Advertisement
E-Paper

ফণীর ক্ষতিপূরণে ভোট কাঁটা

বাস্তবে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, ভোটের ব্যস্ততার জেরেই বিপাকে ফণীতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পঞ্চায়েত কর্মীদের থেকে সময়ে খবর না মেলায় অনেকেই ক্ষতিপূরণের ফর্ম যথাসময়ে জমা দিতে পারেননি।

দিগন্ত মান্না

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০১:৫০
জল জমেছে ধানজমিতে। পটাশপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

জল জমেছে ধানজমিতে। পটাশপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

ভোটের মধ্যেই এসেছিল সে। এ রাজ্যে ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় কম হলেও ভোট রাজনীতিতে জুড়ে গিয়েছে ফণী। খোদ প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে দরাজ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে সরকার।

বাস্তবে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, ভোটের ব্যস্ততার জেরেই বিপাকে ফণীতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পঞ্চায়েত কর্মীদের থেকে সময়ে খবর না মেলায় অনেকেই ক্ষতিপূরণের ফর্ম যথাসময়ে জমা দিতে পারেননি। পরিসংখ্যান বলছে, জেলায় কৃষি বিমার আওয়তায় থাকা কৃষকের সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। তার মধ্যে ফণীতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার চাষি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ক্ষতিপূরণের আবেদনপত্র জমা পড়েছে মাত্র আড়াই হাজার। পাঁশকুড়ার ব্লক সহ-কৃষি অধিকর্তা স্বপন মাইতি জানান, গোটা ব্লকে একটি আবেদনও জমা পড়েনি।

গত ২ মে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকার বয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় ফণী। দুর্যোগ নিয়ে কৃষি দফতরের তরফে অন্তত চার দিন আগে কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছিল। পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, চট জলদি বোরো ধান কেটে নেওয়ার। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, জেলায় ১৭ হাজার হেক্টর ধানজমিতে ফণীর কম-বেশি প্রভাব পড়েছে। তার মধ্যে আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে ধানের ক্ষতি হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিমা সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিপর্যয়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কৃষককে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানাতে হয়। সেই মতো গত ৪ এবং ৫ মে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য করে জেলা কৃষি দফতর। সেই তথ্য জানিয়ে সব ব্লকের কৃষি অধিকর্তাদের ই-মেল করা হয়। ব্লক কৃষি দফতর থেকে ই-মেল পৌঁছয় জেলার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতেও। কিন্তু ওই পর্যন্তই। অধিকাংশ পঞ্চায়েত প্রধান ও প়ঞ্চায়েত সদস্যরা ভোট প্রচারে ব্যস্ত থাকায় সেই তথ্য আর কৃষকদের কাছে পৌঁছয়নি।

ফলে, সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। কোলাঘাটের বক্সীতলা গ্রামের চাষি মোহন দাস বলেন, ‘‘ফণীতে ১২ কাঠা জমির ধান নষ্ট হওয়ার মুখে। গত সোমবার কৃষি দফতরের অফিসে গিয়ে জানতে পারি, বিমার আবেদনের সময়সীমা শেষ।’’ বাঙ্কাডাঙা গ্রামের ভাগচাষি চণ্ডী সামন্তর ক্ষোভ, ‘‘বিমা থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারছি না। কৃষি দফতর বলছে, সময় ফুরিয়ে গিয়েছে।’’

ভোটের কাজে ব্যস্ত থাকায় কৃষি দফতরের পাঠানো ই-মেল তাঁদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে বলে মানছেন পঞ্চায়েত প্রধানরাও। পাঁশকুড়া ব্লকের রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অজিতকুমার সামন্ত বলছেন, ‘‘ভোটের কাজে সত্যি খুব ব্যস্ত। ই-মেলের পাশাপাশি ফোনে জানালে আমরা কৃষকদের জানাতে পারতাম।’’ প্রতাপপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শঙ্করপ্রসাদ সামন্তের আবার স্বীকারোক্তি, ‘‘এলাকায় ধান চাষে বেশ ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণের আবেদনের বিষয়ে কিছুই জানি না।’’

যে দুর্যোগের ক্ষত সামলাতে সরকার অর্থ বরাদ্দ করছে, মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বারবার কৃষকদের পাশে থাকার কথা বলছেন, সেখানে ভোটের গেরোয় কেন এই অবস্থা সেই প্রশ্ন উঠছে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। কিছু করার থাকলে নিশ্চয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

Cyclone Fani ফণী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy