Advertisement
E-Paper

জেতানোয় ধন্যবাদ, চিঠি দিচ্ছে সিপিএম

শহরে পরিষেবার হাল নিয়ে মতামত চেয়ে বাড়ি-বাড়ি প্রশ্নপত্র চিঠি বিলি করা হয়েছিল ভোটের কয়েক মাস আগে। জনসংযোগের এই কর্মসূচির পরে এলাকার দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছে কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট। দুর্গাপুরে এ বার তাই ভোটারদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০২:০৪
আজ থেকে বাড়ি-বাড়ি বিলি এই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র

আজ থেকে বাড়ি-বাড়ি বিলি এই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র

শহরে পরিষেবার হাল নিয়ে মতামত চেয়ে বাড়ি-বাড়ি প্রশ্নপত্র চিঠি বিলি করা হয়েছিল ভোটের কয়েক মাস আগে। জনসংযোগের এই কর্মসূচির পরে এলাকার দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছে কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট। দুর্গাপুরে এ বার তাই ভোটারদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম।

সভা-সমাবেশে কথায়-কথায় ‘মা-মাটি-মানুষ’কে ধন্যবাদ জানাতে হামেশাই দেখা যায় তৃণমূলের নেতানেত্রীদের। কিন্তু সাধারণ মানুষকে পাশে পেতে এমন কোনও উদ্যোগ সিপিএমের তরফে আগে সে ভাবে দেখা যায়নি। পুরনো বাম নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, চিঠি পাঠিয়ে জনসংযোগের প্রচলন বহু আগে চালু ছিল। কিন্তু রাজ্যে তাঁরা ক্ষমতায় আসার পরে সেই সংস্কৃতিতে ভাটা পড়ে। তবে এ বার বিধানসভা ভোটের আগে দুর্গাপুর, বড়জোড়ার মতো কিছু এলাকায় তা ফিরিয়ে এনেছে সিপিএম। তাতে ফল মেলায় দুর্গাপুরে এ বার পাঠানো হচ্ছে ধন্যবাদের চিঠি।

দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনালের এলাকায় রয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ভোটার। তাঁদের মধ্যে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রে পড়েন প্রায় ৭৫ হাজার ও পূর্বে প্রায় ৬৮ হাজার। দলের ইস্পাত জোনালের এলাকায় পুরসভার ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড পড়ছে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রে। সেখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২ হাজার। এ বার জোটের তরফে পূর্ব কেন্দ্রে সিপিএম ৯১৩১ ভোটে এবং পশ্চিমে কংগ্রেস ৪৪ হাজারেরও বেশি ভোটে জিতেছে।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি বিধানসভা আসনই তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরে ভোটারদের চিঠি দেওয়ার পিছনে রয়েছে এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল। প্রথমত, ভোটে জেতার পরে নেতারা ভোটারদের কথা ভুলে যান, মানুষের মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে। তা ভুল প্রমাণ করে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া অন্যতম লক্ষ্য। দ্বিতীয়ত, বছর ঘুরলেই দুর্গাপুর পুরসভার ভোট। সে দিকে তাকিয়ে জনসংযোগ রক্ষার কাজও হবে এর মাধ্যমে। দুর্গাপুরের এক সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের হাওয়া আমরা এখানে রুখে দিতে পেরেছি শুধু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে। তা কোনও ভাবেই হারাতে চাই না।’’

রঙিন ওই চিঠিতে দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল কমিটির তরফে গোড়ায় ‘অভিনন্দন’ জানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘বিগত বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুরবাসী বাম-গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থীদের যে ভাবে দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্রে বিপুলভাবে সমর্থন করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’ ইস্পাত জোনালের চিঠিতে সাদা-কালো হরফে লেখা হয়েছে, ‘অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতে যাঁরা আমাদের সমর্থন করেছেন, জয়ী করেছেন তাঁদের প্রতি আমরা আন্তরিক অভিনন্দন, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ আজ, শুক্রবার থেকে দলের কর্মী-সমর্থকেরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেবেন বলে জানান সিপিএম নেতারা।

এই অঞ্চলে বাড়ি-বাড়ি চিঠি পাঠানোর পন্থা অবশ্য বেশ কিছু দিন আগেই নিয়েছে সিপিএম। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে জেমুয়া-বিধাননগর জোনাল কমিটির তরফে ভোটারদের বাড়িতে হাতে লেখা চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তাতে সন্ত্রাসের কারণে প্রচার করা যাচ্ছে না দাবি করে ভোট দেওয়ার আর্জি জানানো হয়। দুর্গাপুর শহরে গত বছর বেহাল পুর পরিষেবা নিয়ে লিখিত মতামত চেয়ে বাড়ি-বাড়ি প্রশ্নপত্র বিলি করে সিপিএম। ভোটপর্বে বামেদের তরফে দুর্গাপুরে বড় কোনও মিছিল করা হয়নি। অন্য দলগুলির মতো কোনও ‘হেভিওয়েট’ নেতাকে এনে সভাও করা হয়নি। তা সত্ত্বেও জয় এসেছে। সিপিএম নেতাদের দাবি, গত বছর মে থেকে শহরে শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘রক্ষা করো আমার শহর’ স্লোগান তুলে লাগাতার আন্দোলন হয়। সেই সঙ্গে এ ভাবে জনসংযোগ কর্মসূচির সুফল প্রথম মেলে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে প্রতিনিধি শ্রমিক সংগঠন নির্বাচনে। তাতে জয়ী হয় সিটু। বিধানসভা ভোটেও সেই ফর্মুলা কাজে লেগেছে বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের।

সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, ‘‘আমরা মানুষের পাশে আছি। তাই মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। শাসক দলের লাগাতার আক্রমণ সত্ত্বেও তাঁরা আমাদের প্রার্থীদের জিতিয়েছেন। তাঁদের তো কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে।’’ দলের ইস্পাত জোনালের সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পূর্বের জয়ী সন্তোষ দেবরায় বলেন, ‘‘মানুষ যাতে আমাদের উপরে ভরসা না হারান, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’’ এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে জোট-সঙ্গী কংগ্রেসও। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ। মানুষ জোটকে সমর্থন করেছেন। তার মর্যাদা দিতে চাই।’’

তৃণমূল যদিও গোটা বিষয়টিকে ‘লোকদেখানো’ বলে কটাক্ষ করছে। দলের দুর্গাপুর (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ তো ভূতের মুখে রামনাম! ৩৪ বছরে কত জনকে ওরা ফোন করেছে সন্দেহ। এই চিঠি পাঠানো ওদের মুখ নয়, মুখোশ।’’

CPM Letter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy