Advertisement
E-Paper

এক ঘণ্টার সেচের জলের দাম পড়ে যাচ্ছে ১০০ টাকা

প্রচণ্ড গ্রীষ্মে জমি ফেটে চৌচির। এক ঘণ্টার সেচের জন্য জলের দাম পড়ে যাচ্ছে একশো টাকা। তার উপরে চলছে লোডশেডিং। নিট ফল, মাথায় হাত চাষির। শুধু চাষের জলই নয়, জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পানীয় জলটুকুরও আকাল দেখা দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায়। শহরেও বহু এলাকা ভুগছে একই সমস্যায়। প্রতিবার ভোটের মুখে পরিস্রুত জলের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি আজও। প্রচণ্ড গরমে জলের স্তর নেমে যাওয়ায় গ্রামের গভীর নলকূপ থেকেও জল উঠছে কম।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:০৪
অনন্ত অপেক্ষা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

অনন্ত অপেক্ষা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

প্রচণ্ড গ্রীষ্মে জমি ফেটে চৌচির। এক ঘণ্টার সেচের জন্য জলের দাম পড়ে যাচ্ছে একশো টাকা। তার উপরে চলছে লোডশেডিং। নিট ফল, মাথায় হাত চাষির।

শুধু চাষের জলই নয়, জীবন ধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় পানীয় জলটুকুরও আকাল দেখা দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায়। শহরেও বহু এলাকা ভুগছে একই সমস্যায়। প্রতিবার ভোটের মুখে পরিস্রুত জলের প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি আজও। প্রচণ্ড গরমে জলের স্তর নেমে যাওয়ায় গ্রামের গভীর নলকূপ থেকেও জল উঠছে কম। আবার যেখানে পাইপ লাইন, ট্যাপ কল আছে সেখানেও জল বের হচ্ছে সরু সুতোর মতো। পুকুরও গিয়েছে মজে।

জল নিয়ে নানা অভিযোগ শুনতে হবে দেগঙ্গা, শাসন, হাবরা, আমডাঙা, বিড়া, গুমাতে একটু ঘুরে বেড়ালেই। দেগঙ্গার সোয়াই-শ্বেতপুর গ্রামে যেমন দেখা গেল, চাষের খেত থেকে শুরু করে পানীয় জল, গ্রাম জুড়ে সর্বত্র শুধু জলের জন্যই হাহাকার। বারাসত লোকসভার দেগঙ্গা বিধানসভা এলাকার মাঠঘাট এবং হেঁসেল দুই সোয়াই-শ্বেতপুরের মতোই শুকিয়ে কাঠ। গরম পড়লেই কলগুলি থেকে জল ওঠে না। সরকার থেকে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা দিয়েও জল বের হচ্ছে না। কিছু কলে আবার জল ঘোলা ঘোলা কিংবা লাল। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুর আলির অভিযোগ, “কলগুলিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকও রয়েছে। কিন্তু জল নিয়মিত পরীক্ষা হয় না। বাধ্য হয়েই এই জলই খেতে হয় আমাদের।”

হাবরা পুরসভার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে পুরসভা নিয়ন্ত্রিত ট্যাপকলগুলির গতি কমে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ বছরে জলের স্রোতের হাল আরও খারাপ। পুর এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো হলেও কয়েকটি নলকূপে জল পড়ছে ধীর গতিতে। কোথাও জলে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন। বাসিন্দারা আরও জানালেন, ৬০০ ফুট গভীর নলকূপ বসাবার কথা থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় তা বসানো হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা সুর্নিমল মণ্ডলের অভিযোগ, “পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে পুরসভা নিরুত্তর। গঙ্গার জল পরিশোধন করে পাইপের মাধ্যমে আনার কথা থাকলেও কাজ হয়নি।”

হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান সুবীন ঘোষ এ নিয়ে বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় ট্যাপকল থেকে সব সময়ে জল পড়ে অপচয় হত। সেই ট্যাপকল এবং পাইপ লাইনগুলি কিছু জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” সুবীনবাবুর দাবি, “পুর এলাকায় লোক সংখ্যা বাড়ায় দিনে দিনে জলের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। সমস্যা মেটাতে পুর দফতরের কাছে দু’টি বুস্টারের আবেদন করা হয়েছে। গঙ্গার জল পরিশোধনের কাজ ভোটের পরেই কাজ শুরু হবে।”

তবে জলের জন্য বেশি সমস্যায় পছেছেন পৃথিবা রোড-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। হাবরার যশোহর রোড থেকে বেড়াঁচাপায় টাকি রোডে মিশেছে এই রাস্তাটি। পৃথিবা রোডের প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশের এলাকায় পানীয় জলের অভাবের পাশাপাশি চাষের খেতেও অভাব রয়েছে জলের। গৃহবধূ আমেনা খাতুন বলেন, “পুকুরের জল দিয়েই রান্নাবান্না সারি। কিন্তু গরমে সব পুকুরের জলই শুকিয়ে যাচ্ছে। রান্না করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে।” জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি কৃষ্ণগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “গরমের জলের ঘাটতি হচ্ছে। ব্যারাকপুরে কিছুটা ব্যবস্থা নেওয়া গিয়েছে। জলের ঘাটতি মেটাতে কিছু পরিকল্পনাও করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য সেই কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। শীঘ্রই সমস্যা মেটাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সেচের জলের অভাবে মার খাচ্ছে জেলার পাট চাষ। জলের অভাবে প্রতি বছর কমছে চাষ। স্থানীয় চাষি জব্বার মণ্ডল বলেন, “পাটচাষ করে শুধু জলের জন্যই ঋণ করে মরতে হচ্ছে। জল কিনে পাটের বদলে বেগুন, লঙ্কা, পটল চাষ করলে এ অবস্থা হত না।” পাট ক্ষেতে সেচের জন্য এক ঘণ্টা হিসেবে জলের দাম পড়ছে একশো টাকা। আবার বিদ্যুতচালিত পাম্প বসানোর আর্থিক সঙ্গতি নেই অনেকের। যে চাষিরা চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে পাম্প বসিয়েছেন, তাঁদের আবার ভোগাচ্ছে লোডশেডিং।

plough irrigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy