Advertisement
E-Paper

মায়েদের লজ্জা-ভয় ভাঙাচ্ছে মেয়েরাই

ভর দুপুরে এই সব শুনেই খেঁকিয়ে ওঠেন ধলপল গ্রামের এক মাঝবয়সী মহিলা। স্কুলের মেয়েরা তাঁর উঠোনে দাঁড়িয়ে। ঝাঁঝিয়ে উঠে তিনি বলেন, ‘‘তা কী করব? বাড়ি সুদ্ধু সব মেয়ে ওই কাপড় ছেঁড়াই ব্যবহার করি। ওটাই রীতি।’’

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৪:৩৬
প্রচার: পাড়ায় পাড়ায় ছাত্রীরা। তুফানগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

প্রচার: পাড়ায় পাড়ায় ছাত্রীরা। তুফানগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

অপ্রস্তুতের একশেষ। কোনও মতে সাইকেল ঘুরিয়ে বাড়ি। সেখানে আবার ভরসা বলতে ছেঁড়া কাপড়। তিন বোনের তিন ফালি কাপড়। কোনটা কার, তার চিহ্ন আছে, কিন্তু বারবার ব্যবহারে সেগুলোতে হাত দিলেই গা ঘিনঘিন করে।

ভর দুপুরে এই সব শুনেই খেঁকিয়ে ওঠেন ধলপল গ্রামের এক মাঝবয়সী মহিলা। স্কুলের মেয়েরা তাঁর উঠোনে দাঁড়িয়ে। ঝাঁঝিয়ে উঠে তিনি বলেন, ‘‘তা কী করব? বাড়ি সুদ্ধু সব মেয়ে ওই কাপড় ছেঁড়াই ব্যবহার করি। ওটাই রীতি।’’

আর ঠিক এখানেই আক্রমণ করে কোচবিহারের তুফানগঞ্জে মুগাভোগ হাইস্কুলের ছাত্রীরা। তারা পাল্টা বলছে, ‘‘এ সব করেই তো রোগ বালাই ঘরে ডাকছেন।’’ মহিলাকে স্বীকারও করতে হয়, কথাটা সত্যি। প্রতি মাসে কাপড় বাঁধার সময়ই ভয় করে, আবার জ্বালা হবে। আবার লুকিয়ে ওষুধ কিনে আনতে হবে। পাঁচ দিনের ধাক্কা দাঁড়াবে পনেরো দিনে।

তবু কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরের এই প্রত্যন্ত এলাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিন সাধারণত ব্যবহারই করা হয় না। তাই মুগাভোগ স্কুলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের নিয়ে ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে ‘ক্লাব’ গড়া হয়েছে। দু’বছরে সদস্য দাঁড়িয়েছে আড়াইশো। সপ্তাহে দু’দিন করে তারা ছোট দলে ভাগ হয়ে দুপুরে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে মহিলাদের বোঝাচ্ছে, ‘কাপড় ছাড়ুন, ন্যাপকিন ধরুন।’

তাতে প্রথমেই রাগের মুখে পড়তে হচ্ছে। কেউ আবার হাতে নাড়ু বা মিষ্টি দিয়ে বলছেন জল খেতে, কিন্তু স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রদীপ ঝা বলেন, ‘‘আমাদের মেয়েরা এই আড়ষ্টতাটাই প্রথমে ভাঙতে চাইছে।’’ আর একবার সেটা ভাঙলে মেয়েরা নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই বোঝাতে পারছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারে কত সুবিধে। মন্দিরা, শ্যামলী, চন্দনা, রুমাদের কথায়, আগে হঠাৎ শরীর খারাপ হলে বাড়ি চলে যেতে হত। এখন স্কুলেই ন্যাপকিন মিলছে। রোগও কমেছে। তাতে বাড়ির লোক খুশি।

আরও পড়ুন: মেয়ে বলে স্বীকৃতি চেয়ে আর্জি মেয়েদের দিনে

স্কুলের ওই ক্লাবের দায়িত্ব শিক্ষিকা শ্যামলী মোহান্তের। তিনি জানাচ্ছেন, দাম নিয়ে আপত্তি নেই। তবে ন্যাপকিন কিনতে লজ্জা পান অনেকেই। আর এক শিক্ষিকা জয়শ্রী সরকারের কথায়, ‘‘ছাত্রীদের আব্দার ফেলতে পারছে না ওদেরই কাকিমা, জ্যেঠিমারা।” ‘প্যাডম্যান’ মুক্তির আগে থেকেই মুগাভোগে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমি নিজেদের উদ্যোগে ছাত্রীদের সেই সিনেমা দেখিয়েও এনেছে। চন্দনা হেসে বলে, ‘‘প্রথমে মায়ের ভয় ভাঙিয়েছি। মা পাড়ার অন্যদের আড়ষ্টতা কাটিয়েছেন। আমার, মায়ের দেখাদেখি অনেকেই এখন ন্যাপকিন ব্যবহার করেন।’’

Student School Women Empowerment International Women's Day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy