বিধ্বস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা। ছবি: পিটিআই।
সাগরদ্বীপের মাটি ছুঁয়ে দু’দফায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকাকে কার্যত ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে গেল আমপান। দুপুরের পরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপরে আছড়ে পড়ে রাত গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার দিকে ধেয়ে গিয়েছে ঝড়।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ঝড়ে দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। দুই জেলায় ভেঙেছে অসংখ্য মাটির বাড়ি, গাছ। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বন্ধ রাস্তাঘাট। টেলিফোন, ইন্টারনেট পরিষেবা বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই দুই জেলার বেশির ভাগ অংশে।
সমুদ্র-নদীতে দেড় থেকে তিন মিটার পর্যন্ত ঢেউ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। সন্ধ্যার পরে ঝড়ের তাণ্ডব কমলেও বেশি রাত পর্যন্ত প্লাবিত এলাকায় যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি প্রশাসন। ফলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিয়ে রাত পর্যন্ত অন্ধকারে প্রশাসন। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ সাগরদ্বীপে আঘাত হানে আমপান। তারপর কাছাকাছি বকখালি, কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জের উপর দিয়ে গোসাবা, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা, ক্যানিং এলাকা হয়ে রাতে উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ, সন্দেশখালির উপর দিয়ে বয়ে যায় ঝড়। উত্তর ২৪ বনগাঁ থেকেও বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে।
প্রথম দফায় ঘণ্টা দেড়েক তাণ্ডব চালায় আমপান। সাগরদ্বীপের সঙ্গে কাকদ্বীপ হয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগের যে মাধ্যম, কচুবেড়িয়া নদীঘাটের সেই জেটিটি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। সাগরদ্বীপের টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। আরও কয়েকটি জায়গায় খেয়াঘাটের জেটি ভেঙেছে বলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নামখানা, বকখালিতে ঝড়ের তাণ্ডবে প্রচুর বাড়ি ভেঙেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, গোসাবা, বাসন্তী, পাথরপ্রতিমা, সাগরদ্বীপ-সহ অন্তত ১৫টি জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে। গোসাবায় নদী প্রায় দেড় মিটার পর্যন্ত ফুলেফেঁপে ওঠে। গোসাবার রাঙাবেলিয়া, কুমিরমারি, লাহিড়িপুর, ঝড়খালি-সহ বহু জায়গাতেই নদী বাঁধ ভেঙে গ্রামে নোনা জল ঢুকতে শুরু করেছে। অনেক জায়গায় বাঁধে ধস নেমেছে। গাছ এবং বাড়ি ভাঙার কোনও হিসেবই করে উঠতে পারেনি প্রশাসন। শুধুমাত্র ভাঙড় ২ ব্লকেই পুরোপুরি ভেঙেছে সাড়ে ছ’হাজার বাড়ি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও সাড়ে ১৩ হাজার বাড়ির। সন্ধের পরে ঝড়ের তাণ্ডব আরও বেড়েছে । হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদে প্রচুর গাছ ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীবাঁধ ভাঙার উপক্রম হয়।
এ দিকে, এ দিন বেলার দিকে হাওয়া অফিস ঘোষণা করে, গতিপথ বদলে আমপান বনগাঁ হয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে। প্রশাসন তড়িঘড়ি ১১ হাজার মানুষকে স্কুলবাড়ি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, ফ্লাড শেল্টারে তুলে আনে। রাত ৮টা নাগাদ প্রবল হাওয়া বইতে শুরু করে গাইঘাটায়। ভাঙতে শুরু করে বাড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy