Advertisement
E-Paper

ইস্তাহারে টক্কর, কিন্তু মাঠে কী হবে, প্রশ্ন বাম মহলেই

এক বছর আগে লোকসভা ভোটের সময় মোদী হাওয়ায় মাত করেছিল তারা। এমনকী, এগিয়ে ছিল তৃণমূল নেত্রীর বিধানসভা আসনেও। কিন্তু সেই হাওয়া এখন খানিকটা স্তিমিত। এই পরিস্থিতিতে হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। তাই তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়ে একই দিনে পিঠোপিঠি ইস্তাহার বের করল তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩২
সিপিএমের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে দলীয় নেতৃত্ব।

সিপিএমের ইস্তাহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে দলীয় নেতৃত্ব।

এক বছর আগে লোকসভা ভোটের সময় মোদী হাওয়ায় মাত করেছিল তারা। এমনকী, এগিয়ে ছিল তৃণমূল নেত্রীর বিধানসভা আসনেও। কিন্তু সেই হাওয়া এখন খানিকটা স্তিমিত। এই পরিস্থিতিতে হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। তাই তৃণমূলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়ে একই দিনে পিঠোপিঠি ইস্তাহার বের করল তারা। এবং সেখানে বোঝানোর চেষ্টা করল: এ জমানার যে সব কাজের কথা বলে কৃতিত্ব দাবি করছে শাসক দল, আসলে তা বাম আমলেরই কাজ।

রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভাই এখন তৃণমূলের দখলে। আসন্ন পুরভোটের প্রচার এবং প্রস্তুতি পর্বে দাপট শাসক দলেরই। কলকাতায় প্রার্থ়ী তালিকা সকলের আগে প্রকাশ করেছে তারাই। এ বার নিজেদের ‘উন্নয়নমূলক’ কাজের তালিকা দিয়ে সোমবার তৃণমূল ভবনে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সাধন পাণ্ডের উপস্থিতিতে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইস্তাহারটি প্রকাশ করলেন। আবার এ দিনই শরিক নেতাদের উপস্থিতিতে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে বামফ্রন্টের ইস্তাহার প্রকাশ করলেন সিপিএম নেতা এবং কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন। আর দুই ইস্তাহারেই ঠোকাঠুকি লাগল প্রথম থেকে।

কী রকম? তৃণমূল তাদের ইস্তাহারে দাবি করেছে, তাদের আমলেই কলকাতা পুর-এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা মিটেছে, কলকাতার গরিব মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বিমা চালু করা হয়েছে। তাদের আরও দাবি, ২০২৫ সালের কথা মাথায় রেখে পলতায় জল উৎপাদন বাড়ানো এবং গার্ডেনরিচে প্রতিদিন জল তোলার জন্য নতুন জেট পাম্পিং স্টেশনের কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছে বতর্মান পুরসভা। জমা জল ও জঞ্জাল সাফাইয়ে গতি আনতে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও বাজারে তিন হাজার সিসিটিভি বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে শাসক দল।


তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহার প্রকাশ।

এগুলির বেশির ভাগেরই পাল্টা জবাব দেওয়া হয়েছে বাম ইস্তাহারে। এবং সেই কাজে সরকারের দেওয়া তথ্যই তাঁদের হাতিয়ার। সে সব তথ্য তুলে বামেরা উল্টে দাবি করেছেন, তাঁদের আমলের কিছু কাজই শেষ করে সাফল্যের দাবি করছে তৃণমূল। তবে ২০১২ সালের মধ্যে যে সব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল, তার বেশির ভাগই এখনও সেই তিমিরে। সিপিএম নেতা অনাদি সাহুর দাবি, ‘‘তৃণমূল আমলে জল, নিকাশি ব্যবস্থা, বস্তি উন্নয়ন থেকে শুরু করে কোনও মূল সমস্যারই সমাধান হয়নি। অথচ ত্রিফলা বাতি, লেক মল প্রভৃতিতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে।’’

অর্থাত্, জল থেকে নিকাশি, জঞ্জাল থেকে বস্তি উন্নয়ন— পুরনো ঘিয়ের গন্ধ শুঁকিয়ে ভোটার মন জয় করতে কোনও কিছুই বাদ দেননি বামফ্রন্টের নেতারা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এত করেও কি শাসক দলকে টক্কর সমানে সমানে দিতে পারবেন তাঁরা? এর মধ্যেই বামেদের তরফে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, তৃণমূল তাদের প্রচার করতে দিচ্ছে না। এই নিয়ে মিছিল করেছে বামেরা। খোদ বিমান বসুকে পথে নামতে হয়েছে। এ দিনও দিলীপবাবু অভিযোগ করেন, তৃণমূলের বাধায় তাঁরা কলকাতায় ৩০-৩৫টি ওয়ার্ডে প্রচার করতে পারছেন না। বাম প্রার্থীদের অবাধ প্রচার নিশ্চিত করতে এ দিন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল লালবাজারে যুগ্ম কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন। তবে তাতেও উদ্বেগ কাটছে না বাম নেতাদের।

তবু মুখে ‘বিনা যুদ্ধের’ কথা বলে চলেছেন তাঁরা। অনাদিবাবু যেমন দাবি করলেন, ‘‘আমরা বিনা যুদ্ধে দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে জমি ছাড়ব না। দাঙ্গাবাজ বিজেপি-কেও রুখব।’’ কিন্তু তাতেও বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না দলের অনেক কর্মী-সমর্থক। তাঁদের বক্তব্য, একে তো মাঠে নেমে তৃণমূলের মোকাবিলা করে দেওয়াল লেখা থেকে প্রচার, সবই অত্যন্ত কঠিন কাজ। তার উপরে এই আমলে শেষ হওয়া বহু কাজ আসলে বামেরাই শুরু করেছিলেন— এই দাবি মানুষকে বোঝানোও খুব সহজ নয়। এই মুহূর্তে বিজেপির হাওয়া কিছুটা হলেও স্তিমিত। তার ফলে একটা সুযোগ এসেছিল বটে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে পুরনো ঘিয়ের গন্ধ শুঁকিয়ে সেই সুযোগ কতটা কাজে লাগানো সম্ভব হবে শেষ পর্যন্ত, তা নিয়ে সংশয় থাকছে দলের অন্দরেই।

যা দেখেশুনে তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘৩৪ বছরে ক্ষমতার ভারেই বামেরা বেসামাল। আর বিজেপি আগে নিজেদের ঘর সামলাক। তার পর ভোটযুদ্ধে সামিল হওয়ার কথা ভাবুক!’’

— নিজস্ব চিত্র।

municipal election cpm tmc manifesto EC BJP Partha Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy