বাংলার দু’টি জেলা মালদহ ও মুর্শিদাবাদকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি নিয়ে জলঘোলা অব্যাহত। এক দিকে জলপাইগুড়িতে জেলা বিজেপির বৈঠকে দলের রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার আগে যা বলেছিলেন, সেই সুরেই উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে সংযুক্ত করার প্রস্তাব উঠল। অন্য দিকে, বিজেপিরই মুর্শিদাবাদ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার তাঁদের এলাকায় ‘অনুপ্রবেশ-সমস্যার’ কথা তুলেও দাবি করেছেন, বাংলা ভাগের কথা দলীয় ভাবে বলা হয়নি। এমন আবহে বিজেপিকে ‘দিশাহার’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি, ‘রাজ্য ভাগের চক্রান্তের’ প্রতিবাদে কলকাতায় পথে নেমেছে সিপিএম।
জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির ডাকে শনিবার লোকসভার ফল নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। সেখানেই দলের জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী উন্নয়নের প্রশ্নে উত্তরবঙ্গ ‘বঞ্চিত’ বলে অভিযোগ করে বলেন, “উত্তরবঙ্গবাসী ক্ষুব্ধ, অসহায়। উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নমূলক প্যাকেজের সঙ্গে উত্তরবঙ্গকে সংযুক্তিকরণের প্রস্তাবকে সর্বসম্মত ভাবে সমর্থন জানানো হয়েছে।” ঘটনাচক্রে, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মতো উত্তরবঙ্গকেও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার দাবি উঠেছে ‘কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর (সিআইআই) আলোচনাসভাতেও। শিলিগুড়িতে আয়োজিত ওই সভায় সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গ জ়োনের চেয়ারম্যান নরেন্দ্র সি গর্গ জানান, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা রাজনীতি চান না। তাঁর সংযোজন, “উত্তরবঙ্গের মানুষ হিসেবে আমরা সব সময় চাইব, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি যে আর্থিক সুবিধা পায়, তা যেন আমরাও পাই।”
প্রসঙ্গত, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের সুরেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে মুর্শিদাবাদের দলীয় বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ মুর্শিদাবাদ ও মালদহকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি জানিয়েছিলেন। এই নিয়ে বিজেপির মুর্শিদাবাদ দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার এ দিন দাবি করেছেন, রাজ্য ও জেলা বিজেপি বলেছে, কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলা ভাগের কথা বলেননি। তবে গৌরীশঙ্করের সুরেই তিনিও ‘অনুপ্রবেশ-সমস্যা’ নিয়ে সরব হয়েছেন। শাখারভের দাবি, “বাংলাদেশ থেকে সব আসছে। কলকাতা বা সংলগ্ন পুরসভাগুলিতে তাদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের অবস্থা ভয়ঙ্কর। সমস্যার কী ভাবে সমাধান করা যাবে, তা নিয়ে আমাদের নেতারা বাক্স্বাধীনতার কারণে নিজের মতো করে বলেছেন। কিন্তু দল স্পষ্ট করেছে, সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কেউ নই। মালিক রাজ্য ও কেন্দ্র।”
এই আবহে বিজেপিকে বিঁধেছে তৃণমূল। দলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, “বিজেপি বঙ্গভঙ্গ চায়। যেখানে হারে, সেখানে প্রতিশোধ নিতে পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে চায়। দলটা দিশাহারা।” সিউড়িতে সরব হয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। তিনি বলেছেন, “অপর্দাথেরা কেন্দ্রের মন্ত্রী হতে কিংবা সাংসদ হতে গিয়েছেন। আরএসএস চায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ৫০টি রাজ্য। ভাষাভিত্তিক রাজ্যগুলিকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। কারণ, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান তৈরি করতে হলে অন্য ভাষাভিত্তিক রাজ্যকে ছোট করতে হবে।” সিপিএম এ দিন পথেও নেমেছে। ‘যে কোনও মূল্য বাংলা ভাগ রুখবই’, এমন স্লোগানকে সামনে রেখে দলের যাদবপুর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির ডাকে গড়িয়া থেকে যাদবপুর পর্যন্ত মিছিল করেছে সিপিএম। ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্য প্রমুখ।
মুর্শিদাবাদ ও মালদহকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির বিষয়টিকে ‘অবান্তর’ বলে কটাক্ষ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তাঁর বক্তব্য, “মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘুরা স্বাধীনতার সময় থেকেই সংখ্যাগুরু। মালদহ, মুর্শিদাবাদে জনগোষ্ঠী এমনটাই ছিল বরাবর। তাই অবান্তর দাবিকে সমর্থন করি না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)