সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ আচার্য-রাজ্যপাল। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে একের পর এক কমিটিও গঠন করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। পুরো বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির পড়ুয়ার হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছিল শিক্ষকদের। কিন্তু বছর ঘুরতে চলল, এখনও সমস্যার সুরাহা হল না।
ঘোর অস্বস্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষই। আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায় যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই সুনাম নষ্ট হচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন কর্তাদের একাংশ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসার (এফও) হরিসাধন ঘোষের বিরুদ্ধে। সেই সময় প্রধান অভিযোগকারিণী সহ-উপাচার্য (অর্থ) সোনালী বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মাথায় রেখে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগকারিণী কী ভাবে তদন্ত কমিটির প্রধান হতে পারেন, তা নিয়েই বিস্তর প্রশ্ন ও অভিযোগ ওঠে। তার মধ্যেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ওই আর্থিক অনিয়মের জন্য দায়ী করা হয় ফিনান্স অফিসারকেই।
যথাযথ তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের একাংশ। তার জেরে শিক্ষক-নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে ছাত্র সংসদের কিছু সদস্য এবং বহিরাগতদের বিরুদ্ধে। তখনই হস্তক্ষেপ করেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। তাঁর নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ একটি ডিসিপ্লিনারি (শৃঙ্খলা রক্ষা) কমিটি গড়ে আবার তদন্তের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বছর পার হতে চলল, এখনও কোনও অগ্রগতিই হয়নি ওই তদন্তের! তা নিয়েই ক্ষুব্ধ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়।
ওই সমস্যার সমাধান না-হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান এক কর্তা। তিনি জানান, অর্থ অফিসারের পদটিই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই কাজের জন্য অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করতে হয়েছে দু’জনকে। ওই গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী কর্মী থাকাটাই উচিত। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কিছুই করা যাচ্ছে না। উপরন্তু অর্থ অফিসার যে-কাজ একা করতেন, সেটা দু’জনকে দিয়ে করাতে হচ্ছে। ভোগান্তি হচ্ছে কর্মী, শিক্ষকদেরও।
কর্তারাও মানছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেড় বছর ধরে আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায় মুখ পুড়ছে। কিন্তু খোদ আচার্য-রাজ্যপালের উদ্যোগ সত্ত্বেও তদন্ত সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না কেন?
তদন্ত এগোয়নি, এই অভিযোগ মানতে মোটেই রাজি নন ডিসিপ্লিনারি কমিটির কর্তারা। কমিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত তো প্রায় শেষ। আদালতের নির্দেশ মেনে সিন্ডিকেটে ওই রিপোর্ট পেশ করা হবে।’’
কবে দেওয়া হবে রিপোর্ট?
‘‘শীঘ্রই,’’ আশ্বাস দিয়েছেন ডিসিপ্লিনারি কমিটির ওই সদস্য। তাঁর আশ্বাসে অবশ্য মোটেই খুশি হতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তদন্ত শেষ হওয়ার কথা তো বহু দিন আগেই। এত দিনেও রিপোর্ট পেশ করা যায়নি কেন?’’ শিক্ষকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, কর্তৃপক্ষই বা তদন্ত রিপোর্টের জন্য কেন চাপ দিচ্ছেন না কমিটিকে?
সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ওই কমিটিকে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়ার কথা। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তাই কমিটির কাজে বা রিপোর্ট পেশের ব্যাপারে নাক গলাচ্ছেন না।
কিন্তু তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিতে দেরি করায় কর্তৃপক্ষকেই তো অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাঁরা এর প্রতিকারে উদ্যোগী হচ্ছেন না কেন?
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন বলেন, ‘‘রিপোর্ট শীঘ্র জমা পড়লে তো ভালই হয়। আমরাও চাইছি, সেটা দ্রুত আসুক।’’
আচার্য-রাজ্যপাল নিজে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষও চান দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ুক। তবু সুরাহা অধরা কেন? রিপোর্ট নিয়েই বা গড়িমসি কেন?
উত্তরে নীরব থাকারই পথ নিয়েছেন কর্তারা।
‘‘সমস্ত দায় আমাদের উপরে এসে পড়ছে। কিন্তু এর জন্য কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নন। কমিটি রিপোর্ট না-দিলে আমাদের তো কিছু করার নেই,’’ বললেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা।
এই টানাপড়েন নিয়ে সরব হয়েছে শিক্ষক সংগঠন কুটা। ওই সংগঠনের তরফে দিব্যেন্দু পাল বলেন, ‘‘আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হতেই বছর পার হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের পক্ষে এটা ক্ষতিকর। দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy