Advertisement
১৯ মে ২০২৪

কাজে চলেছেন ভোটারেরা, ট্রেনেই প্রচার সারছেন রিঙ্কু

বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়ে তেমন সাড়া মিলছিল না। লোক কই? খোঁজ নিতে গিয়ে মথুরাপুরের সিপিএম প্রার্থী শোনেন, তিনি যত ক্ষণে এলাকায় পৌঁছচ্ছেন, তার মধ্যে নামখানার বহু মানুষই বেরিয়ে পড়েন কাজে। তা হলে উপায়? ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে বৃহস্পতিবার সকালে তাই সোজা নামখানা স্টেশনেই চলে গেলেন রিঙ্কু নস্কর। আগের রাতেই কাকদ্বীপে পার্টি অফিসে পৌঁছে গিয়েছিলেন। রাত ভোর হতেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। হরলিক্স আর দু’টো বিস্কুট খেয়েই বেরিয়ে পড়েন রিঙ্কু।

ট্রেনেই প্রচার। নামখানা-শিয়ালদহ লোকালে রিঙ্কু নস্কর। বৃহস্পতিবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

ট্রেনেই প্রচার। নামখানা-শিয়ালদহ লোকালে রিঙ্কু নস্কর। বৃহস্পতিবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

শুভাশিস ঘটক
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৭
Share: Save:

বাড়ি-বাড়ি প্রচারে গিয়ে তেমন সাড়া মিলছিল না। লোক কই?

খোঁজ নিতে গিয়ে মথুরাপুরের সিপিএম প্রার্থী শোনেন, তিনি যত ক্ষণে এলাকায় পৌঁছচ্ছেন, তার মধ্যে নামখানার বহু মানুষই বেরিয়ে পড়েন কাজে। তা হলে উপায়?

ভোটারদের সঙ্গে দেখা করতে বৃহস্পতিবার সকালে তাই সোজা নামখানা স্টেশনেই চলে গেলেন রিঙ্কু নস্কর। আগের রাতেই কাকদ্বীপে পার্টি অফিসে পৌঁছে গিয়েছিলেন। রাত ভোর হতেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। হরলিক্স আর দু’টো বিস্কুট খেয়েই বেরিয়ে পড়েন রিঙ্কু।

পরনে শাড়ি। পায়ে পাম্প শু। সকাল ৮টার মধ্যে রিঙ্কু পৌঁছে যান স্টেশনে। আপ শিয়ালদহ-নামখানা লোকাল ট্রেন ছিল ৮টা ১৩ মিনিটে। তাই দশ মিনিটের মধ্যেই যতটা সম্ভব প্রচার সেরে নেন স্টেশনে। নিজের পরিচয় দেন। নিত্যযাত্রীদের খোঁজখবর নেন। ভোট চান তাঁদের কাছে।

ইতিমধ্যেই চলে আসে ট্রেন। ঝপ করে একেবারে শেষ কামরায় উঠে পড়েন রিঙ্কু। সঙ্গে ছিলেন জনা কয়েক ছাত্র নেতাও। যাত্রীদের দিকে কখনও হাত জোড় করে, কখনও বা হাত মিলিয়ে এগিয়ে চলেন বাম প্রার্থী। বারবার তোলেন মেয়েদের সমস্যার কথা। সম্প্রতি রাজ্যে একের পর এক মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনার উল্লেখ করে দাবি করেন, তাঁকে জিতিয়ে দিল্লি পাঠালে এলাকার মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন। সুন্দরবন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দেন।

নামখানার পরে উকিলের বাজার স্টেশনে ট্রেন থামতেই কামরা থেকে নেমে পরের কামরার দিকে ছুট লাগান রিঙ্কু। এই ভাবে একে-একে কাকদ্বীপ, কাশীনগর, নিশ্চিন্তপুর, নিশ্চিন্তপুর বাজার, করঞ্জলি, কুলপি, উদয়রামপুর, লক্ষ্মীকান্তপুর, মাধবপুর স্টেশনে ট্রেন থামে আর কামরা বদলে বদলে এগোতে থাকে রিঙ্কুর প্রচার।

মোবাইল ছাড়া হাতে কিছু নেই। পিছনে ছাত্রনেতাদের হাতেই পার্টির লিফলেট থেকে শুরু করে খাওয়ার জলের বোতল। সেখান থেকেই মাঝে মধ্যে গলা ভিজিয়ে নেন রিঙ্কু। ফাঁকা আসন দেখলেই সেখানে বসে পাশের যাত্রীদের সঙ্গে খানিকক্ষণ গল্প জুড়ে দেন। এ যেন পাশের বাড়ির মেয়ে, যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করছেন, “বাড়ি কোথায়, কে কে আছেন?” কলেজ ছাত্রীদের প্রশ্ন করেন, “কোন কলেজ?

বাড়ি থেকে কতক্ষণের পথ?”

শুধু যাত্রীরাই নন। মনোহারি জিনিস বা ফল বিক্রি করতে ওঠা ফেরিওয়ালাদেরও বাদ দেননি রিঙ্কু। প্রবীণ কাউকে দেখলে, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছেন। প্রবীণ মানুষটি উল্টে মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চেয়েছেন, “বাড়ি কোথায়? ভাইবোন ক’টি?” বাড়ির কথা বলতে বলতে প্রচারসঙ্গীদের থেকে লিফলেট নিয়ে হাসিমুখে হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন রিঙ্কু। বলেছেন, “কাকু ভোটটা দেবেন।”

এ বারের ভোটে সিপিএমের নির্দেশ, যতটা সম্ভব বেশি ভোটারের কাছে পৌঁছতে হবে প্রার্থীদের। রিঙ্কুর কথায়, “কাকদ্বীপ, কুলপি, মন্দিরবাজার, রায়দিঘি ও সাগর বিধানসভা এলাকার বহু মানুষ আপ নামখানা-শিয়ালদহ লোকালে যাতায়াত করেন। বাড়ি গিয়ে যাঁদের পাইনি, এই ট্রেনেই তাঁদের অনেককে পেয়ে গেলাম।”

মিনিট পঁয়তাল্লিশ পরে মথুরাপুর স্টেশনে যখন ট্রেন থেকে নামছেন, রোদের আঁচ বেড়েছে। সঙ্গে ছাতা বা রোদচশমা কিছুই নেই। শাড়ির আঁচল দিয়েই তাই মাথা ঢেকে নেন রিঙ্কু। ছেড়ে যাওয়া ট্রেন দূরে মিলিয়ে যাওয়ার আগে অবধি হাত নেড়ে চলেন। তার পরে ফেরেন ঘেমে- নেওয়া ওঠা সঙ্গীদের দিকে।

“পরের ট্রেনটা যেন কখন?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kakdwip shubhashis Ghatak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE