Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Partha Chatterjee & CPM

৩ লাখ ভোটারের বেহালা পশ্চিমে বিধায়ক পার্থের ইস্তফা চেয়ে ‘গণভোট’ নিল সিপিএম, ভোট পড়ল ৪৬১!

বেহালার অনেক সিপিএম কর্মীর কাছেই এই ‘গণভোট’ অস্বস্তির হয়ে উঠেছে। শুনতে হচ্ছে টীকাটিপ্পনীও। তবে বেহালা পশ্চিমের সিপিএম নেতৃত্ব ৪৬১ ভোটকে একেবারেই লজ্জাজনক বলে মানছেন না।

CPM held a referendum demanding the resignation of TMC MLA Partha Chatterjee

পার্থর পদত্যাগের দাবিতে সিপিএমের গণভোটে অংশগ্রহণ কম। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ১৬:৩৯
Share: Save:

বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রের জেলবন্দি বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে কয়েক মাস ধরেই প্রচার করছে সিপিএম। এ নিয়ে কেন্দ্রের ভোটারদের মতামত নিতে রবিবার, এপ্রিলের শেষ দিনে ‘গণভোটের’ ডাক দিয়েছিল দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। সেই ভোটের ফলাফল কী হল না-হল, তা ছাপিয়ে এখন অনেক বেশি আলোচনাযোগ্য হয়ে উঠেছে এই ‘গণভোটে’ ভোটদাতার সংখ্যা। ৩ লক্ষাধিক ভোটারের কেন্দ্রে বাম যুব সংগঠনের ডাকে ৫০০ ভোটও পড়েনি।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বেহালা পশ্চিমের ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৫ জন। সিপিএম প্রার্থী নিহার ভক্ত ৩ নম্বরে শেষ করেছিলেন। পেয়েছিলেন ৪৭ হাজার ৫০৯ ভোট। যা ছিল মোট প্রদত্ত ভোটের ২০.৪৯ শতাংশ। ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে বেহালা পশ্চিমের বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিজেপিকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন সিপিএম প্রার্থীরা। সেখানেই রবিবার সিপিএমের গণসংগঠনের ডাকা ‘গণভোটে’ রায় দিয়েছেন ৪৬১ জন। যে সংখ্যা ওই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের পার্টি সদস্য এবং সক্রিয় কর্মীর থেকেও করুণ রকমের কম। ২০২১-এর প্রার্থী নিহার অবশ্য এর একটা ব্যাখ্যা দিলেন। তাঁর মতে, ‘‘আসলে রাস্তার ওপরেই এই গণভোটটটি নেওয়া হচ্ছিল। তাই সাধারণ মানুষ এই ভোটে অংশগ্রহণ করতে লজ্জা পাচ্ছিলেন। আর, একটি মাত্র ওয়ার্ডের যুব সংগঠনের কর্মীরা এই গণভোটের আয়োজন করেছিল, তাই এই ভোটে সে ভাবে মানুষের অংশগ্রহণ হয়নি। এই গণভোট আসলে ছিল প্রতীকী।’’

নিহারের ব্যাখ্যা যা-ই হোক, এলাকার অনেক বামকর্মীর কাছেই বিষয়টি অস্বস্তির হয়ে উঠেছে। শুনতে হচ্ছে টীকাটিপ্পনীও। বেহালা পশ্চিমের তৃণমূল নেতা অঞ্জন দাসের বক্তব্য, ‘‘আসলে বেহালায় সিপিএমের কোনও জনভিত্তিই নেই। সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার জন্য কখনও লিফলেট বিলি, কখনও পোস্টার, ব্যানার হোর্ডিং দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু ওদের কৌশলেই ওদের মুখোশ খুলে গিয়েছে। গণভোট নিতে গিয়েই ওদের জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে।’’ পর্ণশ্রী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিপিএম পার্টি সদস্যের উপলব্ধি, ‘‘এ ভাবে গণভোট শব্দটা ব্যবহার না করলেই বোধহয় ভাল হত। এর সঙ্গে ভোট পড়ার সংখ্যা দেখলে সত্যিই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। প্রতীকী ভোট বললেই ভাল হত।’’

তবে বেহালা পশ্চিমের সিপিএম নেতৃত্ব ৪৬১ ভোটকে একেবারেই লজ্জাজনক বা হতাশাজনক বলে অন্তত প্রকাশ্যে মানছেন না। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেত্রী তথা বেহালা পশ্চিমের সিপিএম নেত্রী রত্না রায় মজুমদারের কথায়, ‘‘এটা তো আর সেই ভোট নয়, যে ভোটে হারা-জেতা নির্ণয় হয়। এটা আসলে প্রতীকী গণভোট। যেখানে আমাদের যুব সংগঠনের একটি ইউনিট গণভোটের আয়োজন করে এলাকার মানুষকে জানাতে চেয়েছে যে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকেই জোটবদ্ধ হতে হবে। তাই এই ভোটে কেন এত কম মানুষের অংশগ্রহণ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অমূলক।’’

৩৪ বছরের বাম জমানার আগে থেকেই, বড় সময় জুড়ে বেহালা পশ্চিম ছিল সিপিএমের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। ১৯৭৭ সালে এখান থেকে জিতেই জ্যোতি বসুর প্রথম সরকারে পরিবহণমন্ত্রী হয়েছিলেন রবীন মুখোপাধ্যায়। তার ১০ বছর আগে থেকেই এই কেন্দ্র সিপিএমের দখলে ছিল। ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত ৯টি বিধানসভা ভোটের মধ্যে ৮টিতেই (১৯৭২ ছাড়া) সিপিএম জিতেছে। ২০০১ সালে পার্থই এই কেন্দ্রে সিপিএম বিধায়ক নির্মল মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে ঘাসফুল ফোটান। সেই থেকে টানা ৫ বার তিনিই বিধায়ক। গত বছর ২৩ জুলাই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের (ইডি) হাতে গ্রেফতার হন মন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ। মন্ত্রিত্ব এবং দলীয় পদ হারালেও তিনিই বিধায়ক রয়েছেন।

সেই বিধায়ক পদ খারিজের দাবি তোলা বামেরা জনমত বুঝতে যে ‘গণভোট’ ডাকল, তার ফল কী হল? ৪৬১টি ভোটের মধ্যে ৪৩০ জন পার্থের ইস্তফা চেয়েছেন। ২৫ জন ইস্তফার দাবির বিরোধিতা করেছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ, ৯৩ শতাংশ ভোটদাতা বামেদের দাবির পক্ষে রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee CMP TMC MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE