Advertisement
E-Paper

ত্রাণ শিবিরেও প্রাণের ভয়

 রামনগরের বালিসাই থেকে তাজপুরের সরকারি আয়লা কেন্দ্রে এসেছিলেন রাজকুমার বেরা।

কেশব মান্না, গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২১ ০৫:৪৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ থেকে বাঁচতে মঙ্গলবারই ত্রাণ শিবিরে উঠে এসেছিলেন উপকূল-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকাংশ এলাকার কাঁচা বাড়ির বাসিন্দারা। বুধবার সকালেও প্রচুর মানুষ ত্রাণ শিবিরে পৌঁছন। কোভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে থাকা-খাওয়ার আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু দুর্যোগের মধ্যেই ত্রাণ শিবিরের অব্যবস্থা নিয়ে উঠল অভিযোগ। ক্ষোভে অনেকে ত্রাণ শিবির ছেড়ে চলেও গেলেন।

রামনগরের বালিসাই থেকে তাজপুরের সরকারি আয়লা কেন্দ্রে এসেছিলেন রাজকুমার বেরা। তাঁর কথায়, ‘‘দিদির পাকা বাড়িও ডুবেছে। তাই গোটা পরিবার নিয়ে আয়লা কেন্দ্রে চলে এসেছিল। কিন্তু সকালেই ফোন করে দিদি বলল, ‘এখানে এক মুহূর্ত থাকলে আর বাঁচতে পারব না’। তাই ওদের নিয়ে চলে যাচ্ছি।’’ নবতিপর এক বৃদ্ধাকে নিয়ে ওই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছিল চাঁদপুর গ্রামের একটি পরিবার। সমুদ্রে জোয়ার কিছুটা কমতে বৃদ্ধাকে দোতলা থেকে কোনওরকমে নীচে নামান পরিজনেরা। পরিবারের এক সদস্য বললেন, ‘‘কিসের ভরসায় থাকি বলুন তো! মাথার উপরের ছাদ বাঁশের খুঁটির ঠেকনা দেওয়া। ঝড় ভেঙে পড়লে আর বাঁচব না।’’

ঘূর্ণিঝড় এবং সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় উপকূলবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখতেই জেলা জুড়ে এমন বহু স্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র গড়েছে রাজ্য সরকার। তাজপুরে সমুদ্রের একেবারে গা ঘেঁষে আশ্রয় শিবির তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। এ দিন আয়লা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন রামনগর-২ ব্লকের মন্দারমণি সংলগ্ন দাদনপাত্রবাড় গ্রামের বহু মানুষ। কিন্তু সকাল থেকে বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাসে ওই আশ্রয় কেন্দ্রের দোতলার ছাদ পর্যন্ত জলের ঝাপটা পৌঁছয়। বিপদ বুঝে অনেকে সেখান থেকে চলে যান। এনডিআরএফের দল চেষ্টা করেও ওই আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেনি। কাঁথির সাতমাইলের বাসিন্দা শঙ্কর পাত্র বলেন, ‘‘১১০টি পরিবারের সদস্য ওই আশ্রয় কেন্দ্রে আটকে রয়েছেন। প্রত্যেকেই ভয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে চাইছেন। প্রশাসনকে বলেও সুরাহা হয়নি।’’

এগরা মহকুমার বেশ কিছু ত্রাণ শিবিরে আবার খাবার নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন দুর্গতেরা। তাঁদের অভিযোগ, শিবিরে রান্না করা ভাতের পরিবর্তে চিড়ে-মুড়ি দেওয়া হয়েছে। শিশুদেরও বেবি ফুডের বদলে বিস্কুট ও চিড়ে-বাতাসা দেওয়া হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের যুক্তি, ত্রাণ শিবিরে যে সংখ্যক মানুষ আসার কথা, তার থেকে বেশি মানুষ চলে আসায় তড়িঘড়ি এতজনকে ভাত ও তরকারি রান্না করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এগরার বিধায়ক তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘ত্রাণ শিবিরগুলিতে নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। চিড়ে, মুড়ি-চানাচুর এবং শিশুদের জন্য বিস্কুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাতে ভাতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ তবে তিনি মানছেন, ‘‘কোথাও কোথাও বেশি মানুষ চলে আসায় দুপুরের খাবার নিয়ে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলেন, ‘‘যাঁরা চলে গিয়েছেন, তাঁদের সকলকেই পুনরায় সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। আয়লা কেন্দ্রগুলির অব্যবস্থা নিয়ে অহেতুক অভিযোগ করা হচ্ছে। বাড়িতে থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, যা এ দিনের জলোচ্ছ্বাসের পর সকলেই টের পেয়েছেন। যদি কোথাও কিছু সমস্যা থাকে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’’

Flood victims Cyclone Yaas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy