প্রতীকী ছবি।
রোগটা অজানা নয় শিক্ষামন্ত্রীরও। কলেজে কলেজে পড়ুয়া ভর্তিতে ছাত্র সংসদের খবরদারি এবং টাকা লেনদেন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বারবার। তা সত্ত্বেও কলেজে ভর্তি নিয়ে অরাজকতা চলেছে সমানেই।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ভর্তির নামে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ উঠছে আকছার। সেই সঙ্গে নবাগতদের সাহায্যের নামে চলছে দাদাগিরি। আর আছে ‘আগে এলে আগে ভর্তি’র প্রক্রিয়া, যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ আপত্তি তুলেছেন। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, মেধা-তালিকাই ভর্তির একমাত্র ভিত্তি। আগে এলে আগে সুযোগের কোনও প্রশ্ন নেই।
যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ডে কলেজে টাকা দিয়ে ভর্তির চেষ্টার বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। কলেজ সূত্রের খবর, পরে দু’পক্ষ আপসে বিষয়টি মিটিয়ে নিয়েছে। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন কলেজের বাইরে ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করেছিল। অভিযোগ, নবাগতদের কাছে টাকা চাওয়া হচ্ছিল সেখানেই। অধ্যক্ষ পঙ্কজ রায় বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ভর্তি নেওয়া হচ্ছে মেধার ভিত্তিতেই। কিন্তু যাতে কেউ প্রতারিত না-হয়, সেই জন্য আমরা ফের সতর্ক করে দিয়েছি ওয়েবসাইটে।’’
অনলাইনে ভর্তি-প্রক্রিয়া চলছে উত্তর কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজে। কিন্তু মেধা-তালিকা বেরোনোর পরে কাউন্সেলিংয়ে এসেই ভর্তি হতে ইচ্ছুক পড়ুয়ারা পড়ে যাচ্ছেন টিএমসিপি-র খপ্পরে। তাঁদের ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে বাধ্য করানো হচ্ছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, শিক্ষাকর্মীদের পক্ষ থেকেও টাকা নেওয়া হচ্ছে। অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনেই চলছে। তাতে কোনও হস্তক্ষেপ নেই।
অনলাইনে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির কথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বারে বারেই বলছেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই! শাসক দলের ছাত্র সংগঠন দাপট চালিয়েই যাচ্ছে। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীও দায় এড়াতে পারেন না। কেননা ২০১৪ সালের মে মাসে শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ারে বসেই কেন্দ্রীয় অনলাইনে ভর্তির সরকারি পরিকল্পনা বাতিল হচ্ছে বলে জানান পার্থবাবু। এখন তিনি ভর্তি নিয়ে গলদের কথা বললে সেই দায় তো তাঁর উপরেও বর্তায়। কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি চালু না-হলে গলদ থেকেই যাবে। কেননা ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদগুলির যোগসাজশ বারে বারেই প্রমাণিত। রাজ্যে অধিকাংশ ছাত্র সংসদই টিএমসিপি-র দখলে।
টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘কোনও কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে যদি টিএমসিপি-র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, প্রশাসনকে জানানো হোক। অথবা আমাদের জানাক। ব্যবস্থা নেবো।’’
অভিযোগ, বেশ কিছু কলেজে অনার্সের মেধা-তালিকা প্রকাশ করে ভর্তি নেওয়া হলেও জেনারেল কোর্সে ‘আগে এলে আগে ভর্তি’ চলছে। ভর্তির নির্দিষ্ট দিনক্ষণও মানা হচ্ছে না। গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে জেনারেল কোর্সে ভর্তি চলছে এ ভাবেই। ভর্তি কমিটির পক্ষে রুণা চক্রবর্তী জানান, জেনারেল কোর্সে ‘আগে এলে আগে ভর্তি’ চলবে না, এমন নির্দেশ নেই। ‘‘ধরেই নেওয়া হয়, কলেজ-কর্তৃপক্ষ মেধার ভিত্তিতে ভর্তি নেবেন,’’ বলেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন।
মেধা-তালিকা প্রকাশের পরেও শিবনাথ শাস্ত্রী কলেজে বিকম অনার্সে কেন ‘আগে এলে আগে ভর্তি’ নেওয়া হলো, অধ্যক্ষা রুণা বিশ্বাস সেই বিষয়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য স্বাগতবাবুকে জানিয়ে এসেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy