Advertisement
E-Paper

ব্লকে আবেদন করায় ‘মারধর’ ক্ষতিগ্রস্তদের

প্রথম দফায় রাজ্যের আমপান-বিধ্বস্ত জেলাগুলিতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছিল পঞ্চায়েত এবং কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি।

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২০ ০৫:০৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েতের করা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তাঁদের জায়গা হয়নি। ব্লক প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণের আবেদন করায় এ বার কপালে জুটল মারধর, হুমকি!

হুগলির আরামবাগের মায়াপুর-১ পঞ্চায়েতের মাদারতলা গ্রামের বেশ কিছু আমপান-ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ তুলেছেন। শনিবার তাঁরা গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগপত্র জমা দেন মহকুমাশাসক (আরামবাগ) নৃপেন্দ্র সিংহের কাছে। নির্ভয়ে বাড়িতে বসবাসের ব্যবস্থা করারও আবেদন জানান। তাঁদের ‘অপরাধ’— ওই নেতাকর্মীদের না-জানিয়ে তাঁরা সরাসরি আবেদন করেছেন, এমনটাই বলছেন ওই ক্ষতিগ্রস্তেরা।

প্রথম দফায় রাজ্যের আমপান-বিধ্বস্ত জেলাগুলিতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছিল পঞ্চায়েত এবং কিছু ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু সেই তালিকায় ভুরি ভুরি দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে। দলের গায়ে লেগে যাওয়া দুর্নীতির কালি মুছতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনকেই সংশোধিত তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন। সেই মতো ব্লক অফিসগুলিতে আবেদন জমা নেওয়া শুরু হয়।

মাদারতলা গ্রামের শেখ বাদশা, শেখ সাইফুল ইসলাম, শেখ মান্নান, শেখ হামিদ-সহ বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্তের পঞ্চায়েতের তালিকায় জায়গা হয়নি। এখানেও ওই তালিকায় স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নয়া নির্দেশে তাঁরা ভরসা পেয়েছিলেন। এখনও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতেই কোনওমতে মাথা গুঁজে রয়েছেন তাঁরা। ব্লক অফিস থেকে আবেদন চাওয়ায় দিন ছয়েক আগে তাঁরা তা জমা দেন। তারপর থেকেই অঞ্চলের তৃণমূল নেতা রফিক মল্লিকের নেতৃত্বে হুমকি দেওয়া চলছে এবং তাঁদের অনুমতি ছাড়া আবেদন করায় কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড়ও মারা হয়েছে বলে সাইফুলদের অভিযোগ।

শেখ বাদশা বলেন, “আসলে আমরা নেতাদের কর্তৃত্ব এড়িয়ে সরাসরি প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ায় ওঁদের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। যদি তদন্তে ওঁরা আগের তালিকা নিয়ে ফেঁসে যায়! তাই সমস্ত বিষয়টা মহকুমাশাসককে জানিয়ে আমরা ১৬ জন আবেদন করেছি।’’

যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েতের নেতা, সেই রফিক মল্লিক অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “অভিযোগ ঠিক নয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা ক্ষতিপূরণ পান, আমরাও চাই। ওঁদের অনেককে আমরাই বলেছিলাম ব্লকে আবেদন করতে। এতে আমাদের আপত্তি থাকতে যাবে কেন? তদন্ত করবে তো ব্লক প্রশাসন।” মহকুমাশাসক বলেন, “বিষয়টা বিডিও দেখে ব্যবস্থা নেবেন। সরকারের ঘোষণা মতো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের নিজেদেরই আবেদন করতে বলছি। ব্লকের এক্সটেনশন অফিসারদেরই সরেজমিনে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।”

ক্ষতিগ্রস্তদের ওই অভিযোগে দলেরই ভাবমূর্তি আরও একবার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না? আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “বিষয়টা আমাকে কেউ জানায়নি। কেউ নিজেরা ক্ষতিপূরণের আবেদন করলে সেখানে নেতাদের হস্তক্ষেপ বা খবরদারির কোনও জায়গা নেই। বিষয়টা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।”

তবে দলেরই একটা অংশ মেনে নিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নয়া ঘোষণায় পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের অনেকেরই আপত্তি আছে। কারণ, এতে পঞ্চায়েত বা জনপ্রতিপ্রতিনিধের উপর আস্থা হারিয়ে মানুষ সরকারি ব্যবস্থাপনার উপরই ভরসা রাখবেন। তা ছাড়া, দ্বিতীয় দফার তালিকায় মানুষ টাকা পেলে আগেরবার দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়ে যাবে। বিরোধীরা মনে করছেন, এ ভাবে মারধর করে ক্ষতিগ্রস্তদের নিজেদের বশে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।

Cyclone Amphan Scam Compensation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy