Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বলে কয়েই ‘দখল’ হল পার্টি অফিস

বিজয় মিছিল থেকে শাসকদলের কর্মীরা তাঁদের পার্টি অফিস দখল করার চেষ্টা করেছিলেন বলে রবিবার অভিযোগ করেছিলেন ভালাগড়া গ্রামের সিপিএম কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেছিলেন, মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা রুখে দাঁড়ানোয় রণে ভঙ্গ দিয়েছিল হামলাকারীরা। ২৪ ঘণ্টা পরেই অবশ্য অন্য ছবি। সোমবার কাশীপুরের সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতের ভালাগড়া গ্রামে সিপিএমের সেই কার্যালয়টি দখলই হয়ে গেল!

দেখে কে বলবে, এটা ছিল সিপিএম কার্যালয়? কাশীপুরের ভালাগড়া গ্রামে সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

দেখে কে বলবে, এটা ছিল সিপিএম কার্যালয়? কাশীপুরের ভালাগড়া গ্রামে সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাশীপুর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

বিজয় মিছিল থেকে শাসকদলের কর্মীরা তাঁদের পার্টি অফিস দখল করার চেষ্টা করেছিলেন বলে রবিবার অভিযোগ করেছিলেন ভালাগড়া গ্রামের সিপিএম কর্মীরা। তাঁরা দাবি করেছিলেন, মহিলা কর্মী-সমর্থকেরা রুখে দাঁড়ানোয় রণে ভঙ্গ দিয়েছিল হামলাকারীরা। ২৪ ঘণ্টা পরেই অবশ্য অন্য ছবি। সোমবার কাশীপুরের সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতের ভালাগড়া গ্রামে সিপিএমের সেই কার্যালয়টি দখলই হয়ে গেল!

এবং এই দখলের কথা বুক বাজিয়ে স্বীকারও করে নিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব!

সোনাইজুড়ি পঞ্চায়েতের অদূরে, আদ্রা যাওয়ার রাস্তার ডান দিকে রয়েছে কার্যালয়টি। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘সোনাইজুড়ি অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয়’। তৃণমূলের পতাকা টাঙানো। দেখে বোঝার উপায় এক দিন আগেও সেটি সিপিএমের কার্যালয় ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সকালে ওই কার্যালয়টিতে সিপিএমের সাইনবোর্ড চুন দিয়ে মুছে তৃণমূলের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। টাঙিয়ে দেওয়া হয় তৃণমূলের পতাকা। সোনাইজুড়ি অঞ্চল কমিটির তৃণমূলের কোষাধ্যক্ষ তথা ভালাগোড়া গ্রামের বাসিন্দা কাজল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সিপিএম মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ওরা এলাকায় প্রাসঙ্গিতকতা হারিয়েছে। ফলে সিপিএমের কার্যালয় রাখার কোনও মানেই হয় না। মানুষের কাজ করার জন্যই ওই কার্যালয়টি এ বার থেকে আমরা ব্যবহার শুরু করেছি।” কিন্তু পার্টি অফিস দখলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোয় বিরোধী দলের প্রাসঙ্গিকতাকেই কি অস্বীকার করছেন তাঁরা? সরাসরি উত্তর এড়িয়ে কাজলবাবু বলেন, ‘‘মানুষের কাজের জন্যই দলের কার্যালয় থাকে। ওই কার্যালয় আমরা ব্যবহার করছি। পরের নির্বাচনে তৃণমূল পরাজিত হলে, যে দল জিতবে তার কর্মীদের হাতে এই কার্যালয়ের চাবি স্বেচ্ছায় আমরা তুলে দেব।”

নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে বিভিন্ন জেলার মতো পুরুলিয়াতেও বিরোধীদের কার্যালয়ে হামলা এবং কার্যালয় দখলের অভিযোগ উঠে এসেছে। নিতুড়িয়ার সড়বড়িতে সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল। পাড়ার উদয়পুরে সিপিএমের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড মুছে, আসবাবপত্র উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। সেই তালিকায় এ বারে যোগ হল কাশীপুরের ভালাগড়া। সিপিএমের তরফে রবিবরাই বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। এ দিন পুলিশ তদন্ত করতে ভালাগড়া গ্রামেও যায়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বের।

রবিবার শাসকদলের বিজয় মিছিল চলাকালীন, পুলিশের উপস্থিতিতেই তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা ওই কার্যালয়টির তালা ভেঙে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, আলমারি থেকে কাগজপত্র বের করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সিপিএমের পতাকা খুলে ফেলে দেন হামলাকারীরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের কর্মীরা ফের সেখানে যান। অভিযোগ, এ দিন কার্যালয় দখলের পরে বাদবাকি কাগজপত্রও নষ্ট করে দেওয়া হয়। ভেঙে ফেলা হয় কয়েকটি আসবাব। বস্তুত, রবিবার দুপুরে গ্রামের মহিলারা সমর্থকরা বাধা দিলেও এ দিন কার্যালয়টি দখলের সময় সিপিএম কোনও প্রতিরোধই করতে পারেনি। সিপিএম সূত্রের খবর, তৃণমূল কর্মীরা যখন কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে পড়ার পরে স্থানীয় সিপিএম কর্মীরা দলের নেতাদের ফোন করেন। নেতারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ জানিয়েছে, সিপিএমের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা রুজু হয়েছে।

বিজয় মিছিলের বদলে কর্মীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন দলনেত্রী। কিন্তু তার পরেও একের পর এক বিজয় মিছিল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বিরোধীদের পার্টি অফিস দখলের অভিযোগ উঠে আসছে। রবিবার কাশীপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে এলাকার বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া জানিয়েছিলেন, কর্মীরা যাতে বিরোধীদের কার্যালয় দখল না করেন তিনি সেই নির্দেশ দেবেন। এ দিন শপথ গ্রহণের জন্য কলকাতায় রয়েছেন স্বপনবাবু। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘আগে ওই কার্যালয়টি তৃণমূলের ছিল। পরে সিপিএমই সেটি দখল করে নেয়। তার পরে দীর্ঘ দিন ওই কার্যালয় বন্ধ ছিল। সিপিএম কর্মীরা সেখানে যেতেন না। তাই আমাদের স্থানীয় কর্মীরা পার্টি অফিসটি খুলে দলীয় পতাকা লাগিয়েছেন।”

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, প্রথম থেকেই ওই কার্যালয়টি তাঁদেরই ছিল। ২৫ বছরেরও বেশি সময় সেটি তাঁরা ব্যবহার করে আসছেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এ ভাবে কার্যালয় দখলের নজির ছিল না। তৃণমূল এটা শুরু করল। সমস্তটাই মানুষ দেখছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashipur Occupied party office CPM TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE