Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইছামতীতে ডুবে মৃত যুবক

পাড়ার মনসা পুজোয় প্রতিমা ভাসান দিতে লোকজনের সঙ্গে ইছামতী নদীতে এসেছিলেন এক তরুণ। এ বারই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। কিন্তু সোমবার সন্ধে থেকে খোঁজ মিলছিল না বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তড়িৎ মজুমদার (১৮) ওরফে গুড্ডু নামে ওই যুবকের। জলে নেমে রাত থেকেই তল্লাশি চালান এলাকার মানুষ। পুলিশও হাত লাগায়। শেষমেশ, মঙ্গলবার সন্ধের পরে পাড়ের কাছেই মেলে দেহ।

জাল ফেলে খোঁজ চলছে। ইনসেটে, তড়িৎ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

জাল ফেলে খোঁজ চলছে। ইনসেটে, তড়িৎ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:৩০
Share: Save:

পাড়ার মনসা পুজোয় প্রতিমা ভাসান দিতে লোকজনের সঙ্গে ইছামতী নদীতে এসেছিলেন এক তরুণ। এ বারই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। কিন্তু সোমবার সন্ধে থেকে খোঁজ মিলছিল না বনগাঁর মতিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তড়িৎ মজুমদার (১৮) ওরফে গুড্ডু নামে ওই যুবকের। জলে নেমে রাত থেকেই তল্লাশি চালান এলাকার মানুষ। পুলিশও হাত লাগায়। শেষমেশ, মঙ্গলবার সন্ধের পরে পাড়ের কাছেই মেলে দেহ।

অসিত বিশ্বাস শিক্ষানিকেতন থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাড়ির লোকজন জানালেন, পাড়ায় মনসা পুজো হয়েছিল। সোমবার সন্ধ্যায় এলাকার কিছু মানুষ প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা করে বনগাঁ থানার ঘাটে আসেন বিসর্জন দিতে। শোভাযাত্রায় তড়িৎও ছিলেন। রাত ৮টা নাগাদ প্রতিমা জলে নামানো হয়। পাড়ে তখন ভিড় করেছেন বহু মানুষ। তড়িতের বাবা তাপসবাবু কাপড়ের দোকানের কর্মচারী। তিনিও ছুটি নিয়ে প্রতিমা বিসর্জন দিতে এসেছিলেন। বললেন, ‘‘প্রতিমা জলে নামানোর সময়ে ছেলে হঠাৎ ওর মানিব্যাগ ও মোবাইল আমাকে ধরিয়ে দিয়ে যায়। আমি তখন পাশের পার্কে নাতনিকে দোল খাওয়াচ্ছিলাম। প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে সকলে যখন চলে যাচ্ছেন, ছেলেকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি।” ঘাটের সিঁড়িতে পাওয়া যায় তড়িতের একপাটি চটি।

সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশ খবর পেয়ে চলে এসেছে। টর্চের আলোয় নদীতে নেমে খোঁজ চলছে। ঘাটের আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। তড়িতের সঙ্গে আসা কয়েক জন যুবক জলে নেমে পড়েন। পুলিশ খবর দিয়ে নিয়ে আসে জেলেদের। তাঁরাও গভীর রাত পর্যন্ত জাল ফেলে তড়িৎকে খোঁজার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসেন তড়িতের মা অর্পণাদেবী।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তড়িৎ সাঁতার জানেন না। এক মহিলা জানান, তড়িৎকে জলে নামতে দেখেছিলেন তিনি। কেউ আবার বলছেন, তড়িৎ জলে নামলেও উঠে পড়েছিল। এক যুবককে আবার বলতে শোনা গেল, জলের মধ্যে তড়িৎ তাঁর পা ধরে টেনেছিল। নদীতে স্রোত মোটেই নেই। ডুবে গেলে বাঁচার চেষ্টা করলে সকলের নজরে পড়ার কথা। সব মিলিয়ে ওই তড়িৎ কী ভাবে তলিয়ে গেলেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তের জন্য। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তড়িতের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা, না এর পিছনে অন্য কারণ আছে, তা নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কৌতুহল দানা বেঁধেছে।

এ দিকে, ছেলের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ ছিলই বাবা-মায়ের। খবর শুনে মা বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন। বলছেন, “কত কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করছিলাম। অভাবের সংসারেও লেখাপড়া করাচ্ছিলাম। এ ভাবে হারিয়ে যেতে পারে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE