Advertisement
E-Paper

উষারানি অধরা, পুলিশ হেফাজতে চাইল না ধৃতদের

ভোট দিতে যাওয়ার পথে হাড়োয়ায় সিপিএমের সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক উষারানি মণ্ডল ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ মেলেনি মঙ্গলবারও। ওই ঘটনায় সোমবার তৃণমূলের যে ১২ জন সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছিল, এ দিন বসিরহাট আদালতে তাদের নিজেদের হেফাজতে রাখার আবেদনও জানায়নি পুলিশ। সকলকেই ১৪ দিন জেলহাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। উষারানি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে এ দিন মোবাইলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৪ ০৩:০৮
বসিরহাট আদালতে ধৃতেরা। মঙ্গলবার নির্মল বসুর তোলা ছবি।

বসিরহাট আদালতে ধৃতেরা। মঙ্গলবার নির্মল বসুর তোলা ছবি।

ভোট দিতে যাওয়ার পথে হাড়োয়ায় সিপিএমের সমর্থকদের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক উষারানি মণ্ডল ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ মেলেনি মঙ্গলবারও। ওই ঘটনায় সোমবার তৃণমূলের যে ১২ জন সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছিল, এ দিন বসিরহাট আদালতে তাদের নিজেদের হেফাজতে রাখার আবেদনও জানায়নি পুলিশ। সকলকেই ১৪ দিন জেলহাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। উষারানি ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে এ দিন মোবাইলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

এর আগে চতুর্থ দফার ভোটে বাঁকুড়ার সোনামুখীতে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা এখনও নিখোঁজ। পঞ্চম দফায় ভোটারদের উপর আক্রমণে অভিযুক্ত বিধায়ক উষারানি কোথায়, জানে না পুলিশ। কেন উষারানিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “ওই বিধায়ক সেদিন ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, থাকলে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে তাঁদের দলের বিধায়ক ও কর্মী-সমর্থকদের। সে জন্য উষারানি ও তাঁর স্বামীকে দলের তরফে কিছু দিন অন্যত্র থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। তবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় মঙ্গলবার দাবি করেন, এই ঘটনার সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক নেই। ভোট কেন্দ্র থেকে বহুদূরে ঘটনাটি ঘটেছে। কিন্তু গ্রাম-ছাড়া সিপিএমের সমর্থকরা সোমবার ভোট দিতে যাওয়ার সময়েই আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানালে মুকুলবাবু পাল্টা বলেন, “খবর নিয়ে জেনেছি নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরেই এখানে গুলি চলে।”

সোমবার সকালে হাড়োয়ার ব্রাহ্মণচক গ্রামে সিপিএমের লোকজনের উপরে বিধায়ক উষারানি মণ্ডল ও তাঁর স্বামীর (তিনিও এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা) উপস্থিতিতেই গুলি, ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চলেছে বলে অভিযোগ করে সিপিএম। জখম হন ১৮ জন। উনিশ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। পাল্টা ২৭ জনের নামে এফআইআর করে তৃণমূলও। তাদের দলেরও ৪ জন জখম হয়েছে বলে দাবি শাসক দলের নেতৃত্বের।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এ দিন বলেন, “বিধায়ক ও তাঁর স্বামী-সহ আমাদের দলের লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে সিপিএম। আমাদের দলের লোকই আক্রান্ত হচ্ছে ওই এলাকায়।” অন্য দিকে, সিপিএমের হাড়োয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক ভুবন মণ্ডল বলেন, “এলাকা অশান্ত করতে চাইছে তৃণমূল। অভিযুক্তদেরও আড়াল করছে।”

ভোটের দিন গোলমালের ঘটনায় দিন কয়েক আগেও শাসক দলের আরও এক বিধায়কের নাম জড়িয়েছে। গত ৭ মে রাজ্যে চতুর্থ দফা ভোটের দিন বাঁকুড়ার সোনামুখীতে দলবল নিয়ে বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর করে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হলেও এখনও অধরা তিনি। এমনকী, সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি একাধিক বার মোবাইলে কথা বললেও তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে পুলিশ। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে, শাসক দলের প্রভাবে পুলিশ দীপালিদেবীর খোঁজই করছে না। এ বার উষারানির নামও ‘ফেরার’ বিধায়কদের তালিকায় যুক্ত হল। তৃতীয় দফায় আরামবাগে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য ঝর্ণা সিংহ বুথে ঢুকে নজরদারি চালানোয় গ্রেফতার হন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

হাড়োয়ার ঘটনায় খুনের চেষ্টা, সশস্ত্র জমায়েত-সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করলেও, ধৃত ১২ জন তৃণমূল সমর্থককে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতে না চাওয়ায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। মামলার আবেনকারীদের আইনজীবী শাহির বারির বক্তব্য, “অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে পুলিশ।” অভিযুক্তদের তরফে আইনজীবী বিকাশ ঘোষ অবশ্য বলেন, “ধৃত ১২ জনের মধ্যে দু’জনের নাম আছে এফআইআর-এ। তারা কেউ গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ নেই। সে কারণেই পুলিশ নিজেদের হেফাজতে চায়নি।”

জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ধৃতদের শনাক্তকরণ (টিআই প্যারাড) করানো হবে, তাই পুলিশ হেফাজতে চাওয়া হয়নি। কারণ, শনাক্তকরণ হয় জেলেই। তা ছাড়া, তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের থেকে যা জানার ছিল, তা জানা হয়ে গিয়েছে।”

usharani mondal haroa tmc cpm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy