বুধবার সকালের সোদপুর স্টেশন রোড। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে বর্ষার প্রথম দিনেই জলমগ্ন হয়ে পড়ল ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা। ঘণ্টা দুয়েকের বৃষ্টিতেই কামারহাটি, পানিহাটি, সোদপুর, বরাহনগর, টিটাগড়-সহ বহু এলাকায় কোথাও এক কোমর, কোথাও এক হাঁটু জল। বি টি রোডের একাংশেও জল জমে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তবে এই অবস্থার জন্য এলাকার নিকাশির কাজের ঢিলেমিকেই দায়ী করেছেন পুরকর্তারা।
বুধবার সকালে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কামারহাটি পুরসভার একাধিক এলাকা জলে ডুবে যায়। রামগড়, আড়িয়াদহ, ফিডার রোড, গ্রাহাম রোড, জয়শ্রীনগর, বেলঘরিয়া পঞ্চাননতলা, শীতলাতলা স্ট্রিট এলাকায় হাঁটুজল জমে। জলমগ্ন হয় আগরপাড়ার পি বি ঘাট রোড, ইলিয়াস রোডও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি নালাগুলি সাফাই না হওয়ায় এই বিপত্তি। আড়িয়াদহের বাসিন্দা ঝন্টু পাল বলেন, “নর্দমাগুলি বুজে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। জরুরি কাজ থাকলেও বেরোনো যাচ্ছে না।”
শুধু পাড়ার ভিতরেই নয়। কামারহাটি পুর-এলাকায় বি টি রোডের একাংশেও জল জমে যায়। কিছু দিন আগেই কামারহাটি ও পানিহাটির সীমানা এলাকায় সিইএসসি-র কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছিল। তা মেরামতির আগেই বৃষ্টি হওয়ায় ওই সব গর্তে জল জমে গিয়েছে। ফলে জমা জলে গর্তের ব্যাপ্তি বুঝতে না পেরে ধীর গতিতে চলছে যানবাহন। আবার রাস্তা খারাপ থাকায় অনেক গাড়িই বি টি রোড থেকে নীলগঞ্জ রোডে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা জল জমার জন্য কেএমডিএ-র ঢিলেমিকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, “বৃষ্টির জল বেরোনোর জন্য যে নালাগুলি রয়েছে, সেখানে সাফাই চলছে। সেই কাজ চলছে গত দু’বছর ধরে। এত দেরি কেন হচ্ছে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি।” কামারহাটি পুরসভা সূত্রে খবর, নিকাশি নালাগুলি সাফাইয়ে সুবিধার জন্য নালার কিছু জায়গায় অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির জল সেখান থেকেও উপচে যাচ্ছে রাস্তায়। গোপালবাবু জানান, কামারহাটি এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বাগজোলা খালের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সেখানেও অসুবিধা হচ্ছে। বেদিয়াপাড়ার কাছে মেট্রোর কাজের জন্য খালে মাটি পড়ে বুজে গিয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা জানান, বাগজোলা খালে যে অংশে সমস্যা হচ্ছে, সেই জায়গাগুলিতে দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।
বৃষ্টির জেরে পানিহাটির অবস্থাও খারাপ। এইচ বি টাউন, শ্যামশ্রীনগর, গৌরাঙ্গনগর, পানিহাটি হাসপাতাল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল। পানিহাটি পুরসভা সূত্রের খবর, এলাকায় কেএমডিএ-র পাইপের কাজের জন্য সব রাস্তা খোঁড়া। বৃষ্টির জলে ধুয়ে মাটি নর্দমায় পড়ছে। আবার পুর-এলাকার নিকাশির কাজও শেষ হয়নি। যে সব জায়গায় গর্ত বোজানো হয়নি, সেখানে ভাঙা রাস্তায় চলতে গিয়ে পড়ে বিপদও ঘটছে।
পানিহাটির চেয়ারম্যান স্বপন ঘোষ বলেন, “জল নামাতে পাঁচটি পাম্প চালানো হয়েছে।” পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, “সোদপুর, খড়দহ এলাকাতেও সমস্যা রয়েছে। ৩৪ বছরে এখানে নিকাশির কাজ হয়নি। আমরা কাজ শুরু করেছি। তবে পঞ্চায়েত, পুরসভা ও লোকসভা নির্বাচন পার করতেই অনেক সময় কেটে গিয়েছে। তাই কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আশা করি আগামী বর্ষায় এই সমস্যা থাকবে না।” সোদপুর স্টেশন রোড, টিটাগড়, খড়দহের কিছু এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পানীয় জলের কলও চলে যায় জলের তলায়।
অন্য দিকে, বাগজোলা খালের সংস্কারের কাজ পুরো শেষ না হওয়ায় জলে ডুবেছে বরাহনগরের বহু এলাকা। লেক ভিউ পার্ক, সতীন সেন নগর, শীতলামাতা কলোনি, কালীমাতা কলোনি, গোপাললাল ঠাকুর রোড, নৈনানপাড়া, বরাহনগর বাজার, ডানলপ-সহ বিভিন্ন এলাকায় জল জমেছে। বরাহনগর পুরসভার তরফে জল নামানোর জন্য পাম্পও চালানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy