Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪
CPM

বৃহস্পতি থেকে বৃহস্পতি, ভাষার বিবর্তন সিপিএমে, ইন্ডোরে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘আউটডোরে’ ‘গন্দীবাত’!

সিপিএমের একটা বড় অংশ ‘গৌরাঙ্গ মডেল’কে সমর্থন জানাচ্ছেন সমাজমাধ্যমে। তবে অন্য একটি অংশ আবার গৌরাঙ্গের বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন।

CPM’s West Bardhaman district secretary Gauranga Chatterjee’s speech sparked controversy

সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৪ ১৫:০২
Share: Save:

গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছিল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা। সিপিএম রাজ্য কমিটি আহূত ২২ অগস্টের সেই স্মরণসভার গোটাটাতেই ছিল রবীন্দ্র-মোড়ক। রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতাই ছিল বুদ্ধ-স্মরণের বড় অংশ জুড়ে। আট দিনের মাথায় আরও একটা বৃহস্পতিবার সেই সিপিএমেই যেন ভাষার বিবর্তন ঘটে গেল। সৌজন্যে দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়।

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার দুর্গাপুরে সিপিএমের গণসংগঠনগুলি মিছিল করে। সেই মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের এ-ও অভিযোগ ছিল, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই তৃণমূলের লোকজন মিছিলের মধ্যে ঢুকে তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছেন। সেই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে দুর্গাপুরে বৃহস্পতিবার ফের মিছিল করে সিপিএম। সেই মিছিলের শেষে গৌরাঙ্গের একটি বক্তৃতা সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাঁকে পুলিশের উদ্দেশে ছাপার অযোগ্য ভাষায় গালাগাল করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। পাণ্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক গৌরাঙ্গকে এ-ও বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘প্যাংপ্যাঙে সরু সরু ডান্ডা নিয়ে মিছিলে আসবেন না। শক্ত শক্ত ডান্ডা নিয়ে আসবেন। কালকের (বুধবারের) মিছিলে যদি শক্ত ডান্ডা থাকত, তা হলে তোদের বাপের নাম ভুলিয়ে ছেড়ে দিত দুর্গাপুরের মানুষ।’’ এর পরেই পুলিশের উদ্দেশে কুকথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

যদিও সিপিএমের একটা বড় অংশ ‘গৌরাঙ্গ মডেল’কে সমর্থন জানাচ্ছেন সমাজমাধ্যমে। প্রথম সারির অনেক নেতাই ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, কর্মী-সমর্থকদের মনোবলকে যদি ধরে রাখতে হয়, তা হলে এই ভাষাতেই কথা বলতে হবে। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘আমরা বলতে পারি না, সেটা আমাদের দুর্বলতা। কিন্তু গৌরাঙ্গদার কথায় দলের কর্মীরা উজ্জীবিত। এটাকে আমরা অস্বীকার করব কী করে?’’

তবে সিপিএমের একটি অংশের বক্তব্য আবার ভিন্ন। এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এই সব কথা প্রকাশ্যে না বলাই শ্রেয়। এখন হাতে হাতে ক্যামেরা। একটা আলটপকা মন্তব্য মুহূর্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যাঁরা গৌরাঙ্গকে সমর্থন করছেন, তাঁরা প্রকাশ্যেই সে কথা লিখছেন। কিন্তু যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁরা সে কথা প্রকাশ্যে বলতে পারছেন না। সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘এটা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোভাব কী!’’

এমনিতে রাজনীতিতে মন্দ ভাষা, কুকথা নতুন নয়। কমবেশি সব দলের নেতার মধ্যেই এই ‘গুণ’ রয়েছে। অতীতে সিপিএমের বিনয় কোঙার, অনিল বসু, তৎকালীন তৃণমূলের সোনালি গুহদের নানা কথা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি আলোড়িত হয়েছে। তার পরবর্তী কালে অর্জুন সিংহ, দিলীপ ঘোষ, মদন মিত্রেরা পাল্লা দিয়ে সে সব কথা বলে গিয়েছেন। রাজনীতির ভাষায় একটা রেকর্ড গড়েছে, আবার সেটা ভেঙেও গিয়েছে।

গৌরা‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ঙ্গ ‌অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি পুলিশের উদ্দেশে ওই কথা বলেননি। তাঁর কথায়, ‘‘যারা মিছিলে ঢুকে মহিলাদের মেরেছে, শ্লীলতাহানি করেছে , আমি তাদের উদ্দেশে বলেছি।’’ ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমি একটা জীবের কথা বলেছি। তাদের উদ্দেশে কি বাঘের বাচ্চা বললে খুশি হত? দুটোই তো জীব। সব জীবের মধ্যেই শিব আছেন।”

গৌরাঙ্গের বক্তব্যকে দল কী ভাবে দেখছে? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের প্রতি রাগে, ঘেন্নায় মানুষের গা রি-রি করছে। সেই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ফোঁস করতে। পুলিশ সরকারের তাঁবেদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে কোথাও কোথাও হয়তো ব্যাকরণ ভেঙে যাচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE