কর্মীদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে অজস্র সংস্থায় তাঁদের শ্রমিক সংগঠন আন্দোলন করে। ধর্মঘটও ডাকে প্রায়শই। কিন্তু তাঁদের নিজেদের বেতনের টানাটানি চলতেই থাকে বছরের পর বছর! শেষ পর্যন্ত এ বার বেতন বৃদ্ধি এবং পেনশন চালুর ভাবনা এসে পড়ল সিপিএমে!
শুধুমাত্র আদর্শের টানে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়াবেন, এমন নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের দিন গিয়েছে! একে তো মান্ধাতার আমলের কায়দায় আন্দোলনের ভাবনা ভাবতে থাকায় নতুন প্রজন্মের মন টানতে অসুবিধা হচ্ছে, সিপিএম নেতৃত্ব নিজেরাই এখন মানছেন। তার উপরে সামান্য ভাতার টাকায় সর্বক্ষণের কর্মী পাওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠছে সিপিএমের কাছে। দলের ক্যাডার নীতি নিয়ে তাই নতুন করে ভাবনাচিন্তার কথা বলা হয়েছিল বিগত পার্টি কংগ্রেস থেকেই। বিশাখাপত্তনমের সেই পার্টি কংগ্রেসেই দলের সদস্যপদ নবীকরণের চাঁদা সেকেলে দু’টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছিল। এ বার কর্মীদের প্রতিও কিছু ফিরিয়ে দিতে চাইছে সিপিএম। কলকাতায় আসন্ন প্লেনামের খসড়া রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, সর্বক্ষণের কর্মীদের ভাতা পুনর্গঠন করা হোক এবং সেই সঙ্গেই চালু করা হোক অবসরকালীন ভাতা।
অবসরকালীন ভাতা চালু করার সুপারিশের মধ্যেই স্পষ্ট, দলে তারুণ্য আনতে কর্মীদের অবসর চালু করার কথা এখন গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন সীতারাম ইয়েচুরিরা। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সর্বক্ষণের কর্মীদের সামান্য ভাতাও না দিতে পারলে এখন আর তাঁদের ধরে রাখা মুশকিল। আবার অবসরকালীন ভাতা দিতে পারলে পুরনো কর্মীরা একটু সম্মান নিয়ে বিদায় নিতে পারবেন।’’
প্লেনামের খসড়া রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ক্ষমতায় না থেকেও কিছু রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্ব কর্মীদের জন্য সম্মানজনক ভাতার ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। এই ক্ষেত্রে সব চেয়ে এগিয়ে আছে নতুন রাজ্য তেলঙ্গানা। সেখানে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সর্বক্ষণের যে কর্মীরা শহরে থাকেন, তাঁদের মাসে ভাতা দেওয়া হয় ১৩ হাজার ১০০ টাকা। সঙ্গে বাড়ি ভাড়া। গ্রামে থাকলে ভাতা ১১ হাজার টাকা। আবার অবিবাহিত কর্মীর (সর্বক্ষণের) জন্য শহরে ভাতা ৬ হাজার, গ্রামে সাড়ে পাঁচ হাজার। বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে এই দু’ক্ষেত্রেও। দিল্লি বা মহারাষ্ট্রের মতো কয়েকটি রাজ্য কমিটি আবার চাঁদা তুলে তহবিল সংগ্রহ করে ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত রেখেছে কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্যই। যাবতীয় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্লেনাম রিপোর্টের সুপারিশ, একটি রাজ্যে একা এবং পরিবার নিয়ে ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্য-সহ বেঁচে থাকতে যা খরচা হয়, তার ভিত্তিতে সেই রাজ্যে সর্বক্ষণের কর্মীদের বেতন ঠিক করতে হবে।
অর্থ দিয়েই শুধু ক্যাডার টানতে চাইছে সিপিএম, বিষয়টি অবশ্য এমনও নয়! প্লেনামের রিপোর্টে তাই বলা হয়েছে: ‘কেবল দলের সদস্যপদ বাড়ানোই দলকে বাড়ানোর একমাত্র পথ নয়। গুণাগুণ বিচার না করে যাকে-তাকে দলে সদস্য করে নেওয়াও চলতে পারে না’। কর্মীদের মান বজায় রাখতে রাজনৈতিক ও আদর্শগত বিবেচনা-সহ পাঁচ দফা শর্ত খুঁটিয়ে পূরণ করলে তবেই সদস্যপদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে খসড়া রিপোর্টে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy