Advertisement
E-Paper

পালিত কন্যার গোপনাঙ্গে লঙ্কাগুঁড়ো দিল মা

আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব সকলের কাছেই সে জানিয়েছিল, শিশুটিকে দত্তক নিয়েছে। বলেছিল, শিশুটি আসায় নাকি তার পরিবার ‘পূর্ণ’ হয়েছে। শিশুর যত্নে কোনও ত্রুটি রাখবে না এবং আপন সন্তানের থেকেও বেশি আদরে তাকে মানুষ করবে, এমন কথাও হামেশাই শোনা যেত তাদের মুখে। সেই পালিকা মা-ই ছ’বছরের ছোট্ট শিশুকন্যার গোপনাঙ্গে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিয়েছে লঙ্কার গুঁড়ো! শিশুটির ‘অপরাধ’, ঘুমের মধ্যে সে মাঝেমধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০০:৩৪

আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব সকলের কাছেই সে জানিয়েছিল, শিশুটিকে দত্তক নিয়েছে। বলেছিল, শিশুটি আসায় নাকি তার পরিবার ‘পূর্ণ’ হয়েছে। শিশুর যত্নে কোনও ত্রুটি রাখবে না এবং আপন সন্তানের থেকেও বেশি আদরে তাকে মানুষ করবে, এমন কথাও হামেশাই শোনা যেত তাদের মুখে। সেই পালিকা মা-ই ছ’বছরের ছোট্ট শিশুকন্যার গোপনাঙ্গে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিয়েছে লঙ্কার গুঁড়ো! শিশুটির ‘অপরাধ’, ঘুমের মধ্যে সে মাঝেমধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।

গত শুক্রবার এই ঘটনার পরে গুরুতর অসুস্থ শিশুটি এখন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ধুঁকছে, আতঙ্কে কুঁকড়ে রয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভয়ে কথা বলাও প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে তার। আতঙ্ক থেকে বার করে আনতে তার মানসিক কাউন্সেলিং প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এই ঘটনার পরে ওই মহিলা ও তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বাবা মারা গিয়েছিলেন শিশুটির। অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন নিজের মা। চার বছর আগে তার এক পিসি পূর্ণিমা দাসের থেকে তাকে নিয়ে আসে টিটাগড়ের বিধানপল্লির বাসিন্দা শ্যামল সেন ও সন্ধ্যা সেন নামে এক নিঃসন্তান দম্পতি। কোনও সরকারি নিয়ম মেনে তারা এই দত্তক নেয়নি। কোনও বৈধ কাগজপত্রও তাদের কাছে ছিল না। ১৯ জুনের এই ঘটনার পরে পূর্ণিমাদেবী অভিযোগ জানান ওই দম্পতির বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন আইনে মামলাও দায়ের হয়। বুধবার ব্যারাকপুর আদালত শ্যামল সেনকে জামিন দিলেও শিশুটির পালিতা মা সন্ধ্যা সেনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। শিশুটি একটু সুস্থ হলে তাকে পাঠানো হবে কোনও সরকারি হোমে।

কিন্তু এই ঘটনা অবৈধ দত্তক প্রক্রিয়ার গুরুতর সমস্যার কথা এত নির্মম ভাবে সামনে এনে দিয়েছে যে, সমাজকল্যাণ দফতরও অস্বস্তিতে পড়েছে। অবৈধ দত্তক কাকে বলা হবে? সমাজকল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, যদি কোনও লাইসেন্সপ্রাপ্ত হোম থেকে সরকারি নিয়মকানুন না মেনে কোনও শিশুকে দত্তক নেওয়া হয়, তবে সেটা বেআইনি। কিন্তু পারস্পরিক বোঝাপড়া বা টাকার লেনদেন মারফত কোনও শিশুকে কেউ নিজের কাছে এনে দত্তক ছেলে বা মেয়ে বলে রাখতেই পারে। তখন আত্মীয়স্বজন বা পাড়ার লোক নিশ্চয়ই তার কাগজ দেখতে চাইবেন না। ফলে সরকারি নজরদারিও সেখানে থাকবে না। সেই শিশুটি ওই পরিবারে অত্যাচারিত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে শিশুকল্যাণ কমিটির লোকেরাও কোনও খবর রাখতে পারবেন না।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘কোনও উপায় দেখা যাচ্ছে না। এই শিশুরা আমাদের নজরেই আসছে না। আমরা এদের কথা জানতেই পারছি না। আর যতক্ষণ না কোনও শিশু ‘পরিত্যক্ত’ হয় বা তাকে কেউ সরকারের কাছে ‘সারেন্ডার’ করে, ততক্ষণ শিশু কল্যাণ কমিটিও কিছু করতে পারে না। একমাত্র যদি আশপাশের কেউ শিশুর উপরে অত্যাচারের খবর শুনে থানায় বা শিশু কল্যাণ কমিটিতে অভিযোগ দায়ের করেন, তখন ব্যবস্থা নিতে পারি।’’

শশী পাঁজা জানান, এখন দত্তক নেওয়ার জন্য ‘সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসার্চ এজেন্সি’ (কারা)-র ওয়েবসাইটে অনলাইনে ১ হাজার টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় আগ্রহী দম্পতিকে। সেখানেই জানা যায়, কোন কোন এজেন্সি দত্তক দেয়। পরবর্তী নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করা হয় তাঁদের। তাঁরা শিশু পাওয়ার তালিকায় কত নম্বরে আছেন, সেটাও জানা যায়। কিন্তু এত কিছুর পরেও যে বেআইনি দত্তক রোখা যায়নি, তা মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করে নেন। বলেন, ‘‘হাসপাতালে সদ্য জন্মানো শিশু পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সেখান থেকেই হাতবদল হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালের কাগজেই বাবা-মায়ের নামের জায়গায় দত্তক বাবা-মায়ের নাম লেখা হচ্ছে। ধরবেন কী করে?’’ তিনি আরও জানান, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দত্তক এজেন্সিকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির দায়ে। তাদের লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও প্রচুর টাকার বিনিময়ে তারা শিশুদের দত্তক দিয়েছে। কোনও কাগজ দত্তক নেওয়া বাবা-মাকে দেয়নি। যখন সমাজকল্যাণের লোকজন সেই শিশুদের আনতে গিয়েছে, তখন বাবা-মায়েরা কেঁদে তাঁদের পায়ে পড়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গে বৈধ পালক পিতা-মাতাদের একটি সংগঠন ‘আত্মজ’-র সদস্যরা অন্যান্য অনেক অসুবিধার কথাও তুলে ধরেছেন। যেমন, যাঁদের ইন্টারনেট নেই তাঁরা কী করে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করবেন? সরকার থেকে তো দত্তক সম্পর্কে কোনও প্রচারই নেই। আগ্রহী দম্পতি বুঝতেই পারেন না কোথায় যাবেন, নিয়মটা কী। ফলে তাঁরা ঘুরপথে যান। সেই সুযোগে বেআইনি প্রক্রিয়া ডালপালা মেলে। তার সঙ্গে রয়েছে আইনি জটিলতা। যার জেরে আগ্রহী পরিবার শিশু এবং অনাথ শিশু উপযুক্ত বাবা-মা পায় না। মাঝখান থেকে সন্ধ্যা সেনের মতো লোকেরা শিশুদের নিয়ে গিয়ে অত্যাচার করে।

যাঁদের সন্তান পালনের মানসিকতা নেই, তাঁরা কেন দত্তক নিতে যান? এর উত্তরে শশীদেবী বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ওই মহিলার অন্য উদ্দেশ্য ছিল। হয়তো বিনা পয়সায় কাজের লোক খুঁজছিল বা আর কোনও অভিসন্ধি ছিল। অথবা তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে।’’

এই শিশুটির ক্ষেত্রে তার পিসি পূর্ণিমাদেবী ঘটনার কথা জেনে ‘চাইল্ড লাইন’-এ ফোন করেন। পরে লিখিত অভিযোগ জানান। ‘চাইল্ড লাইন’-এর উত্তর ২৪ পরগনার জেলার কো-অর্ডিনেটর শুভাশিস দাস জানান, এর পরেই ওই সংস্থার তরফে হাসপাতালে শিশুটির সঙ্গে কথা বলতে প্রতিনিধি পাঠানো হয়। শিশুটির থেকে সব জেনে নিশ্চিত হয়ে ওই সংস্থার তরফে তদন্তকারী সদস্য শ্যামলী মণ্ডল (বড়াল) ২২ জুন টিটাগড় থানায় সেন দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু পালিয়ে যায় ওই দম্পতি। পরে টিটাগড় থানার পুলিশ ব্যারাকপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ধরে ফেলে তাদের।

Daughter mother adoptive Purnia Das Titaghar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy