Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কোন্নগরে গঙ্গায় স্নানে নেমে দুই ছাত্রের মৃত্যু, নিখোঁজ ২

গরমের ছুটি চলায় স্কুল পড়ুয়া পাঁচ বন্ধু প্রায়ই ফুটবল খেলে গঙ্গায় স্নান করে বাড়ি ফিরত। কিন্তু সোমবার হয়ে গেল অন্য রকম। কোন্নগরের বারোমন্দির ঘাটে গঙ্গায় ঝাঁপাঝাপির সময়ে দুই বন্ধুকে তলিয়ে যেতে দেখে দুই বন্ধু বাঁচাতে যায়। কেউই সাঁতার জানত না। জোয়ারের টানে তারা প্রত্যেকেই তলিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পরে স্থানীয় লোকজন জলে নেমে এক জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

কিষান রাউত।

কিষান রাউত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোন্নগর শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

গরমের ছুটি চলায় স্কুল পড়ুয়া পাঁচ বন্ধু প্রায়ই ফুটবল খেলে গঙ্গায় স্নান করে বাড়ি ফিরত। কিন্তু সোমবার হয়ে গেল অন্য রকম।

কোন্নগরের বারোমন্দির ঘাটে গঙ্গায় ঝাঁপাঝাপির সময়ে দুই বন্ধুকে তলিয়ে যেতে দেখে দুই বন্ধু বাঁচাতে যায়। কেউই সাঁতার জানত না। জোয়ারের টানে তারা প্রত্যেকেই তলিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পরে স্থানীয় লোকজন জলে নেমে এক জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। পরে ডুবুরিরা আর এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু রাত পর্যন্ত তল্লাশিতে বাকি দুই ছাত্রের খোঁজ মেলেনি।

মৃতদের নাম কিষাণ রাউত (১৮) এবং দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য (১৮)। নিখোঁজ সুইন্দ্রিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই কোন্নগরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ত। কিষাণ এবং অভিষেক থাকত কোন্নগরেই। দীপাঞ্জন উত্তরপাড়ার দোলতলা এবং সুইন্দ্রিক রিষড়ার পঞ্চাননতলার বাসিন্দা ছিল।

সকাল ১০টা নাগাদ যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন ওই ঘাটে মাত্র দু’এক জন স্নান করছিলেন। দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই চার জনের বন্ধু, শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মহিউল ইসলামের চিৎকারেই স্থানীয় লোকজন জড়ো হন। খবর যায় পুলিশ, পোর্ট ট্রাস্ট এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরে। শুরু হয় তল্লাশি।

বন্ধু-বিয়োগে কাতর মহিউলের কথায়, “আমরা কেউই সাঁতার জানতাম না। জোয়ারের টানটা যে এতটা হবে বুঝতে পারিনি। আগেও ফুটবল খেলে এই ঘাটে আমরা স্নান করেছি। কিন্তু এ দিন কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।” শ্রীরামপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নীলাঞ্জন মণ্ডল জানান, জোয়ারের টানে তলিয়ে যাওয়া বাকি দু’জনকে উদ্ধারের সব রকম চেষ্টা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে গরমের ছুটি চলায় ওই পাঁচ বন্ধু প্রায়ই কোন্নগরের কালীতলার একটি ক্লাবের মাঠে সকালে খেলতে আসত। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ এসে তারা ঘণ্টাদেড়েক ফুটবল খেলে। তার পরে স্নান করতে যায় বারোমন্দির ঘাটে। জলে কিষাণ এবং সুইন্দ্রিক ছিল এক সঙ্গে, দীপাঞ্জন এবং অভিষেক ছিল আর এক পাশে। কিছুটা তফাতে ছিল মহিউল। মহিউল জানিয়েছে, আধ ঘণ্টা জলে দাপাদাপির পরেই ওই দুর্ঘটনা। জোয়ারের টানে তার চার বন্ধু এত দ্রুত ভেসে যাচ্ছিল যে সে নাগাল পায়নি।

মহিউলের চিৎকারে রাস্তা থেকে লোকজন জড়ো হয়ে যান ঘাটে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা এবং এসডিপিও (শ্রীরামপুর) অর্ণব বিশ্বাস ঘটনাস্থলে আসেন। আসেন এগ্জিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটও।

তত ক্ষণে অবশ্য স্থানীয় লোকজনই নেমে পড়েন উদ্ধারকাজে। নামানো হয় পোর্ট ট্রাস্টের ডুবুরিদেরও। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘাট থেকে কিছুটা দূরে জল থেকে কিষাণকে উদ্ধার করে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সে মারা যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে উদ্ধারকাজ তদারকিতে ঘটনাস্থলে চলে আসেন হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত। বেলা পৌনে একটা নাগাদ বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দল আসে। তাদের বোট নামাতে দেরি হতে দেখে ছাত্রদের পরিবারের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বেলা আড়াইটে নাগাদ দীপাঞ্জনের দেহ উদ্ধার করেন ডুবুরিরা।

দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটের এক কোণে ওই ছাত্রদের ফুটবল এবং জার্সি পড়ে রয়েছে। থিকথিকে ভিড়। প্রশাসনের তরফে তল্লাশির জন্য জোরালো আলো লাগানো হচ্ছিল। একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ওই চার ছাত্রের পরিবারের লোকজন। তাঁরা কোনও কথা বলতে চাননি। তবে, পুলিশকে এক ছাত্রের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে দমদমে পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।

—ফাইল চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE