ক্ষমতায় এসেছেন ২০১১ সালে। তার পর থেকে প্রতি বছরই পুজোর বোনাস-অগ্রিম দেওয়ার আগে-পরে সরকারি কর্মীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘোষণা রূপায়িত হয়েছে নতুন বছরের ১ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু এ বার বছর ফুরোতে বাকি আর মাত্র এক দিন। এখনও ডিএ দেওয়ার কোনও ঘোষণা হয়নি। ফলে সরকারি মহলে জল্পনা, এ বছর কি তা হলে আর ডিএ জুটবে না? এই অবস্থায় আপাতত সকলেই তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে।
কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ডিএ-র ফারাক এখন প্রায় ৫৬ শতাংশ। সেই ফারাক যথাসম্ভব কমিয়ে আনা হোক বলে মাস দুয়েক আগে অর্থসচিবের কাছে অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা একটি প্রস্তাব পেশ করেছিলেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। কিন্তু অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ওই ফাইল ফিরিয়ে দেন। তিনি যুক্তি দেন, কেন্দ্র দিচ্ছে বলেই রাজ্যকে ডিএ দিতে হবে এমন কথা নেই। তবে দিন কয়েক আগে বকেয়া ডিএ-র বিষয়ে নতুন করে একটি প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে অর্থ দফতর। ফলে এখন মুখ্যমন্ত্রী চাইলে তবেই শিকে ছিঁড়বে কর্মীদের ভাগ্যে।
ডিএ ঘোষণার ব্যাপারে গত কয়েক বছরের প্রথা যে এখনও মানা হল না, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকেই দুষছেন অর্থ দফতরের কর্তাদের একাংশ। এক কর্তার কথায়, ‘‘১% ডিএ দিতে হলে মাসে ২৫ কোটি টাকার বাড়তি দায় নিতে হয়। এমনিতেই ঋণ-জর্জর সরকারের পক্ষে তা প্রায় অসম্ভব। তার উপরে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে গেল।’’ বিধানসভায় নোট বাতিল নিয়ে আলোচনার সময় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ফলে চলতি আর্থিক বছরে রাজ্যের ৫০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হবে। অর্থ দফতরের ওই কর্তা বলেন, ‘‘রাজস্ব আদায়ের যা অবস্থা, তাতে নতুন বছরে ডিএ দেওয়া খুব মুশকিলের। যে সব উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলিতে বরাদ্দ চালু রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ। তবুও মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হবে। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
এ বছর রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে ‘ব্যান্ড পে’র উপরে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মন ওঠেনি সরকারি কর্মীদের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের নানা সুবিধে দিচ্ছে সরকার। কেবল সাধারণ কর্মীদের প্রাপ্য টাকা দিতেই যত অনীহা!’’ সিটু প্রভাবিত সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় সিংহের কথায়, ‘‘সরকারি কর্মীদের জন্য এই সরকার কিছুই করবে না। প্রত্যক্ষ সংগ্রামে দাবি আদায় করা ছাড়া উপায় নেই।’’ আইএনটিইউসি অনুমোদিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কর্মীদের ন্যায্য পাওনাও এই সরকার মেটায়নি। বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা সৌম্য বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনাধীন। বছর শুরুর আগে এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’’
নবান্নের খবর, পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশও আপাতত জমা পড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, শেষ বেতন কমিশন বাস্তবায়িত করতে গিয়ে বেতন খাতে ৫৮.৯২% ও পেনশন খাতে ৪৬.৮৭% খরচ বেড়েছিল। তা সামাল দিতে তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত ঋণ নেন। এখন যা পরিস্থিতি, ঋণ নিয়েও সামাল দেওয়া যাবে না। তাই আগামী চার বছর বর্ধিত বেতন দিতে বাড়তি যে ৮৩ হাজার ৪৪৪ কোটি লাগবে, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের কাছে তা চেয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সেই দাবি মানা হয়নি। এই অবস্থায় বিপুল আর্থিক চাপ নিতে চাইছে না রাজ্য।