একসঙ্গে তিন ধাক্কা! প্রথমত, রাজ্য নেতৃত্বের তরফে সর্বসম্মতির আবেদন উড়িয়ে ভোটাভুটিই হল। দ্বিতীয়ত, দলের পেশ করা প্যানেলে নাম না-থাকা নেতা ভোটে জিতে জেলা কমিটিতে জায়গা করে নিলেন। এবং তৃতীয়ত, ভোটাভুটির এই প্রক্রিয়ায় দলের মধ্যে হেরে গেলেন স্বয়ং জেলা সম্পাদক! নতুন কমিটিতেই তাঁর স্থান রইল না।
তিন ধাক্কার জেরে জেলা সম্পাদক পদে পরিবর্তন আনতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে ‘বাধ্য’ করল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। সব মিলিয়ে সম্মেলনকে ঘিরে উত্তর ২৪ পরগনায় যা ঘটল, তাকে সিপিএমের অন্দরে ‘বিপ্লব’ই বলা হচ্ছে! একই সঙ্গে মুখ পুড়ল জেলা সম্পাদক এবং দলের রাজ্য নেতৃত্বের। পরাজিত জেলা সম্পাদকের জায়গায় নতুন নাম ঠিক করতে এখন আবার কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে তাঁদের!
মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় জেলা সম্পাদককে পরিবর্তন করে দলের ‘সক্রিয়তা’ বাড়ানো দরকার, এই দাবি জেলায় উঠেছিল অনেক আগেই। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব এ বার জেলা সম্পাদক বদলে সায় দিতে তৈরি ছিলেন না। বারাসতে জেলা সম্মেলনের প্রথম দিন থেকেই প্রতিনিধিদের বড় অংশ সম্পাদক বদলের দাবি তুলেছিলেন, যা সচরাচর দেখা যায় না। তার পরে আবার দলীয় নেতৃত্বের তরফে জেলা কমিটির প্যানেল পেশ হওয়ার পরে ২৭ জন সেখানে অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২৫ জন নাম তুলে নিয়েছিলেন গত রবিবার সম্মেলনের শেষ রাতেই। নাম প্রত্যাহার করেননি দু’জন— বিধাননগর ও মধ্যমগ্রাম থেকে এক জন করে। তাঁদের মধ্যে মধ্যমগ্রামের সনৎ বিশ্বাস ভোটাভুটিতে জেলা কমিটিতে নির্বাচিত হয়েছেন। দলীয় নেতৃত্বের পেশ করা ৭৪ জনের জেলা কমিটির প্যানেলের বাকি ৭৩ জন নির্বাচিত হলেও পরাজিত হয়েছেন জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। সূত্রের খবর, জায়গা পাওয়ার মাপকাঠির চেয়ে চারটি ভোট কম হয়েছে তাঁর।
বারাসতে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দফতরে রবিবার জেলা সম্মেলনের শ’চারেক প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী ও সুমিত দে। ভোটাভুটিতে জেলা সম্পাদকের পরাজয়ের বিড়ম্বনার পরে সেখানে আর নতুন জেলা সম্পাদক বেছে নেওয়া হয়নি। আপাতত পলাশ দাসকে আহ্বায়ক করে জেলা কমিটি গড়া হয়েছে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য দফতরে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি নবগঠিত জেলা কমিটিকে ডাকা হয়েছে। সেখানেই জেলা সম্পাদক ঠিক হওয়ার কথা। সিপিএম সূত্রের খবর, উত্তর ২৪ পরগনার পরবর্তী জেলা সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে অন্তত পাঁচ জন নেতা-নেত্রীর নাম রয়েছে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য মেনে নিচ্ছেন, ‘‘পেশ হওয়া প্যানেলের আরও কয়েক জন ভোটাভুটিতে বাদ গেলে জেলা সম্পাদকের এতটা সম্মানহানি হত না! যা হল, তাতে জেলা সম্পাদক তো বটেই, রাজ্য নেতৃত্বের প্রতিও অনাস্থা প্রকাশ পেল। তবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই যা হওয়ার হয়েছে।’’ উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের একাংশের অবশ্য মত, জেলার অন্দরের মন বুঝে রাজ্য নেতৃত্ব আগে সক্রিয় হলে এই পরিস্থিতি হত না।
দলের প্যানেলকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করার পাশাপাশি ‘বিদ্রোহী’ দুই নেতা নাম প্রত্যাহারের জন্য রাজ্য নেতৃত্বের আবেদনেও সাড়া দেননি। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা কমিটিতে আসতে না-পারলেও বিধাননগরের সংশ্লিষ্ট নেতা খুব খারাপ ভোট পাননি। আর মধ্যমগ্রামের সনৎ কামাল করে দিয়েছেন! জেলার এক নেতার কথায়, ‘‘সবাই মিলে যখন সংগঠনকে চাঙ্গা করে আন্দোলনে ঝাঁপানোর কথা, সেই সময়ে নজর অন্য দিকে ঘুরে গেল!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)