁচ বছরের ঋণ। কিন্তু ঋণ নেওয়ার প্রতিযোগিতায় কে প্রথম তা নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই।’’ বিনিয়োগের অভাব নিয়ে কটাক্ষ করে সিপিএম বিধায়ক তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাংলার অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে। লুঠের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজ্য। ২০ বছর এই বিধানসভায় ছিলাম। কখনও বিধায়কদের এত দামি গাড়ি দেখিনি। বহু বিধায়ক কত টাকা করেছেন! কিন্তু কোনও উৎপাদন বা বিনিয়োগ নেই।’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি তথা বিধায়ক দিলীপ ঘোষের পরামর্শ, তাঁদের দল শাসিত রাজ্যগুলির সরকার এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বাজেট করলে এ রাজ্য উপকৃত হবে। সে ক্ষেত্রে বিজেপি-ও রাজ্য বাজেট সমর্থন করতে পারবে। এ দিন তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে বিষয় থেকে সরে ব্যক্তিগত আবেগ উগরে দেন। তাই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে মৃদু ভর্ৎসনা করেন।

cpim congress alliance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy