Advertisement
E-Paper

ঝড়ে মৃত বেড়ে ৮৬, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ত্রাণ নিয়ে অসন্তোষ বিভিন্ন জেলায়

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘর হারানো বহু বাসিন্দা সামান্য ত্রিপল পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই জেলায় এখনও আট জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। প্রায় দু’লক্ষ হেক্টর বিঘের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৪:২১
আমপানের তাণ্ডবে উপড় গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। ছবি: পিটিআই।

আমপানের তাণ্ডবে উপড় গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। ছবি: পিটিআই।

আমপানের হামলায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৮৬। শুক্রবার নবান্ন থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, রাজ্যে সব থেকে বেশি (২৭ জনের) মৃত্যু হয়েছে গাছ চাপা পড়ে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২২ জন এবং দেওয়াল চাপা পড়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাপের কামড়-সহ অন্যান্য কারণেও কয়েক জন মারা গিয়েছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, বহু এলাকায় টেলি-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার সরেজমিন পরিস্থিতি নবান্নে এখনও আসেনি। তার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসেবেও সময় লাগবে।

প্রশাসন জানায়, ৬ লক্ষেরও বেশি দুর্গত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। ৫১৩৬টি ত্রাণ শিবির চালু রয়েছে এবং সেগুলির জন্য প্রায় দেড় হাজার অস্থায়ী রান্নাঘর চলছে। তবে বহু বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিলি নিয়ে অসন্তোষ-অভিযোগ শোনা গিয়েছে। পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে বিদ্যুৎ পরিষেবা এবং জলের আকাল নিয়েও। ত্রাণ নিয়ে অসন্তোষ নেই বলে দাবি করলেও প্রশাসনের বক্তব্য, বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর বিপুল ক্ষতি হয়েছে। বহু এলাকায় গাছ পড়ে থাকায় মেরামতিতে সময় লাগছে। পানীয় জল সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঘর হারানো বহু বাসিন্দা সামান্য ত্রিপল পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই জেলায় এখনও আট জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। প্রায় দু’লক্ষ হেক্টর বিঘের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রশাসন জানায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ত্রাণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক লক্ষ ত্রিপল, ২০০ টন চাল, ৭০ হাজার পোশাক বিলি করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা প্রশাসন জানায়, জেলায় ২১ জন মারা গিয়েছেন। ত্রাণশিবিরে আড়াই লক্ষ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবারও বিলি করা হচ্ছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রত্যন্ত গ্রামে ত্রাণ পর্যাপ্ত পৌঁছনো যায়নি বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রশাসন কি ‘অথর্ব’, প্রশ্ন আলো-জলহীন মহানগরের

আরও পড়ুন: হিসহিস করছিল যেন রাগী গোখরো, জমি আর চোখের নোনা জল একাকার

পূর্ব মেদিনীপুরেও পর্যাপ্ত ত্রাণ না-মেলা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিলি করতে সমস্যার কথা আগেই জানিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সূত্রের খবর, খেজুরি-২ ব্লকের ১০ হাজারেরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাত্র আড়াই হাজার ত্রিপল মজুত রয়েছে। নন্দীগ্রামে ২ হাজার ত্রিপল প্রয়োজন হলেও রয়েছে ১৪০০টি। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির আঁচ করতে পারেননি জেলা প্রশাসন। তাই আগাম ত্রাণ জোগাড়ে ঘাটতি রয়েছে। টেলি-যোগাযোগ বিপর্যস্ত হওয়ায় বহু প্রত্যন্ত এলাকায় কত ত্রাণ প্রয়োজন, তা-ও সময়মতো জানা যাচ্ছে না। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে। তবে দ্রুত সব কিছু সামাল দেওয়া যাবে বলে আশা করছি।’’

হাওড়ায় যাঁদের বাড়ির টালি বা টিনের চাল উড়ে গিয়েছে, তাঁদের ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া, দুর্গতদের পঞ্চায়েত থেকে দেওয়া হচ্ছে ৬ কেজি করে গম। কিন্তু ত্রিপল এবং গম বহু জায়গায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ। দুর্গতদের ক্ষোভও বাড়ছে। এ দিন ডোমজুড় ও বালি-জগাছা ব্লকে ত্রাণ বিলি পরিদর্শনে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ওই এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হাজারের উপরে কাঁচা ঘর ভেঙেছে। দুর্গতদের যথাসাধ্য ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। হুগলিতে ২১৩টি ত্রাণ শিবিরে ২৯ হাজার মানুষকে রাখা হয়েছে। ১০ হাজার পরিবারকে ত্রিপল বিলি করা হয়েছে।

এ দিকে, পূর্ব বর্ধমানে চাষের ক্ষতির অঙ্ক ক্রমশ বাড়ছে। শুক্রবার জেলার উপ কৃষি-অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ছ’শো কোটি টাকা। সম্পূর্ণ ক্ষতির হিসেব শনিবার করা হবে।’’ সূত্রের খবর, ৪২,০৭০ হেক্টর জমির বোরো ধানে ক্ষতির পরিমাণই প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও প্রচুর তিল, পাট, আনাজের ক্ষতি হয়েছে। নদিয়াতেও মূলত ক্ষতি হয়েছে পান, পাট, ফুল, তিল, কলা চাষের। চাষের ক্ষতিপূরণ কবে মিলবে, তা নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা। জেলা উপ কৃষি-অধিকর্তা (প্রশাসন) রঞ্জন রায় জানান, ‘‘চাষের ক্ষতির তালিকা নবান্নে পাঠানো হবে। নবান্ন সিদ্ধান্ত নিলেই দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy