সন্তানসম্ভবা বোন জামেলা খাতুনকে (২৪) ঝাড়খণ্ডের শ্বশুরবাড়ি থেকে এনে নিজের বাড়িতেই রেখেছিলেন ফরাক্কার বাসিন্দা আনোয়ার আলি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে এক দাইয়ের হাতে বাড়িতেই প্রসব হয়েছে। তার পরে বেলা ১১টা নাগাদ সদ্যোজাত সন্তান-সহ জামেলাকে ভর্তি করানো হয় বাড়ির কাছেই ফরাক্কা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে জামেলার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সেখান থেকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল।
আর তখনই দেখা যায় যে, অ্যাম্বুল্যান্স নেই। দেড় ঘণ্টা পরে একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে গুরুতর অসুস্থ জামেলাকে কাছাকাছি এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, জামেলা মারা গিয়েছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর।
জামেলার মৃত্যুর খবর পেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি, ফলে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে প্রসূতির। বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। জামেলার দাদা আনোয়ার আলি বলেন, “যখন শুনি রেফার করা হয়েছে, দেখি হাসপাতালে একটিও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। দু’টি গিয়েছে ছুটি হওয়া রোগীদের নিয়ে। একটি রোগী নিয়ে গিয়েছে জঙ্গিপুর।”
আনোয়ারের অভিযোগ, “দেড় ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়েছিল আমার বোন। তার পরে জঙ্গিপুরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না বলে এক স্থানীয় নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় বোনকে। তাঁরা জানান, বোন মারা গিয়েছে। কিন্তু এই মৃত্যুর দায় কার?”
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মশিউর রহমান বলেন, “প্রসূতির উচ্চ রক্তচাপ ছিল। হৃদ্যন্ত্রেও গোলমাল ধরা পড়ে ইসিজি-র পরে। রেফার করা হয়। কিন্তু কিছুটা দেরি হয় অ্যাম্বুল্যান্স না থাকায়।” তাঁর কথায়, “তবে বাড়িতে প্রসব করানো কখনওই উচিত হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হলে হাতে আর একটু সময় পাওয়া যেত।”
জঙ্গিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন বলেন, “আমরা প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে অ্যাম্বুল্যান্স না থাকার কথা নয়। ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)