Advertisement
E-Paper

ক্যানসার-যুদ্ধে তথ্যের অভাবই এখন বড় সমস্যা

ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইলের (২০১৯) পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ‘কমন ক্যানসার’ অর্থাৎ মুখ, স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৮৯৭।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৩
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পশ্চিমবঙ্গে কোন ধরনের ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে? সব ধরনের ক্যানসার মিলিয়ে রোগীর মোট সংখ্যাই বা কত? এর সরাসরি উত্তর নেই রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাছে। কারণ, সরকারি পরিকাঠামোয় এই বিষয়ে গ্রহণযোগ্য তথ্যের অভাব আছে। এবং সেই অভাবের কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিক ও চিকিৎসকদের একাংশ। অর্থাৎ ডেঙ্গির মতো তথ্যের গোলকধাঁধায় এখন ক্যানসারও!

ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইলের (২০১৯) পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ‘কমন ক্যানসার’ অর্থাৎ মুখ, স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ১১,৮৯৭। অন্যান্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও ‘ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব ক্যানসার, ডায়াবিটিস, কার্ডিওভাস্কুলার ডিজ়িজ় অ্যান্ড স্ট্রোক’ বা এনপিসিডিসিএসের কাজ শুরু হয়েছে। সেই প্রকল্পে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই রাজ্যে ‘কমন ক্যানসার’-এ আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ন্যাশনাল হেল্‌থ প্রোফাইলে।

কিন্তু এই তথ্য কতটা গ্রহণযোগ্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাই সেই বিষয়ে সন্দিহান। বাংলার মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালগুলিতে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে ক’জন ক্যানসার রোগী চিকিৎসা পেয়েছেন, সেই তথ্য স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় ‘গলদ’ আছে বলে জানান স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে সরকারি স্তরে ক্যানসার রোগীর নাম নথিভুক্তির প্রক্রিয়া নিখুঁত নয়। তাই কমন ক্যানসার বা মুখ, স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসার সংক্রান্ত যে-তথ্য রাজ্য সরকারের কাছে আছে, তা অসম্পূর্ণ!’’

আরও পড়ুন: অস্ত্রোপচারের পরপরই হৃদ্‌রোগ, কোমায় তরুণী

স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, বিষয়টি দফতরের কর্তাদের অজানা নয়। সেই জন্য বছরখানেক আগে একটি ‘সফটওয়্যার’ তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়। সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ বলেন, ‘‘ঠিক ছিল, সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার রোগী আসা মাত্র তাঁকে একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে। তাতে কার্যকর হলে ক’জন পুরুষ বা মহিলা কোন ক্যানসারে আক্রান্ত, তা বোঝা যেত। ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভে’র একটি পরিসংখ্যান এখন পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা অসম্পূর্ণ।’’

স্বাস্থ্য আধিকারিকদের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, ডেঙ্গি-তথ্য আর ক্যানসারের তথ্য নিয়ে সমস্যার মধ্যে তারতম্য আছে। রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃতের সুনির্দিষ্ট তথ্য স্বাস্থ্য ভবনের কাছে রয়েছে। সেই তথ্য প্রকাশ নিয়ে অনুযোগ থাকতে পারে। দিল্লিতে সেই তথ্য কেন পাঠানো হয় না, বিতর্ক চলতে পারে সেই বিষয়েও। কিন্তু ক্যানসারের তথ্যই যে অসম্পূর্ণ! আক্ষেপের সুরে কোনও কোনও আধিকারিক বলছেন, ‘‘প্রতি বছর শুধু সরকারি হাসপাতালের রিপোর্ট ধরলে ২২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। ডেঙ্গির তুলনায় যা বহু গুণ বেশি। ক্যানসারের মতো মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করতে গেলে তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কাজ শুরু করেও এখনও তার বাস্তবায়ন হল না!’’

আরও পড়ুন: আর জি করে বন্ধ ভাল্‌ভ প্রতিস্থাপন, বহু রোগী মরণাপন্ন

এসএসকেএম হাসপাতালের রেডিয়েশন-অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান অলোক ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে রোগীর আসল বায়োপসি রিপোর্টে স্ট্যাম্প মারা হয়। কিন্তু ভিন্‌ রাজ্যে চিকিৎসা করানোর পরে যাঁরা আসছেন, তাঁদের নাম তো ইতিমধ্যে সেই রাজ্যের হাসপাতালে নথিভুক্ত হয়েছে! অনেকে অনলাইনে বায়োপসির সফ্‌ট কপির প্রতিলিপি নিয়ে আসছেন। ফলে প্রথম বার তাতে ছাপ পড়ল কি না, বোঝা মুশকিল।’’

নীলরতন সরকার হাসপাতালের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের প্রধান শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘জনসংখ্যা-ভিত্তিক তথ্য নেই। তবে আমাদের হাসপাতালের অভিজ্ঞতার নিরিখে বলতে পারি, মুখের ক্যানসার সব চেয়ে বেশি। জরায়ুমুখের ক্যানসার গত পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। বাড়ছে স্তন ক্যানসার। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে সার্বিক পরিসংখ্যান বলতে পারব না।’’

ক্যানসার নথিভুক্তির এই দুর্বলতা কাটাতে পশ্চিম মেদিনীপুরে এত দিনে একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। আর ক্যানসারের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে আজ, সোমবার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

Cancer Health West Bengal National Health Profile
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy