তেনজিং-পুত্র জামলিং
২৬ হাজার ফুটের উপরে যেখানে অক্সিজেন অনেকটাই কমে যায়, পাহাড়ের সেই অঞ্চলকে বলে ডেথ জোন। আর ডেথ জোনের নিয়ম না মানাতেই বিপদ ক্রমশ বাড়ছে এভারেস্ট অভিযানে। এমনই মনে করছেন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের (এইচএমআই) প্রশিক্ষকরা। যে দলে রয়েছেন তেনজিং নোরগের ছেলে জামলিংও।
১৯৯৬ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেন জামলিং। সে বছরই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয় এভারেস্টে। জামলিং বলেন, ‘‘ডেথ জোনেই অভিযাত্রীদের সঙ্কট বেশি। সেখানে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ফুসফুসের উপরে বেশি চাপ পড়ে। তাই ডেথ জোনের জন্য তৈরি হয় নির্দিষ্ট নিয়ম। কিন্তু সেই নিয়ম যে মানা হচ্ছে না, তা পরিষ্কার।’’
জামলিংয়ের ব্যাখ্যা, ডেথ জোনে পাহাড়ে চড়ার মূল শর্তই হল সেখানে অতিরিক্ত ভিড় জমতে না দেওয়া। সেখানে প্রতিটি অভিযাত্রীকে নির্দিষ্ট জায়গা দেওয়া দরকার। বাতাসে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মিশ্রণ যাতে ঠিকমতো হতে পারে, সেই সুযোগটা দেওয়া উচিত। কিন্তু তা তো হচ্ছেই না, উল্টে রাস্তায় এত লোক যে গতি কমে যাচ্ছে সবারই। ‘‘এই অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ থাকলে শরীর যতই সক্ষম হোক না কেন, ক্লান্ত হয়ে পড়তে বাধ্য। ফলে আশঙ্কাও বাড়ে,’’ বললেন তিনি। তেনজিং-পুত্রের মতে, এই অবস্থা থেকে বাঁচার একটাই উপায়। পারমিট দেওয়ার আগে শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা আরও কঠোর করা।
এভারেস্ট অভিযান চিন দিয়েও হয়। তবে এখন অভিযাত্রীরা নেপালের রুট দিয়েই বেশি যাচ্ছেন। জামলিং-এর পূর্বসূরি দোর্জি লাটু বলেন, ‘‘এভারেস্টে যত রুট রয়েছে, তার মধ্যে দক্ষিণ পূর্বের (নেপালের এই রুট) রুটটাই সবচেয়ে সহজ। তাই সেখানে ভিড় উপচে পড়ে। সে জন্যই দুর্ঘটনা বাড়ছে।’’
১৯৮৪ সালে এভারেস্ট জয় করেন দোর্জি। দুঃখ করে বলছিলেন, ‘‘এভারেস্টের গুরুত্ব আমরাই কমিয়ে দিচ্ছি।’’ কী ভাবে? ‘‘এত বেশি লোক যাচ্ছে। পুরো বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গিয়েছে এভারেস্টের। এ সব হচ্ছেটা কী!’’ একই কথা বললেন নিমা নরবু শেরপা। নব্বইয়ের দশকে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন তিনি। এ দিন বললেন, ‘‘শুনলাম এ বার ২৯টি দল অভিযান চালাচ্ছে। দলগুলির মোট অভিযাত্রীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচশো। শেরপা, মালবাহক মিলে সে সময়ে এভারেস্টের পথে প্রায় আটশো জন উঠছেন। ভাবলেই শিউরে উঠছি।’’
সদ্য এভারেস্ট জয় করে ফিরেছেন দেবরাজ দত্ত। তাঁর যুক্তি, ‘‘সামিট থেকে ফেরার সময় খুব বেশি হলে বেলা বারোটা। এর মধ্যে যদি শৃঙ্গ ছোঁয়া যায় তো ভাল। না হলে যেখানে আছো, সেখান থেকে ফেরার পথ ধরো। কারণ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া খামখেয়ালি হয়ে যায়।’’
জামলিং ও দোর্জি বলছেন, ভাল পর্বতারোহী হতে গেলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, পাহাড়ে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সঙ্গে দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। নেপালের উচিত পারমিট দেওয়ার আগে এই শর্তটি ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা।
ভিড়ের যুক্তি দেন এইচএমআই-এর প্রিন্সিপাল গুলশন চাড্ডাও। তিনি জানান, এই ভিড়ের ফলেই ভ্রান্তি বাড়ছে। যে এজেন্সির মাধ্যমে পর্বতারোহীরা যাচ্ছেন, তাঁরা কতটা দক্ষ, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। সেখানে শুধু টাকার কথা ভাবলে এমন দুঃখজনক ঘটনার কথা হয়তো আরও শুনতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy