E-Paper

নজর ‘গরিবের পার্টি’ ফেরানোয়, সম্মেলনে সিপিএমের মেরু-চিন্তাও

দলের দৈনন্দিন কর্মসূচির বড় অংশের মধ্যেই মধ্যবিত্ত মানসিকতার ছাপ স্পষ্ট। শ্রেণি অভিমুখ গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এ বারের সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য।

 সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:২৮
সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ডানকুনিতে।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ডানকুনিতে। —নিজস্ব চিত্র।

শুরু আছে, শেষ নেই! দৃশ্যমানতা আছে। কিন্তু কামড় নেই!

আন্দোলনের এই দুর্বলতাকে মাথায় রেখেই রাজ্য সম্মেলনে যাচ্ছে সিপিএম। বাংলায় লোকসভা ও বিধানসভায় দলের কোনও আসন নেই, ভোট-প্রাপ্তির হারও তলানিতে। কিন্তু কঠিন এই সময়ে ভোট-বাক্সে দৈন্যের চেয়েও সিপিএমকে বেশি ভাবাচ্ছে আন্দোলনে ধারের অভাব এবং শ্রেণি বিন্যাস। দলের দৈনন্দিন কর্মসূচির বড় অংশের মধ্যেই মধ্যবিত্ত মানসিকতার ছাপ স্পষ্ট। শ্রেণি অভিমুখ গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া এ বারের সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য।

হুগলি জেলার ডানকুনিতে আজ, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। উদ্বোধন করার কথা দলের পলিটব্যুরো কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাটের। তাঁকে নিয়ে দিল্লি ও ভিন্ রাজ্যের ৭ জন পলিটব্যুরো সদস্যের উপস্থিত থাকার কথা সম্মেলনে। শ’পাঁচেক প্রতিনিধির পাশাপাশি দলের শীর্ষ নেতাদেরও থাকার ব্যবস্থা হয়েছে ডানকুনিতে। রাজ্যে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রস্তুতির বল এই সম্মেলন থেকেই গড়াতে শুরু করবে। ভোটের রাজনীতির সেই তাৎক্ষণিক বাধ্যবাধকতা ছাপিয়েও দলের শ্রেণি চেহারা মজবুত করার দিকে বেশি নজর দিতে চান সিপিএম নেতৃত্ব।

—নিজস্ব চিত্র।

রাজ্য সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলায় সিপিএমের সদস্য-সংখ্যা এখন প্রায় এক লক্ষ ৫৮ হাজার। কয়েক বছরে এই কলেবরের ইতর বিশেষ ঘটেনি। এই কর্মী মহলের মধ্যে কৃষক, শ্রমিক ও গরিব মানুষের অনুপাত বড় রকম। কিন্তু আন্দোলনের ক্ষেত্রে সেই শ্রেণি অভিমুখের প্রতিফলন ঘটছে না বলে দল স্বীকার করে নিচ্ছে। প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, সমাজের চেহারা, শ্রমের ধরন বদলাচ্ছে। কিন্তু ‘নতুন সময়ের উপযোগী’ করে দলকে তৈরি করা যাচ্ছে না। গরিব, মেহনতি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ধারাবাহিক লড়াই, আন্দোলন হচ্ছে না। অথচ এরাঁই ছিলেন বামপন্থী দলের বরাবরের শক্ত ভিত। কর্মসূচিতে তরুণ কর্মী যত আসছেন, ততটা দলে অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে না, মহিলাও নেই পর্যাপ্ত সংখ্যায়— এই ঘাটতিও চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক কালে নানা ঘটনায় আন্দোলন শুরু হয়েছিল জোরদার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ঝিমিয়েও গিয়েছে অল্প দিনে। নির্বাচনে আশু লাভের অঙ্ক, নেতা-কর্মীদের মধ্যবিত্তসুলভ মানসিকতা অন্তরায় তৈরি করছে। দীর্ঘমেয়াদে ভাবতে গেলে গরিব মানুষকে আমাদের পাশে আনতেই হবে।’’ দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্য আরও স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, ‘‘মধ্যবিত্ত শ্রেণি নানা হিসেব করে চলে। সেই অংশকে বাদ দিয়ে চলা যায় না। কিন্তু ক্রমাগত শুধু মধ্যবিত্তের দল হয়ে না উঠে আমাদের অবশ্যই গরিবের পার্টি হতে হবে।’’

বুথভিত্তিক সংগঠনে জোর দেওয়ার পাশাপাশিই সম্মেলনের প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বহু সদস্য যেমন দল ছেড়েছেন, অনেকে আবার দলে এসেছেন। কিন্তু এ জি সদস্যপদ পাওয়ার পরে অনেকেই আর আবেদনকারী (সিএম) অথবা পাকাপাকি সদস্য (পিএম) হতে চাইছেন না। অর্থাৎ এক বার দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েও আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সূত্রের খবর, নেতা হওয়ার জন্য দলের অভ্যন্তরে ‘গোষ্ঠী কোন্দল’, ‘উপদলীয় কাজকর্ম’ বন্ধ করা যায়নি বলেও উদ্বেগ রয়েছে প্রতিবেদনে।

রাজ্য সম্মেলন চলবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। শেষ দিনে গঠিত হবে নতুন রাজ্য কমিটি। সূত্রের খবর, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপি-বিরোধিতার সুর তীব্র করার লক্ষ্যে কী করণীয়, সেই আলোচনা সম্মেলনে আসতে পারে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে মেরুকরণের জন্য দলকে যে সমর্থন হারাতে হচ্ছে, সে কথা মেনেই নিয়েছে সিপিএম। রাজ্যের আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল, ধর্মীয় মেরুকরণ, কৃষক ও শ্রমিকের নানা সমস্যা-সহ বিবিধ বিষয়ে ২০টির বেশি প্রস্তাব নেওয়া হতে পারে সম্মেলনে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Left

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy