E-Paper

নেপথ্যের ‘দাগি’দের নাম চাই, সক্রিয়-বার্তা সিপিএমে

রাজ্য সরকার তথা এসএসসি ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’দের তালিকা পৃথক করতে না-পারার জেরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:২০
মুর্শিদাবাদের রানিনগরে আত্মঘাতী শিক্ষকের পরিবারের কাছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

মুর্শিদাবাদের রানিনগরে আত্মঘাতী শিক্ষকের পরিবারের কাছে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। —নিজস্ব চিত্র।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বারংবার তিরস্কৃত হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘দাগি’ তথা অযোগ্য শিক্ষকদের ১৮০৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। তার পরেও অযোগ্যদের ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ করার আশ্বাস দিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে যোগ্যতা ছাড়াই কারা স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের একাংশের তালিকা প্রকাশ্যে এলেও টাকার বিনিময়ে কারা চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন, সেই কুশীলবদের নাম এখনও সামনে আসেনি। বিধানসভা ভোটের আগে এই ‘বৃহত্তর দুর্নীতি চক্র’কে চিহ্নিত করার ডাক দিয়েই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে চাইছে সিপিএম। জেলায় জেলায় স্থানীয় স্তরে প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য বার্তা পাঠানো হচ্ছে দলের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে।

রাজ্য সরকার তথা এসএসসি ‘যোগ্য’ ও ‘অযোগ্য’দের তালিকা পৃথক করতে না-পারার জেরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। তার পর থেকে আদালতের নানা এজলাসে ‘দাগি’দের রক্ষা করার লক্ষ্যেই টানা সওয়াল চালিয়ে গিয়েছে রাজ্য। তার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের কড়া ভর্ৎসনার মুখেও পড়তে হয়েছে। বিরোধীদের দাবি, ‘দাগি’ বা অযোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা যদি মুখ খুলে চাকরি-কাণ্ডে নেপথ্যের কুশীলবদের নাম বলে দেন, তা হলে সরকারের বিড়ম্বনা আরও বাড়বে। সেই তাগিদেই তাঁদের জন্য সুরাহার বন্দোবস্ত করতে সরকারের একেবারে শীর্ষ স্তর এমন মরিয়া। এই প্রেক্ষিতে সিপিএমের আহ্বান, কাদের ঘুষ দিতে হয়েছিল চাকরির জন্য, সেই নাম-ধাম কেউ বলতে চাইলে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালাবে দল। দুর্নীতি-চক্রের কারিগরদের নাম ফাঁস করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীকে সব রকমের ‘সহায়তা’ দেওয়ার জন্যও দলের সব সংগঠনকে পরামর্শ দিচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব।

‘দাগি’ তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে বামেদের তুলনায় বিজেপির দৃশ্যমানতাও বেশি। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, শিক্ষক নিয়োগের ওই দুর্নীতির সময়ে শুভেন্দু যে হেতু তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের শরিক ছিলেন, সেই ‘অস্বস্তি’ আড়াল করার জন্য তাঁদের এখনকার প্রতিবাদের স্বর বেশিই চড়া! সিপিএমের নানা সংগঠন কেন শিক্ষা-দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে সে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না, তা নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্নও আছে। তবে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁরা যখন প্রতিবাদে নেমে গিয়েছিলেন, তখন এই শিক্ষক সমাজের একাংশই মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়দের ‘গো ব্যাক’ বলেছিলেন। তাঁদেরই কারও কারও নাম এখন আবার ‘দাগি’ তালিকায় এসেছে! ফলে, বিষয়টা বেশ জটিল।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘দুর্নীতির মাথাদের বাঁচানোর জন্য সরকার অযোগ্যদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আর বিজেপি শুধু এটুকুই দেখাতে চাইছে যে, তৃণমূল কেলেঙ্কারি করেছে। অথচ তারাই ব্যপম কেলেঙ্কারি করে পথ দেখিয়েছে! আমাদের প্রশ্ন, যারা এই দুর্নীতি-তন্ত্রের মাথা, তদন্ত কেন তাদের কাছে পৌঁছল না? গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধাপে ধাপে ধ্বংস করা হচ্ছে, আমাদের প্রতিবাদ সবটার বিরুদ্ধে।’’ সেই সঙ্গেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের আহ্বান, ‘‘অনেক দিন তো হল। ভুক্তভোগীদের কাছে আমাদের আবেদন, কারা চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছে, সেই সব নামগুলো বলে দিন! মানুষ জানুক। আপনাদের যাতে ক্ষতি না-হয়, সেই দায়িত্ব আমরা নেব।’’

দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যেরও বক্তব্য, ‘‘দাগিদের অর্ধেক তালিকা না হয় এল। যারা টাকা তুলেছে, তাদের তালিকা চাই— এই দাবি নিয়ে জেলায় জেলায় এলাকাভিত্তিতে সংগঠনকে নামতে বলা হচ্ছে। পুজোর মরসুমে খুব বড় কোনও কর্মসূচি বা কেন্দ্রীয় ভাবে তেমন কিছু করার অসুবিধা থাকে। তবু তার মধ্যেই এই বিষয়টাকে আমরা মূল হাতিয়ার করছি।’’ একই প্রশ্নে আন্দোলনের সক্রিয়তা বাড়াতে চলেছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Left

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy