Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Sunderbans

Cyclone yaas: নদীবাঁধ রক্ষার চেষ্টা ব্যর্থ, নতুন করে ডুবল গোসাবা

তখনও জোয়ার শুরু হয়নি গোমর নদীতে। কিন্তু বেলা বাড়তেই জোয়ারের জল বাড়তে শুরু নদীতে।

বাঁচার লড়াই: চারদিকে জলে থইথই, পাড়ের খোঁজে ভেসে চলা। গোসাবার দুলকি গ্রামে।

বাঁচার লড়াই: চারদিকে জলে থইথই, পাড়ের খোঁজে ভেসে চলা। গোসাবার দুলকি গ্রামে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।

প্রসেনজিৎ সাহা
গোসাবা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৬:২৩
Share: Save:

শত চেষ্টাতেও কিছু হল না। গ্রামবাসীদের বাঁধ রক্ষার চেষ্টা ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার নোনা জলের তলায় চলে গেল গোটা গোসাবা ব্লক।

এ দিন ভোরের আলো ফুটতেই ঝুড়ি-কোদাল নিয়ে পাখিরালয়ের নদীবাঁধে চলে আসেন জয়দেব, সনাতন, সঞ্জয়রা। ভাঙা বাঁধ মেরামরত করতে হবে। বুধবারের জলোচ্ছ্বাসের সময়ে তাঁরা দীর্ঘক্ষণ নদীবাঁধে ত্রিপল চাপা দিয়ে বসেছিলেন। সম্পূর্ণ বাঁধ রক্ষা করতে না পারলেও অনেকখানি পেরেছিলেন গ্রামের সকলে মিলে। বাঁধের যে সব জায়গা দিয়ে জল ঢুকে গ্রাম প্লাবিত করেছিল, বৃহস্পতিবার সেই ফাঁকফোকর ভরাট করতেই উদ্যোগী হন জয়দেব, সনাতনরা। কিছুক্ষণের মধ্যে সেচ দফতরের কর্মীরাও বাঁশ-খুঁটি নিয়ে চলে আসেন। দ্রুত গতিতে বাঁধ মেরামতি শুরু হয়।

তখনও জোয়ার শুরু হয়নি গোমর নদীতে। কিন্তু বেলা বাড়তেই জোয়ারের জল বাড়তে শুরু নদীতে। সেই জল নতুন করে ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। ভাঙা নদীবাঁধের একপ্রান্তে তখন সবে কয়েকটা বাঁশের খুঁটি পোঁতা হয়েছে। গ্রামের ওই সব যুবক এবং সেচ দফতরের সব পরিশ্রম বৃথা করে জোয়ারের জল ফের ভাসিয়ে নিয়ে যায় গোটা এলাকা। নতুন করে জলমগ্ন হয় পাখিরালয়, আরামপুর-সহ গোসাবার বিস্তীর্ণ এলাকা।

বুধবার ইয়াস এবং জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে বাঁধ ভেঙে যে সমস্ত এলাকায় নোনা জল ঢুকতে পারেনি, এ দিন সেই সব এলাকাও প্লাবিত হয়। কার্যত গোটা গোসাবা দ্বীপ এবং ব্লক জলমগ্ন হয়। পাখিরালয়, দুমকি, সোনাগাঁ, রাঙাবেলিয়া-সর্বত্র এক অবস্থা। এ দিন সকালে নতুন করে জল ঢোকে কুমিরমারি, ছোট মোল্লাখালি, আমতলি, বিপ্রদাসপুর, রাধানগর তারানগর ও শম্ভুনগর দ্বীপেও। আতঙ্কে গ্রামবাসীরা ছোটাছুটি শুরু করে দেন। নদীর পাড় থেকে যাঁরা অনেকখানি ভিতরে বাস করতেন, জলমগ্ন হয়ে পড়া থেকে তাঁরাও রেহাই পাননি। মানুষজন ঘর থেকে জিনিসপত্র বের করে আশ্রয় নেন উঁচু রাস্তায়। একের পর এক রাস্তা, চাষজমি, পুকুর— সবই নোনা জলে ডুবে যায়।

প্রশাসন কার্যত অসহায়। দুর্গতেরা পানীয় জলটুকুও পাননি। কোনওমতে রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলি শিশুদের মুখে কী ভাবে একটু জল, খাবার তুলে দেবে ভেবে পাচ্ছিল না। তাদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সময় যত গড়ায়, ততই পরিস্থিতি খারাপ হয়। আচমকা গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় যাঁরা বাড়িতে আটকে পড়েছিলেন, পুলিশ ও এনডিআরএফের সহযোগিতায় তাঁদের কোনওমতে উদ্ধার করা হয়।

পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনতে আলোচনার জন্য এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ এবং ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক রবিপ্রকাশ মিনা গোসাবা ব্লক অফিসে আসেন। তাঁদের পৌঁছনোর মিনিট দশেকের মধ্যে ব্লক অফিস চত্বরও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সভাধিপতি বলেন, ‘‘গোসাবার পরিস্থিতি এক কথায় ভয়াবহ। মানুষজন চরম সমস্যায় পড়েছেন। যে ভাবে নদীর জল ক্রমাগত গ্রামে ঢুকছে, তাতে এই মুহূর্তে বাঁধ মেরামতিও সম্ভব নয়। তবে মানুষজনকে যাতে খাওয়ার জল ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

flood gosaba Sunderbans Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE