Advertisement
E-Paper

বহু বাড়িতে ফাটল, সব স্কুলে ছুটি ঘোষণা পাহাড়ে

ফের কেঁপে উঠল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটে ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। শনিবার দুপুরের ভূমিকম্পের পরে এমনিতেই আতঙ্কিত হয়েছিলেন বাসিন্দারা। কয়েক দফায় কম্পন অনুভূত হওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছিল। রবিবার দুপুরে ফের বেশ জোরে কম্পন অনুভূত হওয়ায় শিলিগুড়ির বহুতল থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। কান্নাকাটিও শুরু করে দেন মহিলারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৭
রবিবারের ভূমিকম্পের পরে অসুস্থ এক মহিলাকে ময়নাগুড়ি হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

রবিবারের ভূমিকম্পের পরে অসুস্থ এক মহিলাকে ময়নাগুড়ি হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।

ফের কেঁপে উঠল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। রবিবার দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিটে ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। শনিবার দুপুরের ভূমিকম্পের পরে এমনিতেই আতঙ্কিত হয়েছিলেন বাসিন্দারা। কয়েক দফায় কম্পন অনুভূত হওয়ায় আতঙ্ক বেড়েছিল। রবিবার দুপুরে ফের বেশ জোরে কম্পন অনুভূত হওয়ায় শিলিগুড়ির বহুতল থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। কান্নাকাটিও শুরু করে দেন মহিলারা।

এ দিন ফের কম্পন অনুভব করার পরে বাসিন্দারা রাস্তায় এসে শাঁখবাজাতে ও উলু দিতে শুরু করেন। শনিবারের মতো রবিবারের কম্পনেও শিলিগুড়িতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে ভূমিকম্পের কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে পাঁচ জন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন এক বার নয়, সন্ধে পর্যন্ত ন’বার ভূমিকম্প হয়েছে। তবে দুপুরের ভূমিকম্পের তীব্রতাই ছিল বেশি। শেষ ভূমিকম্প হয়েছে সন্ধ্যে সাড়ে ৬টার পরে। তবে রিখটার স্কেলে সেই কম্পনের মাত্রা ছিল সামান্য। আতঙ্কে দার্জিলিঙের সব স্কুলকে আজ, থেকে দু’দিন ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়েছে জিটিএ। জিটিএ-এর তরফে রোশন গিরি জানিয়েছেন, জিটিএ-এর তরফে লিখিত ভাবে পাহাড়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দু’দিন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

শিলিগুড়িতেও কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে সিকিমেও। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘সিকিমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি নয়।’’

গত শনিবার কম্পনের পরেই দেওয়ালে চাপা পড়ে নকশালবাড়ির বাসিন্দা রুকবান খাতুনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। মাথায় ইট পড়ে মৃত্যু হয়েছিল আমবাড়ির মংলু রায়ের। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন কলোনির বাসিন্দা ভানুরঞ্জন দাস (৮০) ভূমিকম্পের পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে জানা গিয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা দীনেন দাসও (৭২) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। মিরিকের বাসিন্দা পুষ্পা প্রধানও (৭০) বাড়ি থেকে বের হতে গিয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়।

রবিবারের ভূমিকম্পে শিলিগুড়ির বেশ কয়েকটি বহুতলের ক্ষতি হয়েছে। মাটিগাড়ার একটি উপনগরীর পাশে শপিং মলের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। ডুয়ার্স বাস স্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায় একটি হোটেলের দেওয়ালে চিড় ধরেছে, সেবক রোডের দুই মাইল এলাকার বেশ কয়েকটি বহুতলেও ফাটল দেখা গিয়েছে। প্রধাননগরের একটি তিনতলার বাড়ির দেওয়াল, পিলারে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। বাড়িটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আতঙ্কে পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে জখমও হয়েছে অনেকে। তিনবাতি এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার কল সেন্টারের দোতলা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে অন্তত নজন জখম হয়েছেন। রবিবারের ভূমিকম্পের পরে চোট আঘাত পেয়ে ৪৩ জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁদের অনেককেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভূমিকম্পের সময়ে বারান্দা থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন। তাঁর এক পা ভেঙেছে। রাস্তায় দৌড়নোর সময়ে পা হড়কে পড়ে শঙ্কর মণ্ডলের দুটি পা-ই ভেঙে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ি জুড়েই এমন নানা ঘটনার খবর মিলেছে।

ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে দার্জিলিঙের ম্যাল, চৌরাস্তায় পর্যটকদের চলে আসতে দেখা গিয়েছে রবিবার দুপুরে। দার্জিলিঙের বিভিন্ন বাড়িতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দার্জিলিঙের বাসিন্দা ২৬ বছরের দীপেশ রাইয়ের নেপালে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দীপেশের কাকা দেবেনবাবু জানিয়েছেন, গত সপ্তাহেই দীপেশ নেপালের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময় ভীমসেন মিনার দেখতে গিয়েছিল দীপেশ। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’ দীনেশ সিনতাম চা বাগানে থাকতেন। হুগলির পিনাকী মজুমদার শনিবারই দার্জিলিং পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কম্পন শুরু হতেই চৌরাস্তার খোলা জায়গার দিকে দৌড়েছি। দু’দিন পরপর কয়েকবার ভূমিকম্পের পরে, সবসময়েই আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বেড়ানোর মজাটাও পাচ্ছি না।’’

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মালদহেও। শনিবারের ভূমিকম্পে কালিয়াচকের সুজাপুর নইমৌজা হাই স্কুলের সিঁড়ির রেলিং এর প্রাচীর ভেঙে গিয়ে বহু পড়ুয়া জখম হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচ জনের আঘাত গুরুতর ছিল। অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজেহার হোসেন। এ দিন তিনিও ছাড়া পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে বিশ্রাম করছিলাম। হঠাৎই দেখে হাত পা কাঁপছে। প্রথমে ভেবেছিলাম শরীর অসুস্থ খাকার জন্য এমন হচ্ছে। পরে বুঝতে পারি ভূমিকম্প হচ্ছে।’’ দক্ষিণ দিনাজপুরেও আতঙ্কিত বাসিন্দাদের রাস্তায় দেখা গিয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডুয়ার্সেও। মালবাজার ব্লকের চেংমারি পঞ্চায়েতের গোলাবাড়ি এলাকার ১৪ বছরের এক কিশোর সুকুমার মাঝি কম্পনে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তাকে মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ভূমিকম্পে শ্রমিক আবাসের দেওয়াল ভেঙেছে ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের বড়দিঘি চা বাগানে। বড়দিঘি চা বাগানের মুন্সি লাইনে পাঁচটি শ্রমিক আবাসে গত শনিবারের কম্পনের পরেই বড় ফাটল তৈরি হয়। রবিবারের ফের কম্পনে তিনটি শ্রমিক আবাসের দেওয়ালের একাংশে চিড় ধরে, একটি শ্রমিক আবাসের একদিকে দেওয়াল ভেঙেও পড়ে। অধিকাংশ শ্রমিক আবাসগুলিই অনেকদিনের পুরনো হওয়ার কারণেই সামান্য কম্পনেই চিড় ধরেছে বলে শ্রমিকদের অভিযোগ।

ফাটল ধরেছে প্রাচীন জল্পেশ মন্দিরে এবং বহুতলে। জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন হোটেল ছেড়ে রাস্তায় দাঁড়ান পর্যটকরা। হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন রোগীদের অনেকে বাইরে বেড়িয়ে ফাঁকা জায়গা খুঁজে নেন। ভূমিকম্পের আতঙ্কে শহর ও সংলগ্ন এলাকায় অসুস্থ পাঁচজন মহিলাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার কম্পনে শহরের অন্তত ত্রিশটি বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরে। রবিবার অন্তত দশটি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। সুহৃদ লেনের একটি বহুতল সামান্য কাত হয়েছে টের পেয়ে শিল্পসমিতি পাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

darjeeling hill area building crack darjeeling schools closed darjeeling fresh earthquake darjeeling hill tremor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy