Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রুদ্র বর্ষা

কেউ কি দেখতে পাচ্ছে না লোকটা উড়ে যাচ্ছে

পঞ্চাশ বছর বয়সে এসে বুঝলাম, ওড়া কাকে বলে! চাষার বেটা। নিজেও চাষি। বিমানে চড়ব, সে সঙ্গতি নেই। কিন্তু বুধবার বিমান ছাড়াই উড়লাম। বলা ভাল, উড়িয়ে নিল। পাগলা একটা ঝড়। মিনিটখানেকের সে উড়ানের পরে গায়ে এখনও কাঁটা দিচ্ছে!

ঝড়ের তাণ্ডবে ফাটল ধরেছে গাছে। দেগঙ্গায় সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ঝড়ের তাণ্ডবে ফাটল ধরেছে গাছে। দেগঙ্গায় সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ভবরঞ্জন বিশ্বাস
অশোকনগর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৪:২৫
Share: Save:

পঞ্চাশ বছর বয়সে এসে বুঝলাম, ওড়া কাকে বলে!

চাষার বেটা। নিজেও চাষি। বিমানে চড়ব, সে সঙ্গতি নেই। কিন্তু বুধবার বিমান ছাড়াই উড়লাম। বলা ভাল, উড়িয়ে নিল। পাগলা একটা ঝড়। মিনিটখানেকের সে উড়ানের পরে গায়ে এখনও কাঁটা দিচ্ছে!

সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। বাদলা দিন। কখনও জোরে, কখনও আস্তে বৃষ্টি পড়ছে। পড়েই চলেছে। কাজলা গ্রামের বাড়ি থেকে বড়জোর এক কিলোমিটার দূরে আমার জমি। সেখানে গিয়েছিলাম ধান রুইতে। আশেপাশের খেতে অনেকেই কাজ করছিল। বেলা ১১টা নাগাদ হঠাৎ বৃষ্টির জোর বাড়ল। মাথা তুলতে নজরে এল, কুচকুচে কালো আকাশের মাঝ বরাবর লালচে আভা। যেন আগুনের গোলা গিয়েছে। চোখ ফেরাতে পারিনি।

মনে হল, যেন সমুদ্রে বুক-জলে দাঁড়িয়ে রয়েছি। বুক-মাথা ডুবিয়ে ঢেউয়ের মতো হাওয়ার এক-একটা ঝাপটা যাচ্ছে। শরীর যেন ঢেউয়ের তলায় ডুবে রয়েছে। হাত-পা নাড়ানোর জো নেই। ঢেউ উঠছে নিজের খেয়ালখুশিতে। খেলা করছে আমাকে নিয়ে। দুলছি। ঢেউ যেমন দোলায়।

মাথার উপর দিয়ে শনশনিয়ে কী সব যেন উড়ে যাচ্ছে। খড়-টিনের চাল, গাছের ডাল-পাতা, পাখির বাসা, কাপড়—আরও কত কী।


উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। নগরউখড়ায়। ছবি: শান্তনু হালদার।

ঘোর কাটল। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে ছুটলেও আমার বাড়ি পৌঁছতে মিনিট দশেক। বাড়িতে বউ, ছেলেমেয়ে আছে। আমার বেমক্কা কিছু হয়ে গেলে কে দেখবে ওদের? আর এ যা ঝড়, ওদেরও না জানি কী বিপদ হয়! হাওয়ার গোঙানি বাড়ছে। মনে হচ্ছে, কানের পর্দা ফাটিয়ে দেবে। হাতের নিড়ানি ফেলে এক ছুট। কিন্তু বাতাস যেন জগদ্দল ভারী। সামনের দিকে পা চলছে, মাটি পিছোচ্ছে না। দেখতে দেখতে পা মাটি ছাড়ল।

ষাট কেজির কাছাকাছি ওজন আমার, উড়ছি! কান ভোঁ-ভোঁ করছে। মাটি কত নীচে, পাঁচ না পনেরো ফুট? জানি না! হাত-পা ছুড়ছি। এক রত্তিও এগোচ্ছি না! পা দিয়ে মাটি ছোঁয়ার চেষ্টা করছি। থই পাচ্ছি না! বেশ বুঝছি, ঝড় আমায় নিয়ে লোফালুফি খেলছে। কেউ কি দেখতেও পাচ্ছে না, একটা লোক বেমালুম উড়ে যাচ্ছে!

অনেকক্ষণ, না অল্পক্ষণ? ঠাকুর-দেবতা যে যেখানে আছ, বাঁচাও! আর বোধ হয় বাড়ি ফেরা হল না!

ফের একটা ঝাপটা। দমকা হাওয়া আমাকে উড়িয়ে নিয়ে এ বার বোধ হয় আছড়ে ফেলবে! ফেলল। পড়লাম নিজের খেতেই, জলের মধ্যে। ভাগ্যিস! তাই হাঁটু আর ঘাড়ে ছাড়া, তেমন চোট লাগেনি। তবে যেখানে ছিলাম, আর যেখানে পড়লাম— মাঝের দূরত্ব অনেকটাই। হাওয়ার জোর কমতে ফের ছুটেছি বাড়ির দিকে। পৌঁছে দেখি, পরিবার সুস্থ। তবে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। সেই ঝড়ে যাতে একটু আগে আমিও উড়েছিলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE